সম্প্রতি, ট্রেনে আগুন লাগিয়ে ধরা খেল পুলিশ, হাতেনাতে ধরলো সেনাবাহিনী– শীর্ষক থাম্বনেইলে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে।
ভিডিওটিতে দাবি করা হচ্ছে, বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ট্রেনটিতে পুলিশ আগুন দিয়েছে এবং সেনাবাহিনী পুলিশকে হাতেনাতে ধরেছে।

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
এই প্রতিবেদন প্রকাশ অবধি ভিডিওটি প্রায় ১ লক্ষ ৮০ হাজারবার দেখা হয়েছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ০৫ জানুয়ারি রাতে রাজধানীর গোপীবাগ এলাকায় বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশের জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ মিলেনি। এছাড়া এ বিষয়ে সেনাবাহিনী কর্তৃক পুলিশকে হাতেনাতে ধরার দাবিটিও বানোয়াট বরং বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রচারিত প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আইজিপির দেওয়া একটি বক্তব্য এবং আইজিপির দেওয়া বক্তব্য নিয়ে সাংবাদিক মোস্তফা ফিরোজের একটি সমালোচনামূলক বক্তব্যের ভিডিও যুক্ত করে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
ভিডিও যাচাই-১
আলোচিত ভিডিওটির শুরুতে কয়েকজনকে বক্তব্য দিতে দেখা যায় এবং ভিডিওটিতে বেসরকারি টেলিভিশন সময় টিভি’র লোগো দেখা যায়। সেই লোগো’র সূত্র ধরে অনুসন্ধানে সময় টিভি’র ফেসবুক পেজে গত ০৫ জানুয়ারি “ভেতরে বাচ্চা আছে বলা যুবকও ট্রেন থেকে বের হতে পারেননি” শীর্ষক ক্যাপশনে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত ভিডিওটির হুবহু মিল রয়েছে।

উক্ত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, গত ০৫ জানুয়ারি রাজধানীর গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্যের ভিডিও এটি।
অর্থাৎ, এখানে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে পুলিশের আগুন দেওয়া বা সেনাবাহিনী পুলিশকে হাতেনাতে ধরার দাবি সংক্রান্ত কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি।
ভিডিও যাচাই- ২
এই অংশে একজন সাংবাদিককে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় লাইভ করতে দেখা যায়। সেই লাইভে কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্য নেওয়া হয় এবং ভিডিওটিতে বেসরকারি টেলিভিশন দেশ টিভি’র লোগো দেখা যায়। সেই লোগো’র সূত্র ধরে অনুসন্ধানে দেশ টিভি’র ইউটিউব চ্যানেলে গত ০৫ জানুয়ারি “স্ত্রী-সন্তানের জন্য টান দিয়েও বের করা যায়নি” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি লাইভ ভিডিও পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত ভিডিওটির হুবহু মিল রয়েছে।

উক্ত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটিও বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় লাইভ দেশ টিভি ঘটনাস্থল থেকে লাইভ সম্প্রচার করে। সেই লাইভ করার সময় প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্যের ভিডিও এটি।
অর্থাৎ, এখানেও আলোচিত দাবিগুলো নিয়ে কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি।
ভিডিও যাচাই- ৩
এই অংশে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল আল-মামুনকে বক্তব্য দিতে দেখা যায় এবং চ্যানেল ২৪ এর লোগোও লক্ষ্য করা যায়। সেই লোগো’র সূত্র ধরে অনুসন্ধানে চ্যানেল ২৪ এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ০৫ জানুয়ারি “নির্বাচন ঘিরে বিএনপির সকল পরিকল্পনা আমরা জেনে গেছি” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত ভিডিওটির হুবহু মিল রয়েছে।

উক্ত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, ০৫ জানুয়ারি দুপুরে রাজধানীর কাকরাইলে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজে এক বিফ্রিংয়ে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল আল-মামুনের দেওয়া একটি বক্তব্যের ভিডিও এটি।
তবে, বক্তব্যে আইজিপি চৌধুরী আব্দুল আল-মামুন আলোচিত দাবিগুলো সম্পর্কিত কোনো তথ্য উল্লেখ করেননি বা এ-সংক্রান্ত কোনো কথাও বলেননি।
ভিডিও যাচাই- ৪
এই অংশে সাংবাদিক মোস্তফা ফিরোজকে বক্তব্য দিতে দেখা যায়। পরবর্তীতে অনুসন্ধানে Voice Bangla নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলে গত ০৬ জানুয়ারি “বিএনপির নাম ধরে আইজিপি ভয়*ঙ্কর ইঙ্গিত দিলেন” শীর্ষক ক্যাপশনে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত ভিডিওটির হুবহু মিল রয়েছে।

উক্ত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, ০৫ জানুয়ারি আইজিপি’র দেওয়া একটি বক্তব্যের সমালোচনা করা তিনি একটি বক্তব্য দেন। এছাড়া ভিডিওটিতে দৈনিক সমকাল এর ওয়েবসাইটে ০৫ জানুয়ারি “বিএনপির পরিকল্পনা জেনে গেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী: আইজিপি” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাঠ করতেও শোনা যায়।
পরবর্তীতে আলোচিত দাবিটি নিয়ে অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার টিম। অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কোনো গ্রহণযোগ্য সূত্রে এসংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
মূলত, গত ০৫ জানুয়ারি রাত ৯ টার দিকে রাজধানীর গোপীবাগ এলাকায় বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় ঘটনাস্থল থেকে লাইভ সম্প্রচার করে সময় টিভি এবং দেশ টিভি। এছাড়া, গত ০৫ জানুয়ারি আইজিপির দেওয়া একটি বক্তব্য প্রচার করে চ্যানেল ২৪ এবং আইজিপির দেওয়া বক্তব্য নিয়ে সমালোচনা করে একটি বক্তব্য দেন সাংবাদিক মোস্তফা ফিরোজ। পরবর্তীতে উক্ত ভিডিওগুলোথেকে কিছু অংশ কেটে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ভিডিওগুলো যুক্ত করে “ট্রেনে আগুন লাগিয়ে ধরা খেল পুলিশ, হাতেনাতে ধরলো সেনাবাহিনী” শীর্ষক দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, বেনোপাল ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশের কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, পুলিশ কর্তৃক ট্রেনে আগুন দেওয়া এবং সেনাবাহিনী কর্তৃক হাতেনাতে পুলিশকে আটক করা হয়েছে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যগুলো মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Somoy Tv- Facebook Post
- Desh Tv- YouTube Video
- Channel 24- YouTube Video
- Voice Bangla- YouTube Video
- Rumor Scanner’s Own Analysis