সম্প্রতি, ঢাকার কেরানীগঞ্জে হিজাব না পড়ায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের দ্বারা এক স্কুল ছাত্রী লাঞ্ছিত হয়েছেন এবং উক্ত ঘটনার কারণে ওই নারী শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন দাবিতে একটি মেয়ের মুমূর্ষু অবস্থার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, হিজাব না পড়ায় ঢাকার কেরানীগঞ্জে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের দ্বারা স্কুল ছাত্রী লাঞ্ছিত হওয়ার দাবিটি সঠিক নয়। এছাড়াও আত্মহত্যার দাবিটিও মিথ্যা এবং ছবির ঘটনাটিও কেরানীগঞ্জের নয়। প্রকৃতপক্ষে, প্রচারিত ছবির মেয়েটির নাম সাদিয়া আফরিন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে তাকে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে তোলা তার একটি ছবি ফেসবুকে আলোচিত দাবিতে প্রচার হয়।
অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রবাসী জীবন নামক ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রচারিত একটি পোস্টের মন্তব্য ঘরে Siam Ahmed নামের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে করা একটি মন্তব্য নজরে আসে রিউমর স্ক্যানার টিমের। মন্তব্যে Siam Ahmed নামক অ্যাকাউন্ট থেকে Chemist Rubel নামের একটি অ্যাকাউন্টকে মেনশন করে উক্ত ছবিটি তার ছাত্রীর কিনা জানতে চাওয়া হয়। এর প্রেক্ষিতে Chemist Rubel নামের ওই অ্যাকাউন্টের পক্ষ থেকে জানানো হয় ছবিটি তার ছাত্রীর।
Screenshot: Facebook
আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিটির বিষয়ে বিস্তারিত জানতে মো: রুবেল হোসেন তথা Chemist Rubel নামক অ্যাকাউন্টের মালিকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানান, ছবির মেয়েটির নাম সাদিয়া আফরিন। তার আত্মহত্যার বিষয়টি সম্পূর্ণ গুজব। তিনি বরিশাল সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ-এর ৯ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। উনি একই স্কুলের শিক্ষক। গত ১৮ সেপ্টেম্বর সাদিয়া স্কুল সংলগ্ন বটতলা এলাকায় অসুস্থ হয়ে জ্ঞান হারালে স্থানীয় লোকজন তাকে নিয়ে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। এর সাথে কেরানীগঞ্জ, হিজাব কিংবা জামায়েত-শিবিরের কোনো সম্পর্ক নেই।
পরবর্তীতে শিক্ষক রুবেল হোসেন এর সহায়তায় আলোচিত ছবির শিক্ষার্থী সাদিয়া আফরিনের সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। সাদিয়া রিউমর স্ক্যানারকে জানান, তার ছবি ব্যবহার করে আত্মহত্যার দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলো তিনি দেখেছেন। কয়েকটি পেজে তিনি পোস্টগুলো সরিয়ে নেওয়ার জন্যে অনুরোধও করেছেন। মূলত, শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি সেদিন জ্ঞান হারিয়ে রাস্তায় পড়ে যান। এসময় তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া এক ব্যক্তি তার ছবি তুলে তার পরিচিত ব্যক্তিদের জানানোর জন্যে ফেসবুকে পোস্ট করেন। সেখান থেকেই ছবিটি সংগ্রহ করে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলোতে ব্যবহার করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে গণমাধ্যমে সাম্প্রতিক সময়ে কেরানীগঞ্জে আলোচিত দাবি সম্পর্কিত কোনো ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, বরিশালে শারীরিক অসুস্থতার কারণে জ্ঞান হারানো এক স্কুল শিক্ষার্থীর ছবি ঢাকার কেরানীগঞ্জে জামায়াত-শিবিররের নেতা-কর্মীদের দ্বারা হেনস্তার শিকার হওয়ায় আত্মহত্যা করা তরুণীর ছবি দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Statement of Rubel Hossein
- Statement of Sadia Afrin
- Rumor Scanner’s Own Analysis