সম্প্রতি, “প্রধানমন্ত্রীর নিষেধাজ্ঞা চিঠি প্রকাশ করলো ডে বাইডেনে,নির্বাচন হবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে” শীর্ষক শিরোনাম এবং “প্রধানমন্ত্রী -সহ ৩০ মন্ত্রীর ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিলো যুক্তরাষ্ট্র” শীর্ষক তথ্য সম্বলিত থাম্বনেইলে ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম ইউটিউবে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওগুলো দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়,প্রধানমন্ত্রী -সহ ৩০ মন্ত্রীর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার দাবিটি সঠিক নয় বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার শিরোনাম এবং থাম্বনেইল ব্যবহার করে ভিত্তিহীনভাবে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩০ মন্ত্রীর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। উক্ত ভিডিওটিতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর নেত্রী রুমিন ফারহানার একটি ভিডিও দেখানো হয়।
উক্ত ভিডিওটির অনুসন্ধানে কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে Rumeen’s Voice নামক ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৩ ডিসেম্বর “মার্কিন রাষ্ট্রদূত ভারতে গেলেন কেন?।Rumee’s Voice। রুমিন ফারহানা। Rumeen Farhana” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। এই ভিডিওটির একটি অংশের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

ভিডিওটিতে রুমিন ফারহানা বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের ভারত সফর এবং আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নিজস্ব অভিমত ব্যাক্ত করেন।
অর্থাৎ আলোচিত ভিডিওটিতে প্রধানমন্ত্রী -সহ ৩০ মন্ত্রীর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া বিষয়ক কোনো তথ্যের উপস্থিতি ছিলো না। ভিডিওটিতে অপ্রাসঙ্গিকভাবে রুমিন ফারহানার বক্তব্য যুক্ত করা হয়েছে।
পরবর্তীতে, প্রধানমন্ত্রী -সহ ৩০ মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে কি না সে বিষয়ে অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার টিম। অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ গণমাধ্যম ও বিশ্বস্ত সামাজিক মাধ্যমে এসংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
তবে, দৈনিক যুগান্তরে গত ২৪ সেপ্টেম্বর “যে কারণে ভিসা নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্তদের নাম প্রকাশ করে না যুক্তরাষ্ট্র” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গণতন্ত্র ও নির্বাচনি প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর আনুষ্ঠানিক ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ওয়াশিংটন। শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। তবে কোনো ব্যক্তির নাম প্রকাশ করেনি যুক্তরাষ্ট্র।
কেন ভিসা নিষেধাজ্ঞা ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করা হয় না- এ বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু বলেন, ভিসানীতির আওতায় ভিসা নিষেধাজ্ঞা যাদের দেওয়া হবে, তাদের নাম প্রকাশ করা হয় না। কারণ কাউকে ভিসা না দেওয়াসহ যে কোনো ভিসা রেকর্ড মার্কিন আইন অনুযায়ী গোপনীয় তথ্য। তিনি আরও বলেন, সাক্ষ্যপ্রমাণ ভালোভাবে পর্যালোচনা করার পর আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
অর্থাৎ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতিতে নিষেধাজ্ঞা প্রাপ্তদের নাম প্রকাশ করে না।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রীসহ ৩০ মন্ত্রীর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের ওয়েবসাইটে এমন কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মূলত, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার গত ২২ সেপ্টেম্বর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। যুক্তরাষ্ট্রের এই ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে তাদেরকে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে বলে প্রচার হয়ে আসছে। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি “প্রধানমন্ত্রী -সহ ৩০ মন্ত্রীর ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিলো যুক্তরাষ্ট্র” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। ভিডিওটি নিয়ে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করেনা। অধিক ভিউ পাবার আশায় ভিন্ন ঘটনার ভিডিও যুক্ত করে তাতে চটকদার থাম্বনেইল ও শিরোনাম ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া, গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে দাবিগুলোর সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, পূর্বেও বিভিন্ন ব্যক্তির ওপর মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে মিথ্যা তথ্য প্রচারের প্রেক্ষিতে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, প্রধানমন্ত্রীসহ ৩০ মন্ত্রীর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার দাবিটি মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Rumeen’s Voice : মার্কিন রাষ্ট্রদূত ভারতে গেলেন কেন?।Rumee’s Voice। রুমিন ফারহানা। Rumeen Farhana
- Jugantor- যে কারণে ভিসা নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্তদের নাম প্রকাশ করে না যুক্তরাষ্ট্র
- US Embassy – Website