সুবর্ণ আইজ্যাক বারীর আলোচনা কিংবা বিতর্কে যে কৃতিত্বটি সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয় তা হলো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার থেকে মেধার স্বীকৃতি স্বরূপ ২০১৬ সালের নভেম্বরে মাত্র ৪ বছর বয়সে সুবর্ণের চিঠি পাওয়ার ঘটনাটি। উক্ত বিষয়টি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে গণমাধ্যম প্রচারিত হয়েছে। পত্র-পত্রিকা, টেলিভিশনে বিভিন্ন সময়ে এই ঘটনাটি ফিচার হয়েছে। বিস্ময় বালক সুবর্ণ আইজ্যাক বারীর কৃতি উল্লেখ করতে গিয়ে এই বিষয়টি এখনও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে বিভিন্নভাবে প্রচারিত হয়।
সুবর্ণ আইজাক বারীর বাবা রাশিদুল বারীর দাবি অনুযায়ী বারাক ওবামার কাছ থেকে ২০১৬ সালের নভেম্বরে সুবর্নের চিঠি পাওয়ার ঘটনাটি সেসময় তিনি নিজের ইউটিউব,ফেসবুক এবং ব্লগ-পোর্টালে লিখেছিলেন এবং তারপর কয়েকটি পোর্টালে বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর মূলধারার গণমাধ্যমেও বিষয়টি প্রকাশিত হয়। উল্লেখ্য, সুবর্ণের বাবা রাশিদুল বারী একজন কলাম লেখক এবং তিনি বিভিন্ন সময়ে নিজেও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে লিখেছেন। বিশেষ করে টাইমস অফ ইসরায়েল, জেরুজালেম পোস্ট, হাফপোস্ট ও টাইমস অব ইন্ডিয়ায় তার সবচেয়ে বেশি লেখা প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশের গণমাধ্যমেও তিনি বিভিন্ন সময় লিখেছেন। যার ফলে এই বিষয়টি সেসময় ভাইরাল করা কিংবা মিডিয়া কাভারজ পাওয়া তার জন্য তুলনামূলক সহজ ছিলো।
উক্ত ঘটনা নিয়ে সেসময়ে কালেরকন্ঠ, বাংলাদেশ প্রতিদিন এবং এটিএন বাংলায় প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন
পাশাপশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও বিষয়টি ব্যাপকভাবে ছড়িয়েছিলো সেসময়।
অর্থাৎ মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সুবর্ণের প্রতিভা দেখে তাকে চিঠি পাঠিয়েছে এই বিষয়টি ২০১৬ সাল থেকে সুবর্ণের বাবার নিজস্ব প্লাটফর্ম, সংবাদমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হয়ে আসছে।
সুবর্ণ আইজ্যাক বারী সত্যিই প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা থেকে চিঠি পেয়েছে কিনা তা ব্যাখ্যা করার পূর্বে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার একটি বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বলে নেওয়া যাক।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ক্ষমতা গ্রহণের পর তিনি নাগরিকদের কাছ থেকে চিঠি গ্রহণ এবং নির্বাচিত চিঠি,ইমেইলের উত্তর দেওয়ার একটা উদ্যোগ নেন।
দায়িত্বরত কর্মীদের তিনি প্রতি রাতে তার কাছে পড়ার জন্য নির্বাচিত ১০টি চিঠি পাঠাতে নির্দেশ দেন। হোয়াইট হাউজ এর উদ্দেশ্যে প্রতিদিন আসা হাজার হাজার ই-মেইল এবং হাতে লেখা নোটগুলো থেকে নেয়া হতো সেই চিঠিগুলো। সারা দেশের আমেরিকানদের গল্প এবং তাদের উদ্বেগ সম্পর্কে জানতে তিনি এই প্রথা চালু করেছিলেন। শুধু তাই নয় কোনো কোনো চিঠির উত্তর তিনি নিজে দিতেন এবং কখনও কখনও চিঠি প্রেরককে পরিদর্শন করে তাদের বার্তাগুলো কিভাবে তাকে এবং তার নীতিগুলিকে অনুপ্রাণিত করেছে সে সম্পর্কে কথা বলতেন।
অর্থাৎ নিয়মিত নাগরিকদের চিঠি গ্রহণ করা এবং নির্বাচিত কিছু চিঠির উত্তর দেয়া ছিলো প্রেসিডেন্ট ওবামার নৈমিত্তিক কাজ। হোয়াইট হাউজের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে বিষয়টির প্রমাণ পাওয়া যায়। হোয়াইট হাউজের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে ওবামার আর্কাইভে Letters নামে এটার জন্য আলাদা একটি সেকশনই রয়েছে। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা যেসকল চিঠির উত্তর দিতেন তার তালিকা সেখানে সংরক্ষিত রয়েছে। পাশাপশি যেসকল ই-মেইলের তিনি উত্তর দিতেন সেগুলোও সেখানে সংরক্ষিত রয়েছে। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা উত্তর দিয়েছেন এমন চিঠি গুলো দেখুন এখানে।
অর্থাৎ এটা স্পষ্ট যে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার চিঠি যেকোনো ভাগ্যবান প্রেরকই পেতে পারে।
এবার আসা যাক রাশিদুল বারী ওবামা থেকে প্রাপ্ত চিঠি প্রসঙ্গে
রাশিদুল বারী তার নিজস্ব ফেসবুক আইডি Rashidul Bari তে ২০১৬ সালের ৯ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা থেকে সুবর্ণের পাওয়া চিঠিটি সংযুক্ত করে একটি পোস্ট করেন।
উক্ত পোস্টটিতে তিনি চিঠির পাশাপাশি বারাক ওবামার টেলিফোন করা অবস্থার একটি ছবি এবং সুবর্ণ বারীর টেলিফোন ধরে কথা বলার ভঙ্গির মোট দুটি ছবি collage করে যুক্ত করেছেন। বারাক ওবামা সুবর্ণ আইজ্যাক বারীকে টেলিফোন করেছেন এটি তার পোস্টের ক্যাপশনে উল্লেখ না করলেও ছবি দিয়ে পরোক্ষভাবে এটাই যে বুঝিয়েছেন তা সহজেই অনুমান করা যায়। সেখানে সংযুক্ত বারাক ওবামার ছবিটি ২০১২ সালে তোলা, যা সুবর্ণের জন্মেরও আগের একটি ছবি।
সুবর্ণকে বারাক ওবামার পাঠানো কথিত সেই চিঠিতে কি লেখা ছিলো ?
২ নভেম্বর ২০১৬ তারিখযুক্ত সেই চিঠিতে লেখা ছিলো-
Dear Soborno
I hope you take pride in all your hard work and accomplishments.
America needs students like you who are trying hard in school, dreaming big dreams, and improving our communities. Our country faces many challenges, but we will overcome them if we join together in common purpose. I encourage you to continue to put your best effort into everything you do, and I want you to know I expect great things from you.
Young people like you are tomorrow’s leaders. You inspire me and give me tremendous hope for the future. Michelle and I wish you all the best.
(Signature of Barak Obama)
চিঠিটির বাংলা করলে দাঁড়ায় –
প্রিয় সুবর্ণ,
আশা করছি তুমি তোমার কঠোর পরিশ্রম এবং অর্জনের জন্য গর্ব অনুভব করো। তোমার মতো শিক্ষার্থী আমেরিকায় আরো দরকার, যারা স্কুলে কঠোর পরিশ্রম করার চেষ্টা করে, বড় স্বপ্ন দেখে এবং আমাদের সমাজের পরিবর্তন ঘটায়। আমাদের দেশ অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়। কিন্তু আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ হই তাহলে এসব মোকাবিলা করা কোনো ব্যাপারই নয়। তুমি তোমার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাও, আমি তোমার সঙ্গে আছি। তোমার কাছে আমি অনেক বড় কিছু প্রত্যাশা করি।
(বারাক ওবামার স্বাক্ষর)
অর্থাৎ চিঠিটি একজন প্রেসিডেন্ট কর্তৃক প্রেরককে অনুপ্রানিত এবং প্রশংসা করে লেখা। স্বভাবতই একজন প্রেসিডেন্ট যখন কাউকে উত্তর করবেন তখন এভাবেই লিখবেন। আর এই একই চিঠি আরো অনেকেই পেয়েছেন তার প্রমাণ আমরা পেয়েছি যা পর্যায়ক্রমে আলোচনা করা হবে।
এদিকে বারাক ওবামার এই প্রশংসা করে লেখা চিঠিকে নিয়েই আরো বেশ কিছু তথ্য ছড়িয়েছে। তারমধ্যে একটি হলো ড. মোহম্মদ ইউনুসের পর ২য় বাংলাদেশী হিসেবে হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ পাওয়া। এইরকম দাবির কয়েকটি পোস্ট দেখুন।
মূলত চিঠিটি ভালো করে দেখলেই নিশ্চিত হওয়া যায় সেখানে আমন্ত্রণ সংক্রান্ত কোনো কিছু উল্লেখ নেই, চিঠিটি কেবল প্রশংসা করে লেখা।
তাই এই চিঠির প্রেক্ষিতে সুবর্ণ আইজ্যাকের হোয়াইট হাউজে আমন্ত্রণ পাওয়ার দাবিটি মিথ্যা।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি রাশিদুল বারীর ফেসবুক আইডিতে বারাক ওবামার চিঠি পাওয়ার বিষয়ে আরো একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়।
সেই পোস্টে তিনি উল্লেখ করেছেন-
এটা ছিল নভেম্বর ১০, ২০১৬। আমি একটি এপার্টমেন্ট বিল্ডিং এ দারোয়ান হিসেবে কাজ করছিলাম। হঠাৎ স্ত্রীর কাছ থেকে একটি ফোন কল পেলাম, আমরা হোয়াইট হাউস থেকে একটি খাম পেয়েছি। সুবর্ণের কাছে প্রেসিডেন্ট ওবামা চিঠি লিখেছেন। নিজের কানকেই বিশ্বাস হচ্ছিল না! যুক্তরাষ্ট্রের একজন বর্তমান প্রেসিডেন্ট কীভাবে একজন দারোয়ানের ছেলের কথা জানবেন? আমি আমার সুপারভাইজারকে বললাম যে আমাকে তাৎক্ষণিকভাবে বাড়ি যেতে হবে। তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন কেন? আমি তাকে কারণ বলিনি হয়ত সে ভাববে যে আমি মিথ্যা বলছি। বাড়ি ফেরার পথে ভাবছিলাম প্রেসিডেন্ট ওবামা আমাদের ঠিকানা জানলেন কী করে? সকাল হতেই স্থানীয় টিভি (ব্রঙ্কস নেট এবং নিউজ ১২) খবরটি ছড়িয়ে দেয়। একটি ৪ বছরের অ-শ্বেতাঙ্গ দারোয়ানের বাচ্চা রাতারাতি আমেরিকার সবচেয়ে বিখ্যাত শিশু হয়ে উঠল।
শীঘ্রই সুবর্ণ প্রেসিডেন্ট ওবামার সাথে দেখা করবেন ২০৪৮ নিয়ে আলোচনা করতে। আমি প্রেসিডেন্ট ওবামাকে জিজ্ঞাসা করব যে তিনি আমাদের ঠিকানা কোথায় পেয়েছিলেন এবং তিনি কীভাবে চার বছরের শিশু সুবর্ণের কথা জানতে পেরেছিলেন।
এই পোস্টের প্রথম অংশ নিয়ে আলোচনায় যাওয়ার আগে পোস্টটির সর্বশেষ অংশটুকু খেয়াল করুন। যেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন,
“শীঘ্রই সুবর্ণ প্রেসিডেন্ট ওবামার সাথে দেখা করবেন ২০৪৮ নিয়ে আলোচনা করতে। আমি প্রেসিডেন্ট ওবামাকে জিজ্ঞাসা করব যে তিনি আমাদের ঠিকানা কোথায় পেয়েছিলেন এবং তিনি কীভাবে চার বছরের শিশু সুবর্ণের কথা জানতে পেরেছিলেন।”
অর্থাৎ চলতি ২০২২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি একটি পোস্টে তিনি বলছেন শীঘ্রই সুবর্ণ প্রেসিডেন্ট ওবামার সাথে দেখা করবেন! এদিকে ওবামা যুগ শেষ হওয়ার পর ট্রাম্প যুগেরও অবসান ঘটেছে। তাই বলা যায় সুবর্ণের সাথে প্রেসিডেন্ট ওবামার সাক্ষাত হয়নি। মূলত এটা হওয়ারও কথা ছিলো না। উপরেই আমরা নিশ্চিত করেছি যে চিঠিটি সাক্ষাতের জন্য কোনো আমন্ত্রণ পত্র ছিলো না, কেবল প্রশংসা করে লেখা ছিলো।
এবার আসা যাক পোস্টের প্রথম অংশে, যেখানে তিনি বলেছেন,
“আমি একটি এপার্টমেন্ট বিল্ডিং এ দারোয়ান হিসেবে কাজ করছিলাম। হঠাৎ স্ত্রীর কাছ থেকে একটি ফোন কল পেলাম, আমরা হোয়াইট হাউস থেকে একটি খাম পেয়েছি। সুবর্ণের কাছে প্রেসিডেন্ট ওবামা চিঠি লিখেছেন।”
অর্থাৎ তিনি এখানে বললেন ‘তিনি দারোয়ানের কাজ করছিলেন এমন সময় স্ত্রীর ফোন পেয়ে চিঠির বিষয়ে জানতে পারেন’।
এদিকে Huffpost নামের একটি সংবাদ পোর্টালের ব্লগে রশিদুল বারীর ‘President Obama and Soborno Isaac’ শিরোনামে ২০১৭ সালের ৩০ জানুয়ারি প্রকাশিত একটি লেখা খুঁজে পাওয়া যায়।
যেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন-
“On November 9, 2016, my elder son—Refath Albert Bari, who is a thirteen-year-old math genius—and I were sad because our candidate had lost the election a day earlier. To forget and move on, I took my sons to Lehman College so Isaac could solve some math problems. Everything changed a few hours later when Albert knocked my classroom door and informed us that Isaac had received a letter of recognition from President Obama. I was so happy that I forgot what had happened the night before. I looked at Isaac and saw him jumping up and down. When he opened the envelope and read it a few times, he appeared to be having the happiest moment of his life. I videotaped the whole event, which went viral after I posted it on YouTube under the title “President Obama & Soborno Isaac.”
যার বাংলা-
৯ নভেম্বর, ২০১৬, আমার বড় ছেলে রিফাত অ্যালবার্ট বারি, যে একজন তেরো বছর বয়সী গণিত প্রতিভা এবং আমি দুঃখিত ছিলাম কারণ আমাদের প্রার্থী একদিন আগেই নির্বাচনে হেরে গিয়েছিল। হার ভুলে স্বাভাবিক হওয়ার জন্য আমি আমার ছেলেদের লেম্যান কলেজে নিয়ে যাই, যাতে আইজ্যাক কিছু গণিত সমস্যা সমাধান করতে পারে। কয়েক ঘন্টা পরেই সবকিছু বদলে গেল, যখন অ্যালবার্ট (তার বড় ছেলে) আমার শ্রেণীকক্ষের দরজায় ধাক্কা দেয় এবং আমাদের জানায় যে সুবর্ণ আইজ্যাক প্রেসিডেন্ট ওবামার কাছ থেকে একটি স্বীকৃতির চিঠি পেয়েছেন। আমি এত খুশি হয়েছিলাম যে আগের রাতে কী হয়েছিল তা ভুলে গিয়েছিলাম। আমি আইজ্যাকের দিকে তাকালাম এবং তাকে লাফিয়ে লাফিয়ে উঠতে দেখলাম। যখন সে খামটা খুলে কয়েকবার পড়ল, তখন মনে হল সে তার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের মুহূর্ত কাটাচ্ছে। আমি পুরো ইভেন্টটির ভিডিও টেপ করেছি, যা আমি ইউটিউবে পোস্ট করার পরে ভাইরাল হয়ে যায়।
অর্থাৎ গত ৬ তারিখের পোস্টে তিনি দারোয়ানের কাজ করছিলেন এমন সময় স্ত্রীর ফোন পেয়ে চিঠির বিষয়ে জানতে পারেন উল্লেখ করলেও ২০১৭ সালে তার অন্য একটি লেখায় পাওয়া গেলো তিনি সন্তানদের নিয়ে লেম্যান কলেজে গিয়েছিলেন সুবর্ণকে গণিত করানোর জন্য, পরে বড় ছেলে রিফাত বারী থেকে তিনি বারাক ওবামার চিঠি সম্পর্কে জানতে পারেন। সুতরাং দুই লেখায় তার দুইটি ভিন্নরকম বর্ণনা পাওয়া যায়, যা স্পষ্টত অসংগতি।
এদিকে Huffpost এ তার উল্লেখ করা, পুরো ইভেন্টটির ভিডিও টেপ করে আপলোড করা ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়। Bari Science Lab এর অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৬ সালের ১৩ নভেম্বরে “Soborno Isaac Received Recognition from President Obama” শিরোনামে প্রকাশিত ভিডিওটির ১৫ মিনিট এর পর থেকে দেখলে ইভেন্টের টেপটি খুঁজে পাওয়া যায়।
ইভেন্ট ভিডিওটিতে বাসায় একজন লোকের চিঠি পৌছে দেওয়া থেকে শুরু করে, সেটা মিসেস বারী গ্রহণ করার পর বাসায় থাকা বড় ছেলে রিফাত বারীকে ডেকে চিঠির বিষয়ে বলা, তারপর তার বাবা এবং সুবর্ণ ম্যাথ চর্চা করতে লেম্যান কলেজে গিয়েছে সেখানে যাওয়া এবং সুবর্ণকে চিঠিটি দেওয়ার বিষয়টি ভিডিও চিত্রে দেখানো হয়। যেহেতু তিনি ইভেন্ট ভিডিও টেপ উল্লেখ করেছেন সেহেতু ভিডিওগ্রাফি চিঠি পাওয়ার পর নতুনভাবে ধারণ করা বোঝায় না বরং মূল ঘটনাটি তিনি রেকর্ড করেছেন তা বোঝায়। তার এই ভিডিও দেখে এখান থেকে পরিষ্কার হওয়া যায় যে চিঠি হাতে পাওয়ার আগে থেকেই তারা চিঠির বিষয়ে জানতেন এবং যার জন্যই ইভেন্টের ভিডিও ধারণ সম্পন্ন করতে পেরেছিলেন। যেখানে রাশিদুল বারী গত ৬ ফেব্রুয়ারির পোস্টে উল্লেখ করেছেন যে তিনি প্রেসিডেন্টকে জিজ্ঞেস করতে চান তাদের ঠিকানা তিনি কিভাবে পেয়েছেন, সেখানে ধারণা করা যায় স্বভাবতই এই চিঠি পাওয়া নিয়ে পূর্বে অবগত তিনি ছিলেন না। একজন প্রেসিডেন্ট কখন চিঠির উত্তর দিবেন, সেই চিঠি কখন আসবে সেটা সাধারণভাবেই জানা সম্ভব নয়। উপরন্তু তাদের দেখানো চিঠিতে উল্লিখিত তারিখ ২ নভেম্বর, কিন্তু তারা গ্রহণ করার দাবি করেছে ৯ নভেম্বর। তাই এটিও একটি বড় অসঙ্গতি।
Also Read: সংগীত শিল্পী সুস্মিতা আনিস প্রকাশিত জাতীয় সংগীতের অর্কেস্ট্রা ভার্সনটি কি প্রথম অর্কেস্ট্রা ভার্সন?
অনেকে হয়তো বলতে পারেন যে, চিঠিটা পাওয়ার পরে সেটা মঞ্চয়ন করেছে প্রকাশ করার জন্য, সেটাও যৌক্তিক হবে না কারণ জনাব রাশিদুল বারী উল্লেখ করেছেন তিনি ঐ ইভেন্টের ভিডিও টেপ ধারণ করেছেন।
এবার পুনরায় ফেরা যাক হোয়াইট হাউজের ওয়েবসাইটে ওবামার লেটার আর্কাইভে।
পূর্বেই বলা হয়েছে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা যেসকল চিঠির সরাসরি উত্তর দিয়েছেন সেসকল চিঠি গুলো তার ওয়েবসাইটে সংরক্ষিত রয়েছে। এবার আমরা সেখানে সুবর্ণের চিঠি খোঁজার চেষ্টা করি। সেখানে সাল ভিত্তিক খোঁজ করার সুবিধা দেয়া রয়েছে, আমরা সেখানে উত্তর দেওয়া চিঠির তালিকায় ২০১৬ সাল নির্ধারণ করে ২ নভেম্বর সুবর্ণকে পাঠানো চিঠির সত্যতা খুঁজে বের করার চেষ্টা করি। তবে সুবর্ণ আইজ্যাক বারী নামের কাউকে চিঠি পাঠানোর রেকর্ড সেখানে খুঁজে পাওয়া যায়নি। আপনারাও বিষয়টি খুঁজে দেখতে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করে দেখতে পারেন
সুবর্ণ আইজ্যাক যেহেতু শিশু, তাই সেখানে Kids Letter সেকশনে খুঁজেও আশানুরূপ কিছু পাওয়া যায় নি।
এরপর বিষয়টি নিয়ে অধিকতর অনুসন্ধান করতে গিয়ে রিউমর স্ক্যানার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা কর্তৃক দুইটি প্রতিষ্ঠানকে পাঠানো দুইটি চিঠি খুঁজে পায়। সেই দুইটি চিঠির সাথে প্রেসিডেন্ট ওবামা কর্তৃক সুবর্ণকে পাঠানো কথিত চিঠিটির হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়। দেখুন এখানে এবং এখানে।
Henrico County public Schools নামের একটি বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা তার শিক্ষার্থীদের গ্রেডিং করতে গিয়ে ভালো ফলাফল দেখে খুশি হয়েছিলেন, তাই তিনি প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে চিঠি লিখে তার শিক্ষার্থীদের আরো উৎসাহিত করতে একটি চিঠি পাঠাতে অনুরোধ করেছিলেন।
যার প্রেক্ষিতে ২০১৬ সালের ৯ মে প্রেসিডেন্ট ওবামা তাদের উদ্দেশ্য লেখেন-
Dear Students,
I hope you take pride in all your hard work and accomplishments.
America needs students like you who are trying hard in school, dreaming big dreams, and improving our communities. Our country faces many challenges, but we will overcome them if we join together in common purpose. I encourage you to continue to put your best effort into everything you do, and I want you to know I expect great things from you.
Young people like you are tomorrow’s leaders. You inspire me and give me tremendous hope for the future. Michelle and I wish you all the best.
অনুরুপ একই চিঠিটি সঙ্গীতশিল্পীদের উদ্বুদ্ধ করতে স্প্রিংফিল্ডের High School of Science and TechnologyTechnology এর সাই-টেক হাই ব্যান্ড কে পাঠিয়েছিলেন ওবামা।
এদিকে সম্প্রতি “৯ বছরের শিশুর বিরুদ্ধে যমুনা টেলিভিশনের মিথ্যা প্রতিবেদনের প্রতিবাদ!” শিরোনামে রাশিদুল বারী দম্পতির করা একটি লাইভ ভিডিওতে তারা দাবি করেন, ‘এরকম চিঠি প্রেসিডেন্ট ওবামা আর কাউকে দিয়েছে এটা কেউ দেখাতে পারে নি।’ তারা আরো উল্লেখ করে বলেন, ‘আর যদি কেউ দেখাতে পারেন, দেখান‘।
আমরা উপরে ইতিমধ্যেই প্রমাণ করেছি যে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এরকম চিঠি আরো অনেককেই দিয়েছেন।
অর্থাৎ এটি নিশ্চিত হওয়া যায় যে বারাক ওবামা এক চিঠি কয়েকজনকে কিংবা আরো অনেককেই পাঠিয়েছেন। পাশাপাশি আরো নিশ্চিত হওয়া যায় উক্ত চিঠিগুলো স্রেফ উদ্বুদ্ধ করতে পাঠিয়েছেন বারাক ওবামা, এই চিঠি দিয়ে কোনো কিছুর স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি।
মূলত, উদ্বুদ্ধ করতে ওবামার পাঠানো কথিত একটি চিঠিকে নিয়ে সুবর্ণ আইজাক বারীকে অতিরঞ্জিতভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। এমনকি সুবর্ণ বারীর নামে প্রকাশিত প্রথম বই The Love এর কভারেও লেখা হয়েছে –
Soborno Isaac Bari, The child who received recognition from President Barak Obama in 2016.
উপরন্তু সুবর্ণ আইজ্যাক বারী যে বারাক ওবামার চিঠি পেয়েছেন তারও কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।
এছাড়াও চিঠিটি এডিটেড কি না তা নিশ্চিত হওয়া না গেলেও সেই চিঠির খামের সাথে হোয়াইট হাউসে প্রদর্শিত ওবামার পাঠানো চিঠির খামের মিল পাওয়া যায় নি। এছাড়া তার বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন গল্পে প্রচারিত তথ্যের অসংগতি অনুযায়ী চিঠিটি এডিটেড হিসেবেই সন্দিহান হচ্ছে।
উপসংহার
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে সুবর্ণকে পাঠানো বারাক ওবামার চিঠির কোনো সত্যতা পাওয়া যায় নি এবং এই চিঠিটি যদি সে পেয়েও থাকে তবে সেটা হোয়াইট হাউজ থেকে স্বীকৃতি বোঝায় না। তাই এই চিঠি দেখিয়ে বারাক ওবামা থেকে স্বীকৃতি পাওয়া, ২য় বাংলাদেশী হিসেবে হোয়াইট হাউজে আমন্ত্রণ পাওয়া শীর্ষক দাবিতে প্রচারিত তথ্যগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।