জয়পুরহাটে ফুটবল খেলায় ভাইরাল সিদ্দিককে প্রধান অতিথি করা হয়নি

সম্প্রতি “চুরি করে ভাইরাল হওয়া লোকটি এখন একজন সম্মানিত ব্যক্তি। যাকে একটি ফুটবল টুনামেন্টে প্রধান অতিথি হিসেবে রাখা হয়েছে।” শীর্ষক শিরোনামে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, চুরি করে ভাইরাল হওয়া সিদ্দিককে ফুটবল টুর্নামেন্টে প্রধান অতিথি হিসেবে রাখার দাবিটি সঠিক নয় বরং ঐ ফুটবল খেলায় প্রধান অতিথি ছিলেন জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলা চেয়ারম্যান মুনিরুল শহিদ মুন্না।

তথ্যটির সত্যতা যাচাইয়ে কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে অনলাইন পোর্টাল dhakamail.com এ ১৪ অক্টোবর “সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোকে মাদকমুক্ত করতে চাই: ব্যারিস্টার সুমন” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

এই প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম মাঠে পাঁচবিবির রাধানগর খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতির সঙ্গে ব্যারিস্টার সুমন ফুটবল একাডেমির খেলা হয়। 

এই খেলার উদ্বোধনীতে প্রধান অতিথি ছিলেন পাঁচবিবি উপজেলা চেয়ারম্যান মুনিরুল শহিদ মুন্না। খেলার উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরমান হোসেন। এ সময় পাঁচবিবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পলাশ চন্দ্র দেব, মেয়র হাবিবুর রহমান হাবিব প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

প্রতিবেদনটি থেকে অতিথিদের মধ্যে ভাইরাল হওয়া সিদ্দিকের নাম খুঁজে পাওয়া যায়নি।

পরবর্তীতে এই ফুটবল টুর্নামেন্টে ভাইরাল হওয়া সিদ্দিকের উপস্থিতি নিয়ে টুর্নামেন্টের আয়োজক কমিটির সদস্য মনজুরুল ইসলাম রিউমর স্ক্যানারকে বলেন, সিদ্দিককে আনা হয়েছিল বিনোদনের উদ্দেশ্যে। খেলার প্রথম অর্ধ শেষে তাকে দর্শকদের আনন্দ দেওয়ার জন্য তাকে পুরো মাঠ ঘুরিয়ে আনতে বলা হয়েছিল। তবে তার সঙ্গে সেলফি তোলা নিয়ে দর্শকদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে রোভার স্কাউটসের সদস্যরা শৃঙ্খলা রক্ষায় তাকে মাঠ থেকে নিয়ে আসে। 

একই বিষয়ে জানতে ঐদিন মাঠে দায়িত্ব পালন করা রোভার স্কাউটস লিডার মেসবাহুল ইসলামের সঙ্গে রিউমর স্ক্যানার থেকে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ভাইরাল হওয়া সিদ্দিককে ঘিরে মাঠে যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা না হয় সেজন্যই আমরা শুধু মাঠে ছিলাম৷ কিন্তু এটাকেই ফেসবুকে নেতিবাচকভাবে তুলে ধরা হচ্ছে যে, আমরা তাকে গার্ড অব অনার দিচ্ছি। 

একইদিন মাঠে দায়িত্ব পালন করা আরেক রোভার স্কাউটস সদস্য নাহিদ হাসান ভাইরাল হওয়া সিদ্দিকের উপস্থিতি নিয়ে বলেন, তাকে মাঠে অতিথিদের সাথে দেখা যায়নি। তার জায়গা ছিল মঞ্চের নিচে, যেখানে দর্শকেরা বসেছিল। তাকে অতিথি বানানো হলে তো মঞ্চেই বসানো হতো। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যাচার ও গুজব ছড়ানো হচ্ছে। 

মূলত, গত ১৪ অক্টোবর জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম মাঠে পাঁচবিবির রাধানগর খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতির সঙ্গে ব্যারিস্টার সুমন ফুটবল একাডেমির খেলা হয়। এই খেলার উদ্বোধনীতে প্রধান অতিথি ছিলেন পাঁচবিবি উপজেলা চেয়ারম্যান মুনিরুল শহিদ মুন্না। খেলার উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরমান হোসেন। অপরদিকে ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া সিদ্দিককে খেলার আয়োজক কমিটি দর্শকদের বিনোদনের উদ্দেশ্যে মাঠে নিয়ে আসেন৷ খেলার মধ্য বিরতিতে মাঠে তার সাথে সেলফি তোলা নিয়ে বিশৃঙ্খলা তৈরি হলে রোভার স্কাউটসের সদস্যরা শৃঙ্খলা ফেরাতে মাঠে উপস্থিত হন৷ সিদ্দিকের মাঠের এই উপস্থিতিকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ফুটবল টুর্নামেন্টের প্রধান অতিথি দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, আলোচিত এই ভাইরাল সিদ্দিককে সম্পর্কে বিস্তারিত অনুসন্ধানে একজন নারী থেকে ৫০০ টাকা চুরি করে হাতেনাতে ধরা খাওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সিদ্দিকের কথোপকথনের একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটিতে সিদ্দিক বলেন, তার বাড়ি গাইবান্ধা, বাবার নাম খতিব।

ভিডিওটিতে দেখা যায়, সিদ্দিক এক নারী থেকে ৫০০ টাকা চুরি করে পালানোর সময় মানুষের হাতে ধরা পড়লে “আমার ভুল হয়েছে, ক্ষমা করে দেন” বলে স্বীকারোক্তি দেন৷ পরবর্তীতে তার এই উক্তি সহ ভিডিওটি ফেসবুকে বিভিন্ন পেইজ ও গ্রুপের মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে। ভাইরাল হওয়া এমন কিছু ভিডিও দেখুন এখানে, এখানে

সুতরাং, চুরি করে ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া সিদ্দিককে ফুটবল টুর্নামেন্টে প্রধান অতিথি হিসেবে রাখার দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

RS Team
Rumor Scanner Fact-Check Team
- Advertisment -spot_img
spot_img
spot_img