ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী কি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন?

সম্প্রতি, “দে‌শের প্রথম নারী ও ২২ তম রাষ্ট্রপ‌তি নির্বাচিত হয়েছেন ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী।” শীর্ষক শিরোনামের একটি পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ড. শিরিন শারমিন চৌধুরীর রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার তথ্যটি সঠিক নয় বরং ফেব্রুয়ারীতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পূর্বে এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার সুযোগ নেই। 

ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী ২০১৩ সালে জাতীয় সংসদের স্পিকার হিসেবে নির্বাচিত হন। এরপর থেকে তাকে এই দায়িত্বেই দেখা গেছে। তবে সম্প্রতি ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন শীর্ষক একটি তথ্য ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ড. শিরিন শারমিন চৌধুরীর ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, গত বছরের ৫ নভেম্বরের পর নতুন কোনো পোস্ট দেওয়া হয়নি উক্ত পেজে। 

পরবর্তীতে কিওয়ার্ড সার্চ করে জাতীয় দৈনিক দেশ রূপান্তর পত্রিকার ওয়েবসাইটে “প্রথম নারী রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন শিরীন শারমিন চৌধুরী!” শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, “সংবিধান অনুযায়ী ২৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই নতুন রাষ্ট্রপতি নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। বিভিন্ন মহলে নানা জল্পনাকল্পনা শুরু হয়েছে কে বসছেন রাষ্ট্রপতির চেয়ারে। বেশ কয়েকজন আছেন আলোচনায়। তবে এদের মধ্যে বর্তমান স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সবার চেয়ে এগিয়ে আছেন।” 

Screenshot source: Desh Rupantor

এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে পত্রিকাটি পরদিন অর্থাৎ, ২২ জানুয়ারীর পত্রিকা পড়ার পরামর্শ দেয়। 

২২ জানুয়ারী এ বিষয়ে “প্রথম নারী রাষ্ট্রপতির সম্ভাবনা” শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, রাষ্ট্রপতির পদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তাদের শরিক দলগুলোর পছন্দের প্রার্থী বর্তমান স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। 

প্রতিবেদনে ড. শিরিন শারমিন চৌধুরীর গত ১৮ জানুয়ারী দেওয়া একটি বক্তব্যও রয়েছে। তিনি বলেছেন, “আওয়ামী লীগে প্রেসিডেন্ট হওয়ার মতো অনেক যোগ্য লোক রয়েছে। আমি জানি না কেন আমার নাম আসছে। আমি এখানেও অনেক ভালো আছি। স্পিকার হিসেবে আমি দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করছি। আমার কাছে এই বিষয়ে কোনো খবর নেই।”

Screenshot source: Desh Rupantor

পরবর্তীতে অন্যান্য গণমাধ্যমেও (প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, মানবজমিন, সমকাল) রাষ্ট্রপতি নির্বাচন বিষয়ক প্রতিবেদনগুলো পড়ে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। সকল প্রতিবেদনেই ড. শিরিন শারমিন চৌধুরীর নাম অন্যান্যদের সাথে সম্ভাব্য তালিকায় থাকলেও কোথাও নিশ্চিত করে বলা হয়নি তাকে নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করা হয়েছে। 

অর্থাৎ, ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী বাংলাদেশের নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন এমন তথ্যের নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্র নেই। 

তাছাড়া, ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী এখনও স্পিকারের দায়িত্বে রয়েছেন। আজ (২৪ জানুয়ারী) স্পিকার হিসেবে নির্বাচন কমিশনের সাথে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন বিষয়েই তার একটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে বলে খবর এসেছে গণমাধ্যমে। 

Screenshot source: Jugantor 

অর্থাৎ, ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী এখনও বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার পদে রয়েছেন।

কী আছে সংবিধানে? 

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের চতুর্থ ভাগের নির্বাহী বিভাগের ১ম পরিচ্ছেদে থাকা রাষ্ট্রপতি বিষয়ক অনুচ্ছেদটি পড়ে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। 

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের নির্ধারিত সময়ের পূর্বে নতুন কেউ রাষ্ট্রপতি পদে বসতে পারেন কিনা এমন প্রসঙ্গে ৫৪ নং অনুচ্ছেদে এসেছে, “রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হইলে কিংবা অনুপস্থিতি, অসুস্থতা বা অন্য কোন কারণে রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হইলে ক্ষেত্রমত রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত কিংবা রাষ্ট্রপতি পুনরায় স্বীয় কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত স্পীকার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করিবেন।”

Screenshot source: bdlaws

তবে সাম্প্রতিক সময়ে এমন কোনো ঘটনার (রাষ্ট্রপতির অনুপস্থিতি, অসুস্থতা বা অন্য কোন কারণে) বিষয়ে গণমাধ্যমে খবর আসেনি যার কারণে স্পিকারকে রাষ্ট্রপতির পদে বসতে হয়েছে। 

অর্থাৎ, মেয়াদ থাকায় আবদুল হামিদই এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

মূলত, সংবিধান অনুযায়ী আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই নতুন রাষ্ট্রপতি নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। রাষ্ট্রপতি পদের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে আলোচনায় আছে স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরীর নামও। তবে সম্প্রতি “দে‌শের প্রথম নারী ও ২২ তম রাষ্ট্রপ‌তি নির্বাচিত হয়েছেন ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী।” শীর্ষক একটি তথ্য ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা যায়, ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী এখনও স্পিকারের দায়িত্বে রয়েছেন এবং এ বিষয়ে তার জানা নেই বলে গণমাধ্যমে জানিয়েছেন। তাছাড়া, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পূর্বেই কে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবেন তা নিশ্চিতভাবে জানার সুযোগ নেই। 

উল্লেখ্য, সংবিধান অনুযায়ী, দুই মেয়াদের অধিক রাষ্ট্রপতি পদে কোনো ব্যক্তি অধিষ্ঠিত থাকতে পারবেন না। ২০১৩ সাল থেকে দুই মেয়াদে আবদুল হামিদ রাষ্ট্রপতি থাকায় তিনি তৃতীয় মেয়াদে আর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না।

প্রসঙ্গত, সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৬০ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার বিধান রয়েছে। রাষ্ট্রপতি সংসদ সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হন। আগামী ২৩ এপ্রিল বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হচ্ছে। 

সুতরাং, ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন শীর্ষক দাবিটি এখন পর্যন্ত মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img