সম্প্রতি “হাসিনার বিমান হিথ্রু এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করতে দেয়নি। পরে ৫০,০০০ পাউন্ড ফি দিয়ে ৬৪ মাইল দুরে অন্য একটা বিমানবন্দরে (স্টেন্স্টেড এয়ারপোর্ট) অল্প সময়ের জন্য ল্যান্ড করতে দেওয়া হয়। অবৈধ প্রধানমন্ত্রীর লজ্জা না থাকলেও এটা দেশের জন্য লজ্জাজনক!” শীর্ষক শিরোনামের একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত হচ্ছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিমান কোনো রাজনৈতিক কারণে হিথ্রো বিমানবন্দরে অবতরণ করতে না দেওয়ার দাবিটি সত্য নয় বরং ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের শেষকৃত্যে অংশগ্রহণের জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে আগত মানুষের চাপ সামলাতে সকল ব্যক্তিগত বিমান অবতরণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে যক্তরাষ্ট্র-জার্মানভিত্তিক রাজনৈতিক গণমাধ্যম Politico তে ২০২২ সালের ১১ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত “No private jets, no helicopters, and a bus to Westminster Abbey: VIP guidance for queen’s funeral revealed” শিরোনামে একটি সংবাদ পাওয়া যায়। উক্ত সংবাদ থেকে জানা যায়,
“Foreign heads of state and their spouses heading to London for the state funeral for Queen Elizabeth II have been asked to arrive in the U.K. on commercial flights and banned from using helicopters to get around.”
অর্থাৎ, রানী এলিজাবেথের শেষকৃত্যে অংশগ্রহণের জন্য আসা সকল বিদেশী অতিথিদের বানিজ্যিক ফ্লাইটে আসতে হবে এবং সকল ধরনের ব্যক্তিগত বিমান বা হেলিকপ্টার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এছাড়াও, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম New York Post এ ২০২২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত “Biden arrives in London ahead of Queen Elizabeth’s funeral” শীর্ষক শিরোনামের একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ব্রিটেনের রানীর শেষকৃত্যে যোগদানের জন্য আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ১৭ সেপ্টেম্বর সকাল দশটায় ইংল্যান্ডের এসেক্সের স্ট্যানস্টেড বিমানবন্দরে অবতরণ করেন।
অর্থাৎ, ব্যক্তিগত বিমানে যারাই ইংল্যান্ডে আসেন তাদের কেউই হিথ্রো বিমানবন্দরে নামতে পারেন নি। এমনকি খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্টকেও একই নিয়ম মেনে স্ট্যানস্টেড বিমানবন্দরে অবতরণ করতে হয়।
উল্লেখ্য, ব্যক্তিগত বিমানে করে এই একই বিমানবন্দরে অবতরণ করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ঘটনায় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারিত হয়।
মূলত, ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের শেষকৃত্যে অংশগ্রহণের জন্য বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি এবং রাষ্ট্রনায়করা ইংল্যান্ডে আসেন। শেষকৃত্যে আগত মানুষের চাপ সামলাতে হিথ্রো বিমানবন্দরে সকল ব্যক্তিগত ফ্লাইট নিষিদ্ধ করা হয় এবং আগত অতিথিদের বানিজ্যিক ফ্লাইটে আসতে আহ্বান করা হয়। উক্ত নিয়ম মেনেই বিভিন্ন দেশের অতিথিরা ইংল্যান্ডে আসেন এমনকি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ব্যক্তিগত বিমানে আসার কারনে স্ট্যানস্টেড বিমানবন্দরে অবতরণ করতে হয়। একই নিয়ম অনুসরণ করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ব্যক্তিগত বিমানে আসায় স্ট্যানস্টেড বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। উক্ত ঘটনাটি বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হিথ্রো এয়ারপোর্টে অবতরণ করতে না দেওয়ার দাবিতে প্রচারিত হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ইংল্যান্ডের লন্ডনে অবস্থিত হিথ্রো বিমানবন্দর বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ততম বিমানবন্দর। সদ্য প্রয়াত রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠান সমসাময়িক সময়ে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত সবচেয়ে বড় আয়োজন। একইসাথে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশের প্রধানরাও এ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। এসকল কারণেই বিমান ও আগত অতিথিদের চাপ সামলাতে হিথ্রো বিমানবন্দরে ব্যক্তিগত বিমান অবতরণে নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাজ্য প্রশাসন।
সুতরাং, বিমান ও আগত অতিথিদের চাপ সামলাতে হিথ্রো বিমানবন্দরে ব্যক্তিগত বিমান অবতরণে যুক্তরাজ্য প্রশাসন কর্তৃক নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার বিষয়টি বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হিথ্রো এয়ারপোর্টে অবতরণ করতে না দেওয়ার দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Politica : “No private jets, no helicopters, and a bus to Westminster Abbey: VIP guidance for queen’s funeral revealed”
- New York Times : “Biden arrives in London ahead of Queen Elizabeth’s funeral”
- The Business Standerd : PM arrives in London