সম্প্রতি “গিনেজ বুকে সবচেয়ে বড় বিজ্ঞান ক্লাস হিসেবে বিশ্বরেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ” শীর্ষক একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
প্রকৃতপক্ষে, ২০১৭ সাল থেকে এই তথ্যটি ফেসবুকে প্রচার হয়ে আসছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, “গিনেজ বুকে সবচেয়ে বড় বিজ্ঞান ক্লাস হিসেবে বিশ্বরেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ” দাবিটি সত্য নয় বরং সবচেয়ে বড় বিজ্ঞান ক্লাস হিসেবে নাম লেখানোর জন্য কর্মসূচি গ্রহণ করা হলেও গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের মানদন্ড অনুযায়ী তা শেষপর্যন্ত উত্তীর্ণ হতে পারেনি।
কী-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে ডেইলি স্টারের ওয়েবসাইটে ২০১৭ সালের ১১ জানুয়ারি প্রকাশিত Largest science lesson: Bangladesh set to break world record | undefined শীর্ষক শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা কুলিয়ারচর উপজেলার তৎকালীন নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উর্মি বিনতে সালামের একটি বক্তব্য থেকে জানা যায়, অনুষ্ঠানের ভিডিও ক্লিপ গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। তারপর গিনেজ বুক কর্তৃপক্ষ তাদের সিদ্ধান্ত জানাবেন।
এই বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানতে রিউমর স্ক্যানার টিম কুলিয়ারচর উপজেলার তৎকালীন ইউএনও উর্মি বিনতে সালামের যোগাযোগ করে। বর্তমানে তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন উপসচিব।

তিনি রিউমর স্ক্যানার টিমকে জানান, তিনি কুলিয়ারচর উপজেলার ইউএনও থাকা কালীন সময়ে বিভিন্ন স্কুল ঘুরে খেয়াল করেছিলেন যে, সেখানকার অধিকাংশ ছাত্র ছাত্রীরা বিজ্ঞান বিভাগ রেখে ব্যবসায় শিক্ষা এবং মানবিক শাখার বিষয় গুলোর দিকে ঝুকছে। বিজ্ঞান বিভাগে পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। তখন তাদের বিজ্ঞান বিষয়ক বিষয়গুলোর প্রতি আগ্রহ বাড়ানোর জন্য কি কি পদক্ষেপ নেয়া যায় এ ব্যাপারে রিসার্চ করতে গিয়ে ২০১৬ সালের ১৬ আগষ্ট অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনে কুইন্সল্যান্ড স্কুল ২৯০০ শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে বিজ্ঞান বিষয়ক পাঠদান করে গিনেজ বুকে নিজেদের নাম লেখার বিষয়টি তার নজরে আসে। এর থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের সাথে আলোচনা করেন বাংলাদেশে এমন কোনো পদক্ষেপ নেয়া যায় কি না এই ব্যাপারে। ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল এতে সম্মতি প্রকাশ করলে ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞান ক্লাসের আয়োজন করা হয়। সর্বমোট ২৮ টি স্কুলের ৩২০০ শিক্ষার্থীরা এই আয়োজনে অংশগ্রহণ করেছিল। এই অনুষ্ঠানের ভিডিও ক্লিপ গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছিল। তারপর প্রতিক্রিয়া স্বরূপ গিনেজ বুক কর্তৃপক্ষ তাদের সিদ্ধান্ত জানিয়েছিল। তারা বলেছিল ভিডিওতে একটা দুটো শিক্ষার্থী ক্লাসরুম থেকে বের হচ্ছিল আবার কেউ কেউ ভিতরে ঢুকছিল। এর ফলে সুনির্দিষ্ট কোনো সংখ্যার নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি কোনো ডিজিটাল কাউন্টিং সিস্টেম ব্যবহার না করার কারণে এটি গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের মানদন্ড অনুযায়ী উত্তীর্ণ হয়নি।
মূলত, কুইন্সল্যান্ড স্কুলের ২৯০০ শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে গিনেজ বু্কে সবচেয়ে বড় বিজ্ঞান ক্লাস হিসেবে নাম লেখানোর রেকর্ডকে ভঙ্গ করার জন্য বাংলাদেশে বিজ্ঞান বিষয়ক সবচেয়ে বড় ক্লাসরুমে ৩২০০ শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হলেও গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের মানদন্ড অনুযায়ী শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ বিশ্বরেকর্ড করতে পারেনি। কিন্তু বিষয়টির সম্পুর্ণ সত্যতা যাচাই না করেই “গিনেজ বুকে সবচেয়ে বড় বিজ্ঞান ক্লাস হিসেবে বিশ্বরেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ” দাবি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গিনেজ বু্কে সবচেয়ে বড় বিজ্ঞান ক্লাস হিসেবে নাম লেখানোর বর্তমান রেকর্ডধারী দেশ হচ্ছে ভারত। ২০১৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর ৪২৭২ জন শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ বিশ্বের সবচেয়ে বড় ব্যবহারিক বিজ্ঞান ক্লাসের আয়োজন করা হয়েছিল। ভারতের উত্তর প্রদেশের প্রয়াগরাজে শ্রী মহাপ্রভু পাবলিক স্কুল এবং দিল্লি পাবলিক স্কুলের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে বিজ্ঞান বিষয়ক পাঠদান করে গিনেজ বুকে নিজেদের নাম লেখায় ভারত।

সুতরাং, “গিনেজ বুকে সবচেয়ে বড় বিজ্ঞান ক্লাস হিসেবে বিশ্বরেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ” শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Daily Star: Largest science lesson: Bangladesh set to break world record
- মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে
- ড. উর্মি বিনতে সালামের সাথে ফোনালাপ
- Guinness World Records: Largest practical science lesson