হিন্দু হওয়ায় খুলনায় স্কুল শিক্ষার্থীকে খুন করার দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা 

সম্প্রতি Bengali Hindu নামে একটি টুইটার একাউন্ট থেকে মুহাম্মদ সোহেল ও তার বন্ধুরা নীরব মন্ডল নামে এক হিন্দু স্কুল শিক্ষার্থীকে খুন করেছে শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য প্রচার করা হচ্ছে।

টুইটারে প্রচারিত পোস্টটি দেখুন এখানে
পোস্টটির আর্কাইভ দেখুন এখানে

Screenshot: Twitter 

পোস্টটির সূত্রে ভারতের বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘বাংলাদেশে হিন্দু হওয়া পাপ। এই হলো নিরব মন্ডল, এ হিন্দু ছিল এটাই তার দোষ৷ বাংলাদেশে হিন্দু ছেলে নিরব মন্ডলকে হত্যা করলো মুহাম্মদ সোহেল ও তার বন্ধুরা।’ শীর্ষক শিরোনামে একই তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। 

টুইটারে ভারতীয় নেটিজেনদের প্রচারিত টুইট দেখুন এখানে, এখানে
টুইটগুলোর আর্কাইভ দেখুন এখানে, এখানে ৷ 

Image Collage: Rumor Scanner

ফেসবুকে ভারতীয় নেটিজেন কর্তৃক প্রচারিত এমন একটি পোস্ট দেখুন এখানে
পোস্টটির আর্কাইভ দেখুন এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, স্কুল শিক্ষার্থী নীরব মন্ডলের হত্যার সঙ্গে অভিযুক্তদের তালিকায় সবার নাম উল্লেখ না করে বিভ্রান্তিকরভাবে তথ্যটি প্রচার করা হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে নীরব হত্যার সঙ্গে মুহাম্মদ সোহেল সহ আরও ৪ জন হিন্দু ধর্মাবলম্বী জড়িত এবং নীরব হত্যার সঙ্গে কোনো ধর্মীয় বিষয়ও জড়িত নয়।

রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে মূলধারার অনলাইন গণমাধ্যম Dhaka Times এ গত ৩ ফেব্রুয়ারি ‘খুলনায় ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণের দাবিতে স্কুলছাত্রকে শ্বাসরোধে হত্যা‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Dhaka Times

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়,

 খুলনার ডুমুরিয়ায় ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণের দাবিতে স্কুলছাত্র নীরব মণ্ডলকে (১২) শ্বাসরোধে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তার সহপাঠীদের বিরুদ্ধে। নিহত নীরব মণ্ডল উপজেলার গুটুদিয়া গ্রামের শেখর মণ্ডলের ছেলে।

Screenshot: Dhaka Times

প্রতিবেদনটি থেকে আরও জানা যায়,

নীরব স্কুলে গিয়ে বাড়ি না ফেরায় তাকে খোঁজাখুঁজি করে নীরবের পরিবার। এরপর বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে নীরবের বাবার কাছে মোবাইলে কল করে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। ঘটনাটি থানা পুলিশকে জানান নীরবের বাবা। খবর পেয়ে পুলিশ নীরবকে উদ্ধার করতে তৎপরতা শুরু করে। একপর্যায়ে রাত ১টার দিকে গুটুদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একটি কক্ষ থেকে নীরবের লাশ উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে নীরবের স্কুলে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী গুটুদিয়া গ্রামের সোহেল মোল্যা (১৫), পিতু মণ্ডল (১৫), হিরক রায় (১৫), ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র দীপু রায় (১২) ও ১০ম শ্রেণির ছাত্র উপজেলার তেলিগাতি গ্রামের পিয়াল মণ্ডলকে (১৬) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।

Screenshot: Dhaka Times

অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, নীরব হত্যার সঙ্গে অভিযুক্ত ৫ জনের মধ্যে ৪ জন হিন্দু ধর্মাবলম্বী ও একজন মুসলিম। 

পাশাপাশি বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) এর ওয়েবসাইটে গত ৪ ফেব্রুয়ারি ‘5 juveniles confess in court in student Nirob murder case in Khulna‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: BSS

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়,

 খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলায় সপ্তম শ্রেণির ছাত্র নীরব হত্যা মামলায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে গ্রেফতারকৃত পাঁচ কিশোর।

Screenshot: BSS

আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিতে ঐ পাঁচ কিশোর জানায়, তারা মুক্তিপণের টাকা না পেয়ে নীরব মণ্ডলকে হত্যা করেছে। 

প্রতিবেদনটি থেকে পাওয়া নীরব হত্যায় গ্রেফতারকৃতদের নামের তালিকা থেকে দেখা যায় তারা হলো, দশম শ্রেণীর ছাত্র পিয়াল রায় (১৬), এবং নবম শ্রেণীর তিন ছাত্র পিটু মন্ডল, হিরক রায় ও সোহেল মোল্লা (১৫) এবং একই বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র দীপ মন্ডল (১২)।

Screenshot: BSS

এছাড়া বাংলাদেশ পুলিশের ওয়েবসাইট Police News এ ৩ ফেব্রুয়ারি ‘খুলনায় মুক্তিপণ না পেয়ে স্কুলছাত্রকে শ্বাসরোধে হত্যা‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Police News

অর্থাৎ স্কুল শিক্ষার্থী নীরবকে অপহরণের পর চাঁদা না পাওয়ায় তাকে হত্যা করা হয়েছে এবং তার হত্যার সঙ্গে একজন মুসলিম ও চারজন হিন্দু ধর্মাবলম্বী জড়িত। 

তবে টুইটারে প্রচারিত পোস্টটিতে ৪ জন হিন্দু ধর্মাবলম্বীর নাম উল্লেখ না করে কেবল ইসলাম ধর্মাবলম্বী সোহেলের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া পোস্টটিতে নীরবকে হত্যার কারণটিও উল্লেখ করা হয়নি। 

মূলত, গত ২ ফেব্রুয়ারি স্কুলে গিয়ে নিখোঁজ হন খুলনার ডুমুরিয়ার গুটুদিয়া এসিজিবি মাধ্যমিক স্কুলের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী নীরব মন্ডল। একইদিন বিকালে নীরবের বাবার কাছে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। পরবর্তীতে গুটুদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একটি কক্ষ থেকে নীরবের লাশ উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে নীরবের স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী গুটুদিয়া গ্রামের সোহেল মোল্যা (১৫), পিতু মণ্ডল (১৫), হিরক রায় (১৫), ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র দীপু রায় (১২) ও ১০ম শ্রেণির ছাত্র উপজেলার তেলিগাতি গ্রামের পিয়াল মণ্ডলকে (১৬) আটক করা হয় এবং তারা আদালতে এই ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। কিন্তু এই ঘটনাটিকেই পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে কেবল সোহেল মোল্যার নাম উল্লেখ করে আংশিকভাবে প্রচার করা হয় যে, মুহাম্মদ সোহেল ও তার বন্ধুরা নীরব মন্ডল নামে এক হিন্দু স্কুল শিক্ষার্থীকে খুন করেছে। এর সূত্র ধরে ভারতীয় নেটিজেনরাও বিষয়টিকে ধর্মীয় পরিচয়ে মিথ্যা দাবিতে প্রচার করতে থাকে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে নীরব হত্যার ব্যাপারটি  ভারতে ছড়িয়ে পড়লে ভারতীয় ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান The Quint বিষয়টিকে মিথ্যা হিসেবে উল্লেখ করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

সুতরাং, হিন্দু হওয়ায় নীরব মন্ডল নামে এক স্কুল শিক্ষার্থীকে মুহাম্মদ সোহেল ও তার বন্ধুরা মিলে খুন করার দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img