গত ২৫ ডিসেম্বর Sabai Sikhi নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্বে সেনাবাহিনী’ শীর্ষক শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।

ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি ভিডিওটি দেখা হয়েছে প্রায় ২৮ হাজার বার। ভিডিওটি ৯ শত পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সেনাবাহিনীর হাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্রেফতার হননি এবং সেনাবাহিনী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব পাওয়ার দাবিটিও সঠিক নয় বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটি ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি পুরোনো ঘটনার ভিডিও ক্লিপ এবং ছবি নিয়ে তৈরি একটি ভিডিও প্রতিবেদন, যেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সেনাবাহিনীর সদস্যদের পুরোনো কিছু কার্যক্রমের দৃশ্য দেখানো হয়।
ভিডিওটি’র সংবাদপাঠ অংশে বলা হয়, “এবার নির্বাচনের আগে সেনা সদস্যদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশ প্রদান করলেন সেনাপ্রধান। যেকোনো পরিস্থিতিতে জনগনের পাশে থাকার আহ্বান জানান। এবারের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনার জন্য যেকোনো দায়িত্ব পালনে প্রস্তুত বলে জানান সেনাপ্রধান। প্রয়োজনে যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে প্রস্তুত।”
আলোচিত ভিডিওটি’র শিরোনাম এবং থাম্বনেইলে উল্লেখিত দাবিগুলোর সাথে ভিডিওটি’র বিস্তারিত অংশের মিল পাওয়া যায়নি। আলোচিত ভিডিওটিতে প্রচারিত ভিডিও ক্লিপগুলোর বিষয়ে আলাদা আলাদাভাবে অনুসন্ধান চালায় রিউমর স্ক্যানার টিম।
ভিডিও যাচাই-১
আলোচিত ভিডিওটি থেকে কিছু স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল সময় টিভি’র ইউটিউব চ্যানেলে ২০২২ সালের ১১ জুন ‘সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দীর্ঘ ১১ মাস কারাভোগের পর মুক্তি পান তিনি’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

এই ভিডিওটি’র সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে দেখানো প্রথম ভিডিও ক্লিপের হুবহু মিল পাওয়া যায়।

অর্থাৎ, এই ভিডিওটি ২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দীর্ঘ ১১ মাস কারাভোগের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুক্তি পাওয়ার সময়ের।
ভিডিও যাচাই-২
আলোচিত ভিডিওটি থেকে কিছু স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভি’র ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৪ ডিসেম্বর ‘চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত থাকতে হবেঃ সেনাপ্রধান’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিওটি’র সাথে আলোচিত ভিডিওটি’র সেনাপ্রধানের বক্তব্যের অংশের হুবহু মিল পাওয়া যায়।

অর্থাৎ, এই ভিডিওটি সেনাবাহিনীর ৫ ইউনিটকে রেজিমেন্টাল কালার প্রদান অনুষ্ঠানের। এর সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে প্রচারিত দাবিগুলোর কোনো সম্পর্ক নেই।
ভিডিও যাচাই-৩
আলোচিত ভিডিওটি’র অপর একটি অংশ থেকে কিছু স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ভারতীয় গণমাধ্যম India Today’র ইউটিউব চ্যানেলে গত ০২ নভেম্বর ‘Why Does Opposition Want Bangladesh PM Sheikh Hasina to Resign’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিওটি’র সাথে আলোচিত ভিডিওটি’র একটি অংশের হুবহু মিল পাওয়া যায়।

অর্থাৎ, এই ভিডিওটি’র সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে প্রচারিত দাবিগুলোর কোনো সম্পর্ক নেই।
এছাড়াও, গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে এখন পর্যন্ত সেনাবাহিনীর হাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গ্রেফতার হওয়া কিংবা সেনাবাহিনী কর্তৃক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব পাওয়ার দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি।
তাছাড়া, ২০১১ সালে বাংলাদেশে আপিল বিভাগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কিত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে। পরবর্তীতে এই ব্যবস্থা আর পুর্ণবহাল করা হয়নি।
অর্থাৎ, উপরোক্ত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, আলোচিত ভিডিওটিতে প্রচারিত তথ্যগুলো সঠিক নয়।
মূলত, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করার দাবিতে বিএনপি-জামায়াতসহ আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে আন্দোলন করে আসছে। এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ধরনের তথ্য প্রচার হয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৫ ডিসেম্বর Sabai Sikhi নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্বে সেনাবাহিনী’ শীর্ষক শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। ভিডিওটির দাবিগুলোর বিষয়ে অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবিগুলো সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে অধিক ভিউ পাবার আশায় ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি পুরোনো ভিডিও ক্লিপ ও ছবি যুক্ত করে তাতে চটকদার থাম্বনেইল ও শিরোনাম ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবিগুলো প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া, গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে দাবিগুলোর সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, পূর্বেও চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে বিভিন্ন ভুয়া তথ্য প্রচারের প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, সেনাবাহিনীর হাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্রেফতার হওয়া এবং সেনাবাহিনী কর্তৃক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব পাওয়ার তথ্যগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- BBC: তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল ঘোষণা
- NTV YouTube: চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত থাকতে হবেঃ সেনাপ্রধান
- Somoy TV YouTube: সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দীর্ঘ ১১ মাস কারাভোগের পর মুক্তি পান তিনি
- India Today: Why Does Opposition Want Bangladesh PM Sheikh Hasina to Resign
- Rumor Scanner’s Own Analysis