সম্প্রতি “রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি দিতে এসে ধরা পড়েছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের এক ছাত্র।” শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
এ ঘটনায় দেশীয় মূলধারার গণমাধ্যম ঢাকাপোস্ট, বাংলা নিউজ২৪, আরটিভি অনলাইন, দৈনিক নয়াদিগন্ত, ক্যাম্পাস টাইমস, সমকাল এও একই তথ্য সম্বলিত সংবাদ প্রচার করে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্যের হয়ে পরীক্ষা দিতে এসে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর আটক হওয়ার বিষয়টি সত্য নয় বরং আটক হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে দুইজন রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের, একজন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এবং একজন খুলনার গাজী মেডিকেল কলেজের অ্যানাটমি বিভাগের প্রভাষক ডা. সমীর রায়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্যের হয়ে পরীক্ষা দিতে এসে আটক শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রয়েছে কি না এই ব্যাপারে জানতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ওয়াদুদুর রহমানের সঙ্গে রিউমর স্ক্যানারের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়।
তিনি আটক ব্যক্তিদের ছবি দেখে রিউমর স্ক্যানার টিমকে জানান, আটক শিক্ষার্থীদের মধ্যে কেউ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী নয়।
এর আগে এর আগে আটককৃত শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেরোবির বাংলা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী রয়েছে বলে ফেসবুক ও একাধিক গণমাধ্যমের অনলাইন পোর্টালে সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে।
এছাড়া অন্যের হয়ে পরীক্ষা দিতে এসে আটক শিক্ষার্থীদের মধ্যে একজনকে আটক করার ব্যাপারে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কাজী জাহিদ তার ফেসবুক আইডিতে বিস্তারিত বর্ণনা করে লিখেন, “রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এ-ইউনিট প্রথম শিফট ভর্তি পরীক্ষায় ৫০ হাজার টাকার চুক্তিতে তামিম হাসান লিমন নামের জনৈক প্রার্থীর প্রক্সি দিতে এসে এম ওয়াজেদ মিঞা একাডেমিক ভবনের ২২২ নম্বর রুমে আমার হাতে ধরা পড়েছে এই ছেলেটি। সে প্রথমে নিজেকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের মাস্টার্স-এর ছাত্র দাবী করলেও ট্রিটমেন্ট দেয়ার পরে স্বীকার করেছে যে সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থী। নিজের দেয়া স্বীকারোক্তি মতে, তার বাড়ি জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার কুয়াতপুর গ্রামে। তার বাবার নাম আবুল কাশেম এবং মা মেনেকা বেগম। আর তার নিজের নাম এখলাছুর রহমান। আমার বিভাগের কন্ট্রোল রুমে হস্তান্তর করার পরে তাকে সহকারী প্রক্টরদের তত্ত্বাবধানে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়।”
পরবর্তী সময়ে এখলাছুর রহমান সম্পর্কে জানতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. দেবপ্রসাদ দাঁর সঙ্গে রিউমর স্ক্যানার টিমের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়। তিনি রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেন, এখলাছুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থী। ২০২০ সালে তার মাস্টার্স সম্পন্ন হয়েছে।
এছাড়া কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, জাতীয় দৈনিক ডেইলি স্টারের ওয়েবসাইটে একইদিনে “রাবি ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি: ঢাবি ছাত্রলীগ নেতাসহ ৪ জনের কারাদণ্ড” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়, গতকাল মঙ্গলবার ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষের এ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা চলাকালে পরীক্ষাকেন্দ্রে অন্য শিক্ষার্থীর হয়ে প্রক্সি দেওয়ার অভিযোগ তাদেরকে আটক করা হয়। আটকের পরে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অপরাধ স্বীকার করেন তারা।
দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থী এখলাসুর রহমান এবং লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী জান্নাতুল মেহজাবীন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী বায়েজিদ খান এবং খুলনার গাজী মেডিকেল কলেজের অ্যানাটমি বিভাগের প্রভাষক ডা. সমীর রায়। এছাড়া দণ্ডিতদের রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানা যায়।
এছাড়া, দেশীয় মূলধারার সংবাদমাধ্যম ‘যুগান্তর’ এর অনলাইন সংস্করণে আজ সকাল ৫.৫৭ মিনিটে “রোগী সেজে রাবিতে প্রক্সি দিতে এসে ধরা চিকিৎসক” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনের বিস্তারিত অংশেও রাবি’র ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি দিতে এসে ৪ জন আটক হওয়ার তথ্য উল্লেখ রয়েছে। তবে এই ৪ জনের মধ্যে বেরোবি’র কোনো শিক্ষার্থীর নাম খুঁজে পাওয়া যায় নি।
মূলত, ২৬ জুলাই (মঙ্গলবার) রাবির ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার সময় অন্যের হয়ে পরীক্ষা দিতে এসে আটক হন এখলাসুর রহমান, বায়েজিদ খান, জান্নাতুল মেহজাবিন এবং ডা. সমীর রায় নামের ৪ ব্যক্তি। আটকের পর এক শিক্ষার্থী মিথ্যা পরিচয় দেওয়াতে আটককৃতদের মধ্যে একজন বেরোবির বাংলা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী রয়েছে বলে ফেসবুক ও একাধিক গণমাধ্যমের অনলাইন পোর্টালে ভুল সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে। তবে পরবর্তীতে রাবি জনসংযোগ দপ্তর গণমাধ্যমকে জানায়, আটককৃতদের মধ্যে এখলাসুর রহমান ও জান্নাতুল মেহজাবীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বায়েজিদ খান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং অন্যজন খুলনার গাজী মেডিকেল কলেজের অ্যানাটমি বিভাগের প্রভাষক ডা. সমীর রায়।
সুতরাং, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্যের হয়ে পরীক্ষা দিতে এসে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর আটক হওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ গুজব।
তথ্যসূত্র
- bdnews24.com: রাবির ভর্তি পরীক্ষায় ‘প্রক্সি’, ঢাবির দুজনসহ ৩ শিক্ষার্থী দণ্ডিত
- Daily Star: রাবি ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি: ঢাবি ছাত্রলীগ নেতাসহ ৪ জনের কারাদণ্ড
- Kazi Jahid Facebook Post: Kazi Jahid Facebook Post (আর্কাইভ)