কুয়েটে হামলার এই ছবিগুলো গত ১৮ ফেব্রুয়ারির, ২০১৪ সালের নয়

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) ছাত্ররাজনীতি বন্ধ ইস্যুতে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গতকাল (১৮ ফেব্রুয়ারি) সংঘর্ষ হয়। এর পরপরই উক্ত সংঘর্ষের ছবি দাবিতে একাধিক ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপকভাবে প্রচার করা হয়। এরই প্রেক্ষিতে ‘ভেট-ডা. রায়হানুল নবি’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে এসব ছবি প্রচার করার একটি স্ক্রিনশট গতকাল (১৮ ফেব্রুয়ারি) থেকে ফেসবুকে প্রচার করে দাবি করা হয়, “শিবির এই ছবিকে কুয়েটের ছাত্রদলের বলে গুজব ছড়াচ্ছে মুলত এটি ২০১৪ সনের ছবি।”

উল্লেখ্য যে, প্রচারিত উক্ত স্ক্রিনশটে দা বা দেশীয় অস্ত্র হাতে ফেসবুকে ব্যাপকভাবে প্রচারিত ছবিগুলো দেখা যায় এবং তারিখ হিসেবে ৩ জানুয়ারি ২০১৪ এর উল্লেখ দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়াও উক্ত স্ক্রিনশটে চারটি ছবির প্রিভিউসহ আরো ৩৩৮টি ছবি থাকতে দেখা যায়।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, কুয়েটে সংঘর্ষের এই ছবিগুলো ২০১৪ সালের নয় বরং, গতকালের (১৮ ফেব্রুয়ারি)। উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে ছবিতে থাকা যুবদল নেতাকে বহিষ্কারও করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিগুলো রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে জাতীয় দৈনিক যায়যায়দিনের ওয়েবসাইটে “কুয়েটের দুই পক্ষের সংঘর্ষে অস্ত্রধারীরা ছাত্ররা কারা?” শীর্ষক শিরোনামে ১৮ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রকাশিত উক্ত সংবাদ প্রতিবেদনটিতে তিনটি ছবির একটি কোলাজের সংযুক্তি পাওয়া যায় যার সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিগুলোর সাদৃশ্য রয়েছে।

Comparison : Rumor Scanner

এছাড়া অনলাইন সংবাদমাধ্যম দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের ওয়েবসাইটে “কুয়েটে হামলা: বহিষ্কার হলেন যুবদল নেতা” শীর্ষক শিরোনামে আজ (১৯ ফেব্রুয়ারি) প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদনে সংযুক্ত একটি ছবির সাথেও আলোচিত দাবিতে প্রচারিত একটি ছবির সাদৃশ্য পাওয়া যায়। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কুয়েটের ঘটনায় অস্ত্র হাতে ধারণকৃত উক্ত ব্যক্তি হলেন যুবদল নেতা মাহবুবুর রহমান এবং এ ঘটনার প্রেক্ষিতে তাকে যুবদল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

তাছাড়া, দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসে গতকাল (১৮ ফেব্রুয়ারি) প্রকাশিত আরেকটি সংবাদ প্রতিবেদনেও আরেকটি ছবির সংযুক্তি পাওয়া যায় এবং জানা যায় ছবিটি কুয়েটে সংঘর্ষেরই।

অর্থাৎ, এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে প্রচারিত ছবিগুলো ২০১৪ সালের নয় বরং গতকাল (১৮ ফেব্রুয়ারিতে) কুয়েটে হওয়া সংঘর্ষের।

তবে কেন এই বিভ্রান্তি?

দাবিকৃত কোলাজে ‘ভেট-ডা. রায়হানুল নবি’ নামের উক্ত ফেসবুক অ্যাকাউন্টের স্ক্রিনশট পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, এতে চারটি ছবির প্রিভিউ দেখা যাচ্ছে এবং পাঁচ নম্বর ছবির উপর +৩৩৮ লেখা রয়েছে। প্রিভিউতে থাকা চারটি ছবির মধ্যে তিনটি ছবির সাথে কুয়েটে হামলার ছবিগুলো মিলে যায়। তবে ‘ভেট-ডা. রায়হানুল নবি’ নামের উক্ত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে প্রচারিত একই ছবি যুক্ত পোস্টে ২০১৪ সালের ৩ জানুয়ারির তারিখ দেখাচ্ছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ‘ভেট-ডা. রায়হানুল নবি’ নামের উক্ত ফেসবুক অ্যাকাউন্টটিতে ৩ জানুয়ারি ২০১৪ সালে প্রচারিত পোস্ট পর্যবেক্ষণ করলে আলোচিত ছবিগুলোর কোনোটিই পোস্ট হতে দেখা যায়নি।

তবে, গতকাল (১৮ ফেব্রুয়ারি) উক্ত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে “চাচ্চুদের রাজনীতিতে স্বাগতম কুয়েটে শিক্ষার্থীদের উপর হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।” শীর্ষক ক্যাপশনে রায়হানুলকে উক্ত ছবিগুলো পোস্ট করতে দেখা যায়৷

Screenshot: Facebook

এছাড়া প্রিভিউতে দেখানো চতুর্থ ছবিটিও গত ৯ ফেব্রুয়ারিতে তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে “এমসি কলেজ রিপোর্টাস ইউনিটির প্রশিক্ষণ কর্মশালা” শীর্ষক ক্যাপশনে প্রচারিত একটি পোস্টে পাওয়া যায়।

Collage: Rumor Scanner 

এসব বিষয় পর্যালোচনা করে রিউমর স্ক্যানার অনুসন্ধানে জানতে পারে, এই ছবিগুলো মূলত ‘ভেট-ডা. রায়হানুল নবি’ এর ‘Mobile uploads’ অ্যালবামের অংশ। এই প্রতিবেদনটি লেখার সময় এই অ্যালবামে ৩৪১টি ছবি আছে বলে জানা যায়। অ্যালবামটি শেয়ার করার ফলে পুরোনো কোনো ছবির তারিখ পোস্টের তারিখ হিসেবে দেখায় ফেসবুক, যার ফলে এই বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। এক্ষেত্রে অ্যালবামটির সবচেয়ে পুরোনো ছবির তারিখ ৩ জানুয়ারি ২০১৪ দেখিয়েছে।

পরীক্ষামূলকভাবে রিউমর স্ক্যানারের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজের Timeline Photos অ্যালবাম শেয়ার করলে ২০২২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বরের তারিখ দেখায়, যদিও অ্যালবামটিতে দেখানো প্রথম ছবিটি ২০২৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারিতে (গতকাল) পোস্ট করা হয়েছিল। 

Screenshot: Facebook 

তাছাড়া, উক্ত অ্যালবামে প্রচারিত ছবিগুলোতে ক্লিক করলে সেখানে দেখা যায় এটি ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে তথা গতকাল পোস্ট করা হয়েছে।

সুতরাং, কুয়েটে হামলার ছবি দাবিতে ২০১৪ সালের ছবি প্রচার করা হয়েছে শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img