সম্প্রতি “নরওয়েতে এটাই পৃথিবীর শেষ প্রান্ত” শীর্ষক শিরোনামের একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত হচ্ছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এরকম কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত ছবির স্থানটি পৃথিবীর শেষ প্রান্ত নয় বরং এটি প্রাইকেস্টোলেন পাহাড় নামক নরওয়ের একটি জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান।
কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, Visit Norway নামক ওয়েবসাইটে “Hiking to Preikestolen” নামক প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে প্রাইকেস্টোলেন সম্পর্কে বিস্তারিত জানা গেলেও কোথাও এটিকে পৃথিবীর শেষ প্রান্ত বলা হয় নি।
এছাড়াও, গুগল ম্যাপে অনুসন্ধানে দেখা যায়, পৃথিবীর শেষপ্রান্ত বলে দাবি করা হলেও প্রাইকেস্টোলেনের সামনে ভূখন্ড পরিলক্ষিত হয়।
এছাড়াও মূলধারার কোনো গণমাধ্যম, কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকেও পৃথিবীর শেষ প্রান্ত বলে কোনো কিছুর অস্তিত্ব জানা যায় নি।
অন্যদিকে, Scientific American এর ওয়েবসাইটে বিজ্ঞান, প্রকৃতি ও জীববিজ্ঞান বিষয়ক লেখক Q Choi ২০০৭ সালের ১২ এপ্রিল “Strange but True: Earth Is Not Round” শীর্ষক শিরোনামের একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে পৃথিবীর আকৃতি সম্পর্কে বলা হয়, “Planet Earth is not, in fact, perfectly round.” অর্থাৎ পৃথিবী একদম গোলাকার নয়। উত্তর-দক্ষিণে কিছু চাপা। গোলাকার কোনো বস্তুর কোনো কোন বা শেষ প্রান্ত বলে কিছু নেই।
এছাড়াও, NASA’র ওয়েবসাইটে “Earth from Space” শীর্ষক প্রতিবেদনে স্যাটেলাইটে মহাকাশ থেকে পৃথিবীর ছবি পাওয়া যায়। যেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে পৃথিবীর কোনো প্রান্ত নেই।
এছাড়াও, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম CNN এ ২০১৭ সালের ১৭ আগস্ট প্রকাশিত “50 awe-inspiring natural wonders for your bucket list” শীর্ষক শিরোনামের একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে জানা যায়, প্রাইকেস্টোলেন নরওয়ের সংস্যান্ড নামক স্থানে লাইসেফজর্ডানে অবস্থিত। ধারণা করা হয় এ ভূখন্ড দশ হাজার বছর পূর্বে বরফ যুগে গঠিক হয়েছে। এটি ভূপৃষ্ঠ থেকে সোজাসুজি ৬০৪ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। উক্ত প্রতিবেদনে CNN প্রাইকেস্টোলেনকে প্রাকৃতিক আশ্চর্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
প্রসঙ্গত, CNN এর প্রতিবেদনের কোথাও প্রাইকেস্টোলেনকে পৃথিবীর শেষ প্রান্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয় নি।
American Physical Society’র ওয়েবসাইটে ২০০৬ সালে প্রকাশিত “This Month in Physics History” শীর্ষক শিরোনামের একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদন হতে জানা যায়, যীশু খ্রিষ্টের জন্মের ৫০০ বছর পূর্বেই গ্রীকরা পৃথিবী গোলাকার ধারণায় বিশ্বাস করতো। প্রথম গোলাকার পৃথিবীর ধারণা দেন পিথাগোরাস। তবে পৃথিবীর আকৃতি পরিমাপক পদ্ধতির সর্বপ্রথম ধারনা দেন ইরাতোস্থেনিস। পরবর্তীতে বিভিন্নসময় এ নিয়ে মতবিরোধ থাকলেও বর্তমান আধুনিক জ্ঞানবিজ্ঞানের সুবাদে গোলাকার পৃথিবীর ধারণা সুস্পষ্ট হয়।
মূলত, প্রাইকেস্টোলেন নরওয়ের সংস্যান্ড নামক স্থানে লাইসেফজর্ডানে অবস্থিত একটি পাহাড়ের চূড়া। ধারণা করা হয় এ ভূখন্ড দশ হাজার বছর পূর্বে বরফ যুগে গঠিক হয়েছে। এটি ভূপৃষ্ঠ থেকে সোজাসুজি ৬০৪ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। অস্বাভাবিক ভূমির গঠন এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে খাড়া উচ্চতার কারণে পৃথিবীর শেষ প্রান্ত হিসেবে দাবি করা হয়। তবে মূলধারার গণমাধ্যম এবং কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র হতে এটিকে পৃথিবীর শেষ প্রান্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয় নি। এমনকি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম CNN এর প্রতিবেদনে প্রাইকেস্টোলেন স্থান পেলেও একে শেষ প্রান্ত বলা হয় নি। NASA’র স্যাটেলাইট হতে প্রাপ্ত পৃথিবীর ছবি দেখলে বুঝা যায়, গোলাকার পৃথিবীর শেষ প্রান্ত বা কোনো কোণ নেই।
উল্লেখ্য, প্রাইকেস্টোলেন নরওয়েতে অবস্থিত নরওয়ের একটি জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান। প্রতিবছর প্রায় তিন লক্ষাধিক দর্শনার্থী এখানে আসেন। অস্বাভাবিক ভূপ্রকৃতির জন্য এটি নিয়ে বিভিন্ন মিথ প্রচলিত আছে। যারমধ্যে পৃথিবীর শেষ প্রান্ত হিসেবে এ অঞ্চলকে দাবি করা অন্যতম।
সুতরাং, নরওয়ের প্রাইকেস্টোলেন পৃথিবীর শেষ প্রান্ত শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Visit Norway : Hiking to Preikestolen
- CNN : 50 awe-inspiring natural wonders for your bucket list
- Scientific American : Strange but True: Earth Is Not Round
- NASA : Earth from Space
- American Physical Society : This Month in Physics History