কুমিল্লায় ১৬ এপ্রিলের সংঘর্ষে পলিটেকনিকের কোনো শিক্ষার্থী নিহত হয়নি

গতকাল (১৬ এপ্রিল) ছয় দফা দাবিতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা সড়ক, মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। কুমিল্লায় ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়ক প্রায় দুই ঘণ্টা আটকে রাখেন শিক্ষার্থীরা। সে সময় সংঘর্ষে তিন শিক্ষার্থী মারা গেছেন শীর্ষক একটি দাবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। 

উক্ত দাবির ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে। 

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, কুমিল্লায় গতকাল সংঘর্ষে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের তিন শিক্ষার্থী নিহতের দাবিটি সঠিক নয় বরং এই ঘটনায় একাধিক শিক্ষার্থী আহত হলেও নিহতের কোনো তথ্য নির্ভরযোগ্য সূত্রে পাওয়া যায়নি। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উক্ত দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলোতে একটি ব্লগপোস্টের লিংক সূত্র হিসেবে দেওয়া হয়েছে। রিউমর স্ক্যানারের বিশ্লেষণে sadhinnews247 নামের ব্লগস্পটের বিনামূল্যের ডোমেইনের এই সাইটটি একটি ভূঁইফোড় সাইট বলে প্রতীয়মান হয়। সাইটে ‘কুমিল্লা পলিটেকনিকে বিক্ষোভে উত্তাল পরিস্থিতি: গুলিতে নিহত ৩ শিক্ষার্থী, দুই সেনা সদস্য বহিষ্কৃত’ শীর্ষক কথিত দাবির বিষয়ে একটি সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে।

কথিত এই সংবাদে দাবি করা হয়, কুমিল্লা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে বিক্ষোভ চলাকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীর একটি ইউনিটের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছে তিন শিক্ষার্থী। গুরুতর আহত অবস্থায় আরও অন্তত ১৫ জনকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

কথিত এই সংবাদে দাবি করা হয়, নিহত তিনজনই কুমিল্লা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থী। তাদের নাম—মাসুদ রানা (২য় বর্ষ), জুবায়ের হোসেন (৩য় বর্ষ), ও রাফিন হোসেন (৪র্থ বর্ষ)। 

সংবাদটিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বক্তব্য যুক্ত করা হয়েছে। যদিও তিনি বর্তমানে এই পদে নেই। গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে তিনি পলাতক রয়েছেন। 

অনুসন্ধানে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কুমিল্লার ঘটনায় গতকাল সেনাবাহিনীর সদস্যরা ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ সময় হুড়োহুড়ি করতে গিয়ে কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। 

অনলাইন সংবাদমাধ্যম বিডিনিউজ২৪ এর একই ঘটনা সংক্রান্ত প্রতিবেদনে এই ঘটনায় ৩০ জন আহতের কথা জানিয়ে সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। কুমিল্লা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের উপাধ্যক্ষ মো. মাজারুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “মহাসড়কে ধাওয়ার ঘটনায় আমাদের ৩০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে যাদের জখম রয়েছে তাদেরকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আর যারা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে ছিল আমরা তাদেরকে নিয়ে এসেছি তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করছি।” 

তবে এ ব্যাপারে সদর দক্ষিণ থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, “আমরা আন্দোলনকারীদের শান্তিপূর্ণভাবেই সরিয়ে দিয়েছি। কেউ আহত হয়েছে বলে আমার কাছে তথ্য নেই।”  

রিউমর স্ক্যানার এ বিষয়ে কুমিল্লার স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথেও কথা বলেছে। তারা জানিয়েছেন, এই ঘটনায় কোনো মৃত্যুর খবর তারা পাননি। 

সুতরাং, কুমিল্লায় ১৬ এপ্রিলের সংঘর্ষে সেনাবাহিনীর গুলিতে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের তিন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে শীর্ষক একটি দাবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।  

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img