পুলিশ ও সেনাবাহিনী কর্তৃক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের নির্দেশ দেওয়ার গুজব 

গত ১৬ নভেম্বর Sabai Shiki নামের একটি ইউটিউব চ্যানেল হতে ‘হাসিনার কথা শুনছে না পুলিশ-সেনাবাহিনী, দ্রুত পদত্যাগের নির্দেশ’ শীর্ষক থাম্বনেইল এবং ‘হাসিনাকে পদত্যাগের নির্দেশ দিলো পুলিশ ও সেনাবাহিনী, ভয়ে আ.লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনেই নির্বাচন’ শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।

পদত্যাগের নির্দেশ

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)

এই প্রতিবেদন প্রকাশ অবধি ভিডিওটি ৪ লক্ষ ৩৮ হাজার ৯ শত ৩৭ বার দেখা হয়েছে। ভিডিওতে লাইক দেওয়া হয়েছে হয়েছে ৫ হাজার ১ শত সংখ্যক। ভিডিওটির মন্তব্যঘর ঘুরে অনেক আলোচিত দাবির প্রেক্ষিতে নেটিজেনদের মতামত জানাতে দেখা গেছে।

এছাড়া অন্য একটি ইউটিউব চ্যানেল থেকেও একই ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে। ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পুলিশ ও সেনাবাহিনী কর্তৃক পদত্যাগের নির্দেশ দেওয়ার দাবিটি সঠিক নয় বরং চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, সেখানে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার পুরোনো দুইটি ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করা হয়েছে।

ভিডিও যাচাই ০১

প্রথম ভিডিও ক্লিপের বিষয়ে জানতে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ‘maksud un nabi’ নামক ইউটিউব চ্যানেলে ২১৪ সালের ২৬ জুন “Narayanganj asp Bashir disclose Shamim Osman” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়।

Comparison: Rumor Scanner

ভিডিও থেকে জানা যায়, এটি ২০১৪ সালের ২৬ জুন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে উপনির্বাচন চলাকালীন সময়ের ভিডিও। নির্বাচনের দিন নারায়ণগঞ্জের তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. বশিরউদ্দীন সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে তার সাথে অশোভন আচরণ এবং তাকে হুমকি প্রদানের অভিযোগ তোলেন।

উক্ত ঘটনা নিয়ে সেসময় প্রথম আলো’র ওয়েবসাইটেও প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

ভিডিও যাচাই ০২

রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে বেসরকারি মূলধারার টিভি চ্যানেল সময় টিভি’র ইউটিউব চ্যানেলে গত ৪ সেপ্টেম্বর “সফলভাবে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করছে পুলিশ: আইজিপি” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Comparison: Rumor Scanner

উক্ত প্রতিবেদনে প্রচারিত পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন এর বক্তব্যের সাথে আলোচিত ভিডিওতে প্রচারিত আব্দুল্লাহ আল-মামুন বক্তব্যের হবহু মিল পাওয়া যায়। 

পরবর্তীতে কি-ওয়ার্ড সার্চে একই দিনে দেশিয় সংবাদ সংস্থা বাসস এর ওয়েবসাইটে “আগামী দিনেও যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুত পুলিশ : আইজিপি” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন সিনিয়র সচিবের পদমর্যাদা পেয়ে গত ৪ সেপ্টেম্বর দুপুরে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নোত্তরে এসব কথা বলেন।

অর্থাৎ, আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা এই দুই ভিডিও ক্লিপের কোনটিতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পুলিশ ও সেনাবাহিনী পদত্যাগের নির্দেশ দেওয়ার কোনো তথ্য জানানো হয়নি।

মূলত, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে  সামনে রেখে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করার দাবিতে বিএনপি-জামায়াতসহ আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে আন্দোলন করে আসছে। এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ধরনের তথ্য প্রচার প্রচার হয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি ‘হাসিনার কথা শুনছে না পুলিশ-সেনাবাহিনী, দ্রুত পদত্যাগের নির্দেশ’ শীর্ষক থাম্বনেইল এবং হাসিনাকে পদত্যাগের নির্দেশ দিলো পুলিশ ও সেনাবাহিনী, ভয়ে আ.লীগ শীর্ষক শিরোনামে ইউটিউবে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, উক্ত দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে অধিক ভিউ পাবার আশায় পুরোনো ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে তাতে চটকদার থাম্বনেইল ও শিরোনাম ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া, গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে আলোচিত দাবির সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, পূর্বেও চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে বিভিন্ন ভুয়া তথ্য প্রচারের প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

সুতরাং, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পুলিশ ও সেনাবাহিনী পদত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img