সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগকে অস্বীকার করেছেন শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুক ও ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটকে ছড়িয়ে পড়েছে।
ফেসবুক ও টিকটকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগকে অস্বীকার করেননি বরং একটি ভিডিওর খন্ডিত অংশ উদ্ধৃত করার মাধ্যমে ছাত্রলীগ আওয়ামীলীগের কেউ না দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও টিকটকে প্রচার করা হচ্ছে।
কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, দেশের মূলধারার গণমাধ্যম ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৯ সালের ১৯ অক্টোবর ২০১৯ তারিখে “সব নির্দেশ কেনো প্রধানমন্ত্রীকেই দিতে হবে? ছাত্রলীগ আওয়ামীলীগের কেউ না” শীর্ষক শিরোনামের একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
১০ মিনিট ৩৮ সেকেন্ডের উক্ত ভিডিওটির ৩ মিনিট অংশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠার ইতিহাস তুলে ধরেন। উক্ত সংবাদে তিনি জানান, বাংলাদেশ আওয়ামী-লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আওয়ামীলীগের “অঙ্গসংগঠন” না। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী-লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী “অঙ্গসংগঠন” বলে কিছু নেই, যা আছে তা হল “সহযোগী সংগঠন” এবং “ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন”।
এছাড়াও, আওয়ামীলীগের সাথে যুক্ত সংগঠনের তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সংগঠনগুলোকে সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন হিসেবে বলা হয়েছে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে আওয়ামীলীগের ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন হিসেবে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, সেনা সমর্থিত তত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ২০০৮ সালে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন ব্যবস্থা চালু করার সময় গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে সংশোধনী আনা হয়েছিল।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী কোন অঙ্গ সংগঠন থাকবে না। ফলে অন্য সংগঠনগুলোকে সহযোগী সংগঠন হিসেবে দেখানো হয়।
সে অনুযায়ী আওয়ামী লীগ কাজ কলমে ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ এবং পেশাজীবী সংগঠনকে দেখিয়ে থাকে।
মূলত, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাথে যুক্ত সংগঠনের ব্যাপারে ধারণা দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন ছাত্রলীগ আওয়ামীলীগের অঙ্গসংগঠন নয়। অঙ্গসংগঠন বলে কিছু নেই। আছে সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন। কিন্তু ভিডিওটির খন্ডিত অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগকে অস্বীকার করেছেন দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, এই প্রতিবেদন যখন লেখা হচ্ছিল কাকতালীয়ভাবে ঠিক তখনই ছাত্রলীগ আয়োজিত শোক সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উক্ত অনুষ্ঠানে তিনি ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করে বক্তব্য প্রদান করেন।
বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আগেই বলেছি যে, ছাত্রলীগ সব কাজে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। এই অগ্রগামী সংগঠন হিসেবে সবার আগে মাঠে নামার নির্দেশ দিয়েছে ছাত্রলীগ। তারা যখন মাঠে নেমেছে তার সঙ্গে অন্য সংগঠনগুলোও কিন্তু নেমেছে।
ছাত্রলীগকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি আরও বলেন, যখন ধান কাটার লোক পাওয়া যাচ্ছিল না তখন খবর দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রলীগের ছেলেমেয়েরা ধান কাটতে মাঠে নেমে গেছে এবং কৃষকের ঘরে ধান পৌঁছে দিয়ে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। করোনার সময় যেখানে লাশ ফেলে আত্মীয় পালিয়ে যায় সেখানে আমাদের ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। চিকিৎসার ব্যবস্থা, অক্সিজেনের ব্যবস্থা, রোজার মাসে খাবার ব্যবস্থা সব আমাদের ছাত্রলীগ করেছে।
সুতরাং, প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগকে অস্বীকার করেছেন দাবিটি মিথ্যা।