ভারতে বিমানে মুসলিম ব্যক্তিকে হেনস্তাকারী হিন্দু ধর্মাবলম্বী নন, তিনিও মুসলিম

সম্প্রতি, বিমানের ভেতর একজন দাঁড়ি-টুপিওয়ালা মুসলিম যাত্রীকে অপর আরেক যাত্রীর থাপ্পড় মারার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। ‍উক্ত ভিডিওটি প্রচার করে অনেকেই দাবি করছেন, মুসলিম ওই ব্যক্তিকে হেনস্তাকারী অপরযাত্রী হিন্দু ধর্মাবলম্বী।  

ফেসবুকে প্রচারিত এমন পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বিমানের ভেতর হিন্দু ব্যক্তির দ্বারা মুসলিম সহযাত্রীর হেনস্তার শিকার হওয়ার দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, দাঁড়ি-টুপিওয়ালা ওই মুসলিম যাত্রীকে হেনস্তাকারী হিন্দু নন; তিনিও মুসলিম। হেনস্তাকারী ওই ব্যক্তির নাম হাফিজুল রহমান।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যালোচনা করে রিউমর স্ক্যানার। এতে ভিডিওটিতে উপস্থিত অন্যান্য যাত্রীদের এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় হিন্দি ভাষায় কথা বলতে শোনা যায়। তাদের অনেককেই ওই মুসলিম ব্যক্তিকে থাপ্পড় মারার প্রতিবাদ করতে দেখা যায়। 

পরবর্তীতে প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে ভারতীয় গণমাধ্যম NDTV এর ওয়েবসাইটে গত ২ আগস্ট Man Slapped By Co-Passenger On IndiGo Flight Goes Missing, Claims Family শিরোনামে ওই ঘটনায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: NDTV

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ভারতীয় বিমানসংস্থা ইন্ডিগো-এর মুম্বাই-কলকাতা-আসামগামী বিমান 6E-2387-তে উক্ত ঘটনাটি ঘটে। হেনস্তার শিকার ব্যক্তির নাম হুসেন আহমেদ মজুমদার। তিনি ভারতের আসাম রাজ্যের কাছাড় জেলার নিবাসী। তিনি মুম্বাই থেকে বিমানে কাছাড় জেলার সদর শিলচরে যাচ্ছিলেন। যাত্রাকালে তার প্যানিক অ্যাটাক হলে বিমানবালারা তাকে বিমান থেকে বের হতে সহায়তা করতে আসেন। এমন সময় অভিযুক্ত ব্যক্তি হুসেনকে থাপ্পড় মারেন। 

প্রতিবেদনটিতে দাবি করা হয়, হুসেনকে হেনস্তাকারী ওই ব্যক্তির নাম হাফিজুল রহমান। বিমানটি কলকাতায় ল্যান্ড করলে হাফিজুল রহমান নামের ওই ব্যক্তিকে বিমান কর্তৃপক্ষ পুলিশে দেন বলেও প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়। তবে তাকে পরবর্তীতে ছেড়ে দেওয়া হয় বলেও জানা যায়। কিন্তু উক্ত ঘটনার পর থেকে হেনস্তার শিকার হুসেন আহমেদ মজুমদার নিখোঁজ রয়েছেন বলে প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়। কলকাতায় নেমে তার শিলচরের ফ্লাইট ধরার কথা থাকলেও তিনি সেটি মিস করেন। তার ফোন বন্ধ থাকায় ভিডিওটি দেখে শিলচর বিমানবন্দরে তাকে রিসিভ করতে যাওয়া পরিবারের সদস্যরা তার সাথে আর যোগাযো করতে পারেনা বলেও প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়। 

তবে পরবর্তীতে তাকে আসামের বারপেটা রেলস্টেশনে খুঁজে পাওয়া যায়। যা কলকাতা থেকে প্রায় ৮০০ কিলোমিটার দূরে এবং তার গন্তব্য শিলচর থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। 

পরবর্তীতে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে এ ঘটনায় কলকাতার বিধাননগর সিটি পুলিশের ফেসবুক পেজে প্রচারিত একটি বিবৃতিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Facebook 

বিবৃতিতেও বলা হয়, গত ১ আগস্ট ইন্ডিগো বিমানে হওয়া হেনস্তার ঘটনায় অভিযুক্ত ও হেনস্তার শিকার উভয় ব্যক্তিই মুসলিম। অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম হাফিজুল রহমান।

এ ঘটনায় হেনস্তাকারী ব্যক্তিকে ইন্ডিগো বিমান সংস্থার সকল প্রকার ফ্লাইটে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে তাদের এক্স অ্যাকাউন্টে একটি বিবৃতি প্রচার করা হয়।  

Screenshot: X

সুতরাং, ভারতে বিমানের ভেতর মুসলিম ব্যক্তিকে হিন্দু ব্যক্তির থাপ্পড় মারার দাবিটি মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img