সেনাবাহিনী ও বিজিবির ভয়ে খাগড়াছড়ির মানুষের পালিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দাবিতে এআই ভিডিও প্রচার

গত ২৭ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি এক কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদে অবরোধের মধ্যে উত্তেজনা ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে ১৪৪ ধারা জারি করে জেলা প্রশাসন। জুম্ম ছাত্র-জনতার সাথে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে খাগড়াছড়িতে অন্তত ৩ জন নিহতও হন। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি অনলাইনে একটি কথিত সংবাদ প্রতিবেদনের ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, ‘সেনাবাহিনী ও বিজিবির কারণে খাগড়াছড়ির মানুষের জীবন দুর্বিষহ। তারা এখন প্রাণ বাঁচাতে নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে ছুটছে।’ এছাড়াও, ভিডিওতে লেখা হয়েছে, ‘ভোর রাত থেকে পালিয়ে যাচ্ছে খাগড়াছড়ির লোক’।

অর্থাৎ, দাবি করা হয়েছে, প্রচারিত ভিডিওটি সেনাবাহিনী ও বিজিবির ভয়ে ভোর রাত থেকে খাগড়াছড়ির মানুষের পালিয়ে যাওয়ার দৃশ্যের।

উল্লেখ্য যে, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে মূলধারার গণমাধ্যম ‘চ্যানেল২৪’ এর লোগো দেখা যায়।

এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়া অবধি আলোচিত দাবিতে প্রচারিত উপরোল্লিখিত ভিডিওটি ১৩ লক্ষেরও অধিক বার দেখা হয়েছে এবং ১২ হাজারেরও অধিক পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওটিতে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।

এরূপ দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

এরূপ দাবিতে টিকটকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ভিডিওটি সেনাবাহিনী ও বিজিবির ভয়ে খাগড়াছড়ির মানুষের পালিয়ে যাওয়ার দৃশ্যের নয় বরং, এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি ভুয়া ভিডিও। এছাড়া, চ্যানেল২৪ও আলোচিত দাবিতে কোনো সংবাদ বা ভিডিও প্রচার করেনি।

আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে তাতে মূলধারার গণমাধ্যম ‘চ্যানেল২৪’ এর লোগো পাওয়া যায়। এরই সূত্র ধরে ‘চ্যানেল২৪’ এর ফেসবুক পেজ, ইউটিউব চ্যানেলওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ করলে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

এছাড়াও, ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে কোনো বিশ্বস্ত গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রেও এর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে প্রদর্শিত মানুষ, মানুষের অঙ্গভঙ্গি ও পারিপার্শ্বিক অবস্থাতেও অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয় যা সাধারণত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি কনটেন্টে দেখা যায়।

Screenshot of Claimed Video

এছাড়া, ভিডিওটি পর্যবেক্ষণে ভিডিওটির নিচের ডান কোণে ‘Veo’ নামের একটি জলছাপ ও এআই দিয়ে তৈরি কনটেন্টের লেবেল দেখতে পাওয়া যায়। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ‘Veo’ গুগলের একটি উন্নত এআই টুল, যা টেক্সট প্রম্পট থেকে ৮ সেকেন্ডের বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে সক্ষম। এই ভিডিওটির দৈর্ঘ্যও ৮ সেকেন্ড।

Collage: Rumor Scanner/DeepFake-O-Meter

এ বিষয়ে অধিকতর নিশ্চিত হতে এআই ও ডিপফেক কনটেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্ম ‘ডিপফেক ও মিটার’ এ আলোচিত ভিডিওটি বিশ্লেষণ করলে এটি ভুয়া হওয়ার সম্ভাবনা বেশি দেখা যায়। প্ল্যাটফর্মটির ‘AVSRDD’, ‘LIPINC’ ও ‘TALL’ ডিটেক্টরের বিশ্লেষণমতে ভিডিওটি ভুয়া বা এআই তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা যথাক্রমে ৯৯.৯ শতাংশ, ১০০ শতাংশ ও ৯৯.৪ শতাংশ। এছাড়াও, এআই কনটেন্ট শনাক্তকারী আরেক প্ল্যাটফর্ম ‘হাইভ মডারেশন’ এর বিশ্লেষণমতে আলোচিত ভিডিওটি এআই দিয়ে তৈরি কনটেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা ৯৫.১ শতাংশ। 

এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে প্রচারিত ভিডিওটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির সাহায্যে তৈরি করা হয়েছে।

সুতরাং, এআই দিয়ে তৈরি একটি ভিডিওকে মূলধারার গণমাধ্যম ‘চ্যানেল২৪’ এ প্রচারিত সেনাবাহিনী ও বিজিবির ভয়ে খাগড়াছড়ির মানুষের পালিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দাবি করে অনলাইনে প্রচার করা হয়েছে, যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img