সম্প্রতি “ফিফা কর্তৃক পেলের পায়ের পাতাগুলো জাদুঘরে রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে এবং পেলের পরিবারও এ বিষয়ে অনুমতি দিয়েছে” শীর্ষক একটি দাবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত হচ্ছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এরকম কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ফিফা কর্তৃক পেলের পায়ের পাতাগুলো জাদুঘরে রাখার সিদ্ধান্ত শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয় বরং নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে।
ব্রাজিলের কিংবদন্তি ফুটবলার পেলে গত ২৯ ডিসেম্বর ব্রাজিলের সাও পাওলোর আলবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতালে মারা যান। পেলের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাঁর বিষয়ে নানা তথ্য শেয়ার করছেন মানুষ। তার মধ্যেই “ফিফা কর্তৃক পেলের পায়ের পাতাগুলো জাদুঘরে রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।” শীর্ষক একটি তথ্য ছড়িয়ে পড়তে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।
অনুসন্ধান যেভাবে
ফিফা কর্তৃক পেলের পায়ের পাতাগুলো জাদুঘরে রাখার সিদ্ধান্ত শীর্ষক দাবি ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলোতে উক্ত তথ্যের সূত্র হিসেবে ‘TNT SPORTS BRAZIL’ এর নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে অনুসন্ধানে আর্জেন্টাইন সংবাদমাধ্যম ‘TNT SPORTS’ এর ব্রাজিল শাখা ‘TNT SPORTS BRASIL’ এর ওয়েবসাইটে এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এমনকি সংবাদমাধ্যমটির টুইটার, ইন্সটাগ্রাম, ইউটিউব এবং ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এ বিষয়ে কোনো তথ্য মেলেনি।
পাশাপাশি ফিফার ওয়েবসাইটেও এ বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
আন্তর্জাতিক কোনো গণমাধ্যমেও এ সংক্রান্ত কোনো খবর প্রকাশিত হয়নি।
অর্থাৎ, দাবিটি সঠিক নয়।
গুজবের সূত্রপাত কীভাবে?
ফিফা কর্তৃক পেলের পায়ের পাতাগুলো জাদুঘরে রাখার সিদ্ধান্ত শীর্ষক দাবি ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলোতে যে ছবি সংযুক্ত করা হয়েছে সেখানে ‘Sarcasm Football Nepal’ নামক একটি পেজের নাম রয়েছে।
উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে ‘Sarcasm Football Nepa’ নামক পেজে গত ৩০ ডিসেম্বর প্রকাশিত আলোচিত পোস্টটি (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।
পরবর্তীতে এ বিষয়ে জানতে উক্ত পেজের এডমিনের সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। তবে তিনি কোনো সদুত্তর দেননি।
পেলের পায়ের পাতার ছবিটি কখন তোলা হয়েছে?
ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলোতে থাকা ছবিতে একটি পায়ের পাতার ছবি দেখতে পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে টুইটারে মার্কিন ফটোগ্রাফার প্যাট্রিক উইটি’র (Patrick Witty) অ্যাকাউন্টে গত ৩০ ডিসেম্বর প্রকাশিত আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়নি।
ছবিটি শেয়ার করে প্যাট্রিক লিখেছেন, অ্যানি লিবোভিৎজ (Annie Leibovitz) ১৯৮১ সালে পেলের পায়ের ছবিটি তোলেন। তিনি পেলেকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে তার ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টে কয়েক বছর আগে ছবিটি পোস্ট করেছিলেন।
পরবর্তীতে আমেরিকান পোট্রেট ফটোগ্রাফার অ্যানি লিবোভিৎজ’র ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ২০২০ সালের ২৩ অক্টোবর প্রকাশিত আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
তার পোস্টেও ছবিটি ১৯৮১ সালে তোলা বলে উল্লেখ রয়েছে।
অর্থাৎ, পায়ের ছবিটি পেলের-ই তবে ছবিটি তোলা হয়েছে ১৯৮১ সালে।
মূলত, পেলে গত ২৯ ডিসেম্বর ব্রাজিলের সাও পাওলোর আলবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতালে মারা যান। পেলের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাঁর বিষয়ে নানা তথ্য শেয়ার করছেন মানুষ। তার মধ্যেই “ফিফা কর্তৃক পেলের পায়ের পাতাগুলো জাদুঘরে রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।” শীর্ষক একটি তথ্য ছড়িয়ে পড়েছে। তবে অনুসন্ধানে ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলোতে সূত্র হিসেবে উল্লিখিত TNT SPORTS BRASIL এর ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, ফিফার ওয়েবসাইটেও এ বিষয়ে কোনো তথ্য নেই।
উল্লেখ্য, গত ৩ ডিসেম্বর পেলের মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে পরদিনই ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
প্রসঙ্গত, ‘পেলের সময় অফসাইডের নিয়ম ছিল না’ শীর্ষক গুজব ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে এ বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, ফিফা কর্তৃক পেলের পায়ের পাতাগুলো জাদুঘরে রাখার সিদ্ধান্ত শীর্ষক দাবিটি নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।