সম্প্রতি ”পাসপোর্ট সূচকে ১১২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১০৪তম’ এমন একটি তথ্য দেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
দেশীয় মূলধারার সংবাদমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন প্রথম আলো প্রিন্ট এডিশন, যুগান্তর অনলাইন (আর্কাইভ), সমকাল অনলাইন (আর্কাইভ), দ্য ডেইলি স্টার বাংলা অনলাইন (আর্কাইভ), ইনকিলাব অনলাইন (আর্কাইভ), News24 অনলাইন (আর্কাইভ), বাংলাভিশন অনলাইন (আর্কাইভ), ঢাকা টাইমস, এনটিভি, বাংলাদেশ টাইমস, যায়যায়দিন, চ্যানেল২৪, সংবাদ প্রকাশ, বাংলাদেশ প্রতিদিন এবং জুম বাংলা।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, পাসপোর্ট সূচকে ১১২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১০৪তম বলে যে তথ্যটি প্রচার হচ্ছে তা সঠিক নয় বরং ১৯৯ টি দেশের র্যাংকিংয়ে কিছু দেশ একই স্থান পাওয়ায় ১১২ পর্যন্ত ক্রমধারা হয়েছে, সেখানে ১০৪তম বাংলাদেশ।
গত ১৯ জুলাই জাতীয় দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকারবাংলা অনলাইন সংস্করণে “শক্তিশালী পাসপোর্ট তালিকায় শ্রীলঙ্কার চেয়ে পিছিয়ে বাংলাদেশ” শিরোনামে (আর্কাইভ) একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে ‘হেনলি পাসপোর্ট সূচক: কিউ৩ ২০২২ গ্লোবাল র্যাঙ্কিং’ এর বরাত দিয়ে উল্লেখ করা হয়, “মোট ১১২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১০৪তম স্থানে রয়েছে। ”
একই সূত্রের বরাত দিয়ে পরবর্তীতে মূল ধারার অন্যান্য গণমাধ্যম এবং ফেসবুকের বিভিন্ন পেজ ও একাউন্টেও একই তথ্য প্রকাশ করতে দেখা যায়।
জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো‘র গত ২১ জুলাইয়ের প্রিন্ট সংস্করণে একই বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনের শিরোনামেও একই তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনের শুরুতে শিরোনামের সাথে মিল রেখে ১১২ টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৪তম উল্লেখ করা হলেও পরের প্যারার শেষ অংশে উল্লেখ করা হয়, “সর্বশেষ প্রকাশিত এ পাসপোর্ট সূচকে ১১২টি ক্রমের মধ্যে ১০৪তম অবস্থানে বাংলাদেশের সঙ্গী কসোভা ও লিবিয়া“।
সংবাদমাধ্যমে এই তথ্যের উল্লেখ করা সূত্র ধরে যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান Henley & Partners এর ওয়েবসাইটে গিয়ে Global Passport Ranking শিরোনামে পাসপোর্ট বিষয়ে একটি পরিসংখ্যান খুঁজে পাওয়া যায়। গত ১৯ জুলাই প্রকাশিত এই পরিসংখ্যানের বিষয়ে সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে,” সূচকে ১৯৯টি ভিন্ন পাসপোর্ট এবং ২২৭টি ভিন্ন ভ্রমণ গন্তব্য রয়েছে।”
কিন্তু ওয়েবসাইটে প্রকাশিত পরিসংখ্যানে ১১২ পর্যন্ত ক্রমধারা দেখা যায়। অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৯৯টি দেশের মধ্যে অনেক দেশকেই একই অবস্থান দেওয়া হয়েছে। যেমন, দ্বিতীয় অবস্থানে রাখা হয়েছে দুইটি দেশকে (সিঙ্গাপুর ও দক্ষিণ কোরিয়া)। একইভাবে ১০৪তম অবস্থানে থাকা বাংলাদেশের সাথে যৌথভাবে রয়েছে কসোভা ও লিবিয়া।
পরিসংখ্যানে দেশের পাশে শুধু Rank এবং Visa free score এর ঘর ছিল। দেশগুলোর কোনো ক্রমিক সংখ্যা ছিল না। তবে অনেক গণমাধ্যমই উক্ত সূচকের অবস্থানগত ক্রমধারাকে মোট ক্রমিক সংখ্যা(দেশের) ধরে প্রতিবেদন প্রকশ করায় বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়।
মূলত, হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্সের এই বৈশ্বিক পাসপোর্ট সূচকে ১১২টি দেশ নয়, বরং ১৯৯টি দেশের পাসপোর্টের মধ্যে র্যাংকিং করা হয়েছে। কিছু দেশকে যৌথভাবে একই অবস্থানে রাখায় মোট ১১২টি ক্রম দেখা যায়। যার মধ্যে বাংলাদেশ একাধিক দেশসহ ১০৪তম ক্রমে রয়েছে।
উল্লেখ্য, গেল ১৭ বছর ধরে পাসপোর্ট নিয়ে গবেষণা ও সূচক প্রকাশ করে আসছে হেনলি অ্যান্ড পার্টনারস। কোন দেশের পাসপোর্ট দিয়ে আগাম ভিসা ছাড়া কত দেশে যাওয়া যায়, তার ওপর ভিত্তি করে এ সূচক প্রকাশ করা হয়। বছরজুড়েই এটি হালনাগাদ করা হয়। তিন মাসের ব্যবধানে এবারের পরিসংখ্যানটি প্রকাশ করা হয়েছে।
সুতরাং, ‘পাসপোর্ট সূচকে ১১২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১০৪তম’ দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি আংশিক মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
Henley & Partners : Global Passport Ranking