ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক খণ্ডকালীন শিক্ষক আসিফ মাহতাব উৎস গ্রেফতার হননি 

সম্প্রতি, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিলোসফির সদ্য সাবেক খণ্ডকালীন শিক্ষক আসিফ মাহতাব উৎসের সপ্তম শ্রেণীর পাঠ্যবইয়ের ‘মানুষে মানুষে সাদৃশ্য ও ভিন্নতা’ অধ্যায়ের  ‘শরীফার গল্প’ অংশের পাতা ছিঁড়ে প্রতিবাদ জানানোর ঘটনায় ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম ইউটিউবে “প্রকাশ্যে বই ছিড়ে ফেলায় আসিফ মাহাতাব গ্রেপ্তার সমকামীতা জায়েজ করলো Bd latest news” শীর্ষক শিরোনাম এবং “প্রকাশ্যে বই ছিড়ে আসিফ মাহতাব গ্রেফতার” শীর্ষক থাম্বনেইলে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।  

উক্ত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ট্রান্সজেন্ডার ইস্যুতে প্রতিবাদ জানাতে প্রকাশ্যে সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের পৃষ্ঠা ছিঁড়ে ফেলার ঘটনায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিলোসফির সদ্য সাবেক খণ্ডকালীন শিক্ষক আসিফ মাহতাব উৎস গ্রেফতার হননি বরং তিনি তার সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্টে সরব থাকার পাশাপাশি গণমাধ্যমেও নিয়মিত কথা বলছেন।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটিতে আসিফ মাহতাব এবং গণ অধিকার পরিষদের একাংশের নেতা  মোঃ তারেক রহমানের একটি ভিডিও দেখানো হয়। ভিডিওতে আসিফ মাহতাবকে দেখা গেলেও তাকে গ্রেফতারের কোনো দৃশ্য দেখা যায়নি। ভিডিওতে দাবিটি প্রসঙ্গে চ্যানেলটির উপস্থাপক বলেন, ‘আপনারা আশ্চর্য হবেন ৯৬ ভাগ মুসলমানের দেশে এই সমকামিতা প্রমাণ করার জন্য জায়েজ করার জন্য কিভাবে উঠেপড়ে লেগেছে ব্র্যাক প্রতিষ্ঠান। তাদের এত সাহস হল কোথা থেকে…।”

ভিডিওতে থাকা দাবিটি নিয়ে অনুসন্ধানে মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে এরূপ কোনো দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি।

পরবর্তীতে উক্ত ভিডিওটিতে দেখানো দুইটি ভিডিও ক্লিপের বিষয়ে পৃথকভাবে অনুসন্ধান চালায় রিউমর স্ক্যানার টিম।

ভিডিও যাচাই – ০১ 

আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওতে যুক্ত আসিফ মাহতাবের ভিডিওটির অনুসন্ধানে কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে আসিফ মাহতাবের ফেসবুক পেজে গত ১৯  জানুয়ারি “নতুন ট্রান্সজেন্ডার আইন এবং ক্লাস ৭ এর বাচ্চাদের পাঠ্য বইয়ে ট্রান্সজেন্ডার গল্প ঢুকিয়ে তাদের মগজধোলাই করে ট্রান্সজেন্ডার বানানোর নতুন সিলেবা।” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

Video Comparison : Rumor Scanner

এই ভিডিওটির একটি অংশই আলোচিত ভিডিওটিতে যুক্ত করা হয়েছে। 

ভিডিওতে আসিফ মাহতাবকে রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে জাতীয় শিক্ষক ফোরাম কর্তৃক আয়োজিত‘বর্তমান কারিকুলামে নতুন পাঠ্যপুস্তক : বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক সেমিনারে সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে ট্রান্সজেন্ডারের গল্প ঢুকিয়ে শিক্ষার্থীদের মগজধোলাই করা হচ্ছে এমন অভিযোগ করে পাঠ্যবই থেকে ‘শরীফ থেকে শরীফা’ হওয়ার গল্পের পাতা ছিঁড়ে ফেলতে দেখা যায়। তবে ভিডিওর কোথায় তাকে গ্রেফতারের কোনো দৃশ্য দেখা যায়নি। 

ভিডিও যাচাই – ২ 

দ্বিতীয় ভিডিওটির অনুসন্ধানে কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ‘তারেক/ গণ অধিকার পরিষদ’ নামক ফেসবুক পেজে গত ২২ জানুয়ারি “স’ ‘ম ‘কা মি’ ‘তা এর প্রতিবাদ করায় চাকরি হারাচ্ছেন শিক্ষক আসিফ মাহতাব।” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

Video Comparison : Rumor Scanner 

উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর মিল খুঁজে পাওয়া যায়। এই ভিডিওটি সম্পাদনার মাধ্যমে আলোচিত ভিডিওটিতে যুক্ত করা হয়েছে। 

ভিডিওতে গণ অধিকার পরিষদের একাংশের নেতা মোঃ তারেক রহমান আসিফ মাহতাবকে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চাকরিচ্যুত করার বিষয়ে নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করতে দেখা যায়। 

অর্থাৎ আলোচিত ভিডিওটিতে আসিফ মাহতাবকে গ্রেফতারের দাবি করা হলেও ভিডিওর পুরো অংশে দাবির পক্ষে কোনো তথ্য কিংবা দৃশ্য দেখা যায়নি।

পাশাপাশি, ভিডিওটি প্রচারের পর অর্থাৎ ২৩ জানুয়ারি শিক্ষক আসিফ মাহতাব অনলাইন সংবাদমাধ্যম ফেস দ্যা পিপলস পিপলের ফেসবুকে পেজে প্রচারিত লাইভ টকশোতে অংশ নিয়েছেন।

অর্থাৎ উপরোক্ত তথ্য উপাত্ত থেকে এটি স্পষ্ট যে আলোচিত শিক্ষক আসিফ মাহতাব গ্রেফতার হননি।

মূলত, গত ১৯ জানুয়ারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিলোসফির খণ্ডকালীন শিক্ষক আসিফ মাহতাব রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে জাতীয় শিক্ষক ফোরাম কর্তৃক আয়োজিত‘বর্তমান কারিকুলামে নতুন পাঠ্যপুস্তক : বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক সেমিনারে সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে ট্রান্সজেন্ডারের গল্প ঢুকিয়ে শিক্ষার্থীদের মগজধোলাই করা হচ্ছে এমন অভিযোগ করে উক্ত পাঠ্যবইয়ের ‘শরীফ থেকে শরীফা’ হওয়ার গল্পের পাতা ছিঁড়ে প্রতিবাদ জানায়। উক্ত ঘটনার রেশ ধরে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকে চাকরিচ্যুত করার অভিযোগ উঠে। এই বিষয়টিকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে বিভিন্ন ব্যক্তিদের যুক্তি-পাল্টা যুক্তি। এরই ধারাবাহিকতায় ইন্টারনেটে ‘প্রকাশ্যে বই ছিড়ে আসিফ মাহতাব গ্রেফতার’ শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে। তবে রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে যে আলোচিত দাবিটি সঠিক নয়। আলোচিত শিক্ষক আসিফ মাহতাব তার ফেসবুক পেজে নিয়মিত সক্রিয় থেকে বিভিন্ন মতামত ব্যক্ত করছেন এবং গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারগুলো শেয়ার করছেন। এছাড়া, তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা কিংবা তাকে গ্রেফতার করার কোনো তথ্য গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়নি।

 সুতরাং, ট্রান্সজেন্ডার ইস্যুতে প্রকাশ্যে পাঠ্যবইয়ের পৃষ্ঠা ছিঁড়ে ফেলার ঘটনায়  আলোচিত শিক্ষক আসিফ মাহতাব উৎসকে  গ্রেফতার করার তথ্যটি  মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

RS Team
Rumor Scanner Fact-Check Team
- Advertisment -spot_img
spot_img
spot_img