পাকিস্তানে ভারতীয় যুদ্ধবিমানের ‘জানাজার’ দৃশ্য দাবিতে পুরোনো ও ভিন্ন ঘটনার ভিডিও প্রচার

গত ৬ মে পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরে একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। ভারত দাবি করে, ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে এক অভিযানে তারা জইশ-ই-মোহাম্মদ ও লস্কর-ই-তইয়েবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকটি স্থাপনা লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায়। ভারতের ভাষ্য, কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর গত এপ্রিলের হামলার জবাবেই এই অভিযান। তবে পাকিস্তান দাবি করেছে, হামলাগুলো বেসামরিক এলাকায়, এমনকি মসজিদেও আঘাত হানে। এতে বেসামরিক প্রাণহানি ও আহতের ঘটনা ঘটেছে বলে ইসলামাবাদ দাবি করেছে। পাকিস্তান আরও জানায়, তারা ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে।

এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, পাকিস্তানে ভারতীয় যুদ্ধবিমানের “জানাজা” অনুষ্ঠিত হচ্ছে দাবিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, আগুনে জ্বলতে থাকা একটি বিমানে একজন ব্যক্তি বালি ছিটিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছেন। 

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন: এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে

ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ভিডিওটি পাকিস্তানে ভারতীয় যুদ্ধবিমানের “জানাজা” দেওয়ার কোনো ঘটনার নয়। বরং এটি গত এপ্রিল মাসে কারিগরি ত্রুটির কারণে পাকিস্তান এয়ার ফোর্সের একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনার দৃশ্য।

এই বিষয়ে অনুসন্ধানে, জর্ডানভিত্তিক গণমাধ্যম রোয়া নিউজের ইউটিউব চ্যানেলে গত ১৫ এপ্রিল প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটির সঙ্গে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর উল্লেখযোগ্য মিল পাওয়া যায়। উভয় ভিডিওতেই আগুন লাগা বিমানের পাশে হালকা গোলাপি পাঞ্জাবি ও সাদা পাগড়ি পরিহিত এক ব্যক্তিকে দেখা যায়। এছাড়া বিমানের গঠন এবং আশপাশের পরিবেশেও মিল পরিলক্ষিত হয়।

ভিডিওটির বর্ণনা অনুযায়ী, পাকিস্তানের একটি মিরাজ-৫ যুদ্ধবিমান নিয়মিত অভিযানের সময় কারিগরি ত্রুটির কারণে বিধ্বস্ত হয়। তবে দুর্ঘটনার আগে দুই পাইলটই সফলভাবে ইজেক্ট করে নিরাপদে উদ্ধার হন।

একই দিনে ‘Shan E Islam’ নামের একটি ফেসবুক পেজেও ভিডিওটি পাওয়া যায়। পোস্টটির উর্দু ভাষার ক্যাপশন অনুযায়ী, ঘটনাটি পাকিস্তানের ভেহারি জেলার উপশহর রত্তা টিব্বার কাছে ঘটেছে।

Comparison: Rumor Scanner.

এছাড়া, ১৫ এপ্রিল ‘Muhammad Ajmal’ নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে ওই ঘটনা নিয়ে প্রকাশিত আরেকটি ভিডিওতে আগুনে জ্বলতে থাকা বিমানে পাঞ্জাবি ও পাগড়ি পরা ওই ব্যক্তির বালি ছিটানোর দৃশ্যটি দেখা যায়।

Screenshot: Facebook.


পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যম ডন-এ ১৬ এপ্রিল প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাহাওয়ালপুরের ভেহারির উপশহর রত্তা টিব্বা এলাকায় পাকিস্তান এয়ার ফোর্সের একটি প্রশিক্ষণ বিমান কারিগরি ত্রুটির কারণে বিধ্বস্ত হয়। প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ছবির সাথেও আলোচিত ভিডিওতে দেখা যাওয়া বিমানের মিল পাওয়া যায়।

সুতরাং, পুরোনো ও ভিন্ন ঘটনার একটি ভিডিওকে পাকিস্তানে ভারতীয় যুদ্ধবিমানের “জানাজা” দেওয়ার দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img