গত জুলাই মাসের শুরুতে বাংলাদেশে শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরির কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। এই আন্দোলন পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে প্রসারিত হয়। গত ২৮ জুলাই, ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের হেফাজতে থাকা অবস্থায় আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ক একটি ভিডিও বার্তায় আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। পরে ২ আগস্ট তারা জানান ওই বিবৃতি তারা স্বেচ্ছায় প্রদান করেননি।
এই পরিস্থিতিতে কোটা আন্দোলনের তিন সমন্বয়ক পাকিস্তান হাইকমিশনের সহযোগিতা চেয়েছেন এবং তারাও সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে দাবিতে পাকিস্তান হাইকমিশনের একটি কথিত বিজ্ঞপ্তি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে।
দাবিকৃত বিজ্ঞপ্তিটিতে বলা হয়েছে, “ঢাকায় পাকিস্তান কনস্যুলেট বাংলাদেশে চলমান ছাত্র আন্দোলন নিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছে। কনস্যুলেট জানিয়েছে যে আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত তিনজন ছাত্র সমন্বয়কারী তাদের সাহায্য চেয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে, কনস্যুলেট আশ্বস্ত করেছে যে তারা প্রয়োজন অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের সব ধরনের সহায়তা করতে প্রস্তুত। কনস্যুলেট আরও বলেছে যে তারা যেকোনো সময় সহায়তার জন্য প্রস্তুত আছে এবং সাহায্যের প্রয়োজন হলে শিক্ষার্থীদের যোগাযোগ করতে উৎসাহিত করেছে।”
উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, কোটা আন্দোলনের তিন সমন্বয়ক পাকিস্তান হাইকমিশনের সহযোগিতা চেয়েছে এবং তারাও সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে দাবিতে ঢাকার পাকিস্তান হাইকমিশন কোনো বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেনি বরং হাইকমিশন প্রকাশিত ভিন্ন একটি বিজ্ঞপ্তিকে সম্পাদনা করে দাবিকৃত বিজ্ঞপ্তিটি তৈরি করা হয়েছে।
উক্ত বিজ্ঞপ্তিটির সত্যতা যাচাইয়ের উদ্দেশ্যে ঢাকায় অবস্থিত পাকিস্তান হাইকমিশনের ফেসবুক পেজ ও এক্স অ্যাকাউন্টে অনুসন্ধান করে সর্বশেষ গত ১৮ জুলাই প্রকাশিত একটি বিজ্ঞপ্তি পাওয়া যায়।
বিজ্ঞপ্তিটিতে বাংলাদেশে চলমান আন্দোলন পরিস্থিতিতে পাকিস্তানি নাগরিকদের উদ্দেশ্যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “বাংলাদেশে বসবাসরত পাকিস্তানি নাগরিকদের অনুরোধ করা হচ্ছে যে, চলমান বিক্ষোভের কারণে চলাচলের সময় সতর্ক থাকুন এবং বিক্ষোভের স্থানগুলি এড়িয়ে চলুন। জরুরি পরিস্থিতিতে, হাই কমিশনের সাথে যোগাযোগ করুন: ইমেইল [email protected] এবং সেল/হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর +880 14 0849 0601।”
এটিই তাদের প্রকাশিত সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তি। কোটা আন্দোলনের তিনজন ছাত্র সমন্বয়ক তাদের সাহায্য চেয়েছেন দাবিতে কোনো বিজ্ঞপ্তি তাদের ফেসবুক কিংবা এক্স অ্যাকাউন্টে পাওয়া যায়নি।
বিষয়টি সম্পর্কে অধিকতর নিশ্চিত হতে রিউমর স্ক্যানার ঢাকার পাকিস্তান হাইকমিশনের সাথে যোগাযোগ করে। তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এটি ভুয়া বিজ্ঞপ্তি।
পাকিস্তান হাইকমিশনের কাউন্সিলর (প্রেস) মো. ফসিহ উল্লাহ খানও রিউমর স্ক্যানারকে এই বিজ্ঞপ্তিটা ভুয়া বলে নিশ্চিত করেন।
হাইকমিশনের ফেসবুক পেজ থেকেও দাবিকৃত বিজ্ঞপ্তিটিতি ভুয়া জানিয়ে একটি পোস্ট করা হয়।
মূলত, কোটা আন্দোলনের তিন সমন্বয়ক পাকিস্তান হাইকমিশনের সহযোগিতা চেয়েছেন এবং তারাও সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে দাবিতে একটি বিজ্ঞপ্তি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত এই বিজ্ঞপ্তিটি আসল নয়। হাইকমিশনের পক্ষ থেকেও রিউমর স্ক্যানারকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
সুতরাং, কোটা আন্দোলনের তিন সমন্বয়ক পাকিস্তান হাইকমিশনের সহযোগিতা চেয়েছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত ঢাকার পাকিস্তান হাইকমিশনারের নামে প্রচারিত বিজ্ঞপ্তিটি ভুয়া।
তথ্যসূত্র
- Rumor Scanner’s own analysis.
- Statement from Pakistan High Commission Bangladesh.