ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতা হারানোর পর দেশ পরিচালনা করতে ড. মুহম্মদ ইউনূসের অধীনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়। সম্প্রতি পদ্মা সেতু পরিদর্শনে এসে শুক্রবার সন্ধ্যায় পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের সার্ভিস এরিয়া-২-এ এক সংবাদ সম্মেলনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান দাবি করেন, ‘পদ্মা সেতু প্রকল্পে সর্বশেষ প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা। ব্যয় সংকোচন নীতি গ্রহণ করে এখন চূড়ান্ত ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ৭৭০ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এখানে এক হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে।’ সাশ্রয়কৃত টাকার বিবরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে যদি ভালো সরকার থাকতো তাহলে হয়তো আমরা পদ্মা সেতু অনেক কম ব্যয়ে করতে পারতাম।’
সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের উক্ত মন্তব্য নিয়ে দেশের একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন: দ্য ডেইলি স্টার, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, আরটিভি।
তার এই মন্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়। ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, পদ্মা সেতু প্রকল্পে ১৮৩৫ কোটি টাকা ব্যয় সাশ্রয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় হয়নি, বরং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার আগে গত জুলাই মাসেই বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থাতেই উক্ত ১৮৩৫ কোটি টাকা ব্যয় সাশ্রয়ের বিষয়ে জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে দেশিয় সংবাদমাধ্যম মানবকণ্ঠে গত ৫ জুলাই (অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পূর্বে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে) “পদ্মা সেতুর বরাদ্দ থেকে ১৮৩৫ কোটি টাকা কম খরচ হয়েছে” শিরোনামে একটি সংবাদ প্রতিবেদন পাওয়া যায়, যেখানে পদ্মা বহুমুখী সেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলামের বরাতে জানানো হয়, পদ্মা সেতু প্রকল্পে বরাদ্দের ৩২ হাজার ৬০৭ কোটি টাকা থেকে ১ হাজার ৮৩৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকা কম খরচ হয়েছে। ওই টাকা নিয়ম অনুযায়ী সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হবে।
গত ৪ জুলাই মূলধারার গণমাধ্যম আরটিভিতে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদনেও একই তথ্য পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে জানানো হয়, পদ্মাসেতু প্রকল্পে সবশেষ মোট বরাদ্দ ছিল ৩২ হাজার ৬০৭ কোটি টাকা।
অর্থাৎ, ১,৮৩৫ কোটি টাকা সাশ্রয় শেষে পদ্মা সেতুর সর্বশেষ চূড়ান্ত ব্যয় প্রায় ৩০ হাজার ৭৭২ কোটি টাকা।
কিন্তু, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান জানান, পদ্মা সেতু প্রকল্পের সর্বশেষ প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা। অর্থাৎ, স্পষ্টতই তিনি গত ৫ জুলাই তারিখে প্রকাশিত সংবাদগুলোতে পদ্মা বহুমুখী সেতুর প্রকল্পের পরিচালক শফিকুল ইসলামের উল্লিখিত সাশ্রয়কৃত ব্যয় বাদ না দিয়েই প্রাক্কালিত ব্যয়ের পরিমাণ উল্লেখ করেছিলেন। ফাওজুল কবির খানের দাবি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাশ্রয়ের পর পদ্মা সেতুর চূড়ান্ত ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ৭৭০ কোটি ১৪ লাখ টাকা৷ কিন্তু, প্রায় এর সমপরিমাণ টাকা গত ৫ জুলাই সংবাদমাধ্যমেই উল্লেখ করা হয়। অর্থাৎ, আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতা হারানোর পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাড়তি ১,৮৩৫ কোটি টাকা সাশ্রয় করলে চূড়ান্ত ব্যয় হওয়ার কথা ছিল প্রায় ২৮ হাজার ৯৩৭ কোটি টাকা৷ কিন্তু, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান জানিয়েছেন, ব্যয় সংকোচন নীতি গ্রহণ করে সাশ্রয়ের পর পদ্মা সেতু প্রকল্পের এখন চূড়ান্ত ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ৭৭০ কোটি ১৪ লাখ টাকা, যা কি না বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়েই সাশ্রয়ের পর চূড়ান্ত ব্যয়ের প্রায় সমমানই।
অর্থাৎ, উল্লিখিত ১,৮৩৫ কোটি টাকা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেওয়া ব্যয় সংকোচন নীতির ফলে সাশ্রয় হয়নি, বরং তা বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আগেই হয়ে গিয়েছিল।
সুতরাং, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যয় ১৮৩৫ কোটি টাকা সাশ্রয় করেছে শীর্ষক দাবিটি বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- Manobkantha – পদ্মা সেতুর বরাদ্দ থেকে ১৮৩৫ কোটি টাকা কম খরচ হয়েছে
- RTV – পদ্মা সেতু নির্মাণে ১৮৩৫ কোটি টাকা সাশ্রয়, পরিসমাপ্তি ঘোষণা শুক্রবার
- Rumor Scanner’s own analysis