সম্প্রতি “ইংল্যান্ড অক্সফোর্ড ইন্টারনেশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে আইন বিষয়ে ডক্টরেট ডিগ্রি পেয়ে তার নামের সাথে এখন থেকে যুক্ত হবে ড. তারেক রহমান” শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
পোস্টগুলোর আর্কাইভ দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জনের দাবিটি সঠিক নয় বরং কোনো তথ্যসূত্র ছাড়াই বিগত কয়েক বছর ধরে উক্ত তথ্যটি ফেসবুকে প্রচার হয়ে আসছে।
গুজবের সূত্রপাত
ফেসবুকের নিজস্ব মনিটরিং টোল ব্যবহার করে, সর্বপ্রথম ২০১৮ সালের ৩০ এপ্রিল সৌদিআরব বিএনপি নিউজ (আর্কাইভ) নামের একটি ফেসবুক পেজে “সম্মানসূচক ডক্টরেট ডি্গ্রি পাচ্ছেন তারেক রহমান” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়।
পোস্টটিতে বলা হয়, লন্ডনে বসবাসরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করবে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরবর্তী সমাবর্তনে আইন বিষয়ে তারেক রহমানকে এই সম্মানসূচক ডিগ্রি প্রদান করা হবে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তারেক রহমানকে দেওয়া এক চিঠিতে এমনটা জানানো হয়েছে বলে তার লন্ডনস্থ একটি সূত্র পত্রিকাকে জানায়। এর আগে বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো ও স্বনামধন্য অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বিশেষ রাজনৈতিক লেকচার’ দিয়েছেন লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
পরবর্তীতে ২০১৮ সালের মে মাসে বেশ কয়েকটি ভূইফোঁড় অনলাইন পোর্টালে ‘সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি পেলেন তারেক রহমান’ শিরোনামে তথ্যটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়।
এছাড়া, The Dhaka Post নামের আরেকটি ভূইফোঁড় অনলাইন পোর্টালে ২০২০ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি “বাংলাদেশের শীর্ষ রাজনীতিবিদদের শিক্ষাগত যোগ্যতা কার কতদূর?” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনটিতে দাবি করা হয়, ১৯৮৪ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমে আইন বিভাগে ও পরে লোক প্রশাসন বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি স্নাতক শ্রেনীর পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি। পরবর্তীতে তিনি পেশা হিসেবে ব্যবসাকে বেছে নিয়ে বস্ত্রশিল্প ও নৌ-যোগাযোগ খাতে বিনিয়োগ করেন। বর্তমানে তারেক রহমান লন্ডনের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনশাস্ত্র নিয়ে পড়াশুনা করছেন বলে জানা গেছে। তবে প্রতিবেদনটিতে কোথাও তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়ছেন এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
যদিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের পোস্টগুলোর দাবি অনুযায়ী, তিনি ইংল্যান্ড অক্সফোর্ড ইন্টারনেশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে আইন বিষয়ে ডক্টরেট ডিগ্রি পেয়েছেন।
এছাড়া onebd.com নামের আরেকটি ভূইফোঁড় অনলাইন পোর্টালে “অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এর অধ্যাপক নিযুক্ত হওয়ায়, তারেক রহমান কে ব্রিটিশ বাংলাদেশী দের পক্ষ থেকে বিশাল সংবরধনা।” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
এই প্রতিবেদনটিতে দাবি করা হয়, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নিযুক্ত হওয়ায়, তারেক রহমানকে ব্রিটিশ বাংলাদেশীদের পক্ষ থেকে বিশাল সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। তবে প্রতিবেদনটির কোথাও তিনি কোন বিভাগের অধ্যাপক নিযুক্ত হয়েছেন, কখন নিযুক্ত হয়েছেন এ সম্পর্কিত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি
এসব দাবির সত্যতা যাচাইয়ে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের OXFORD ALUMNI GROUP NETWORK এর মাধ্যমে Cambridge & Oxford Society of Bangladesh এর প্রতিনিধি মুহাম্মদ আবির হাসানের যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম।
এ প্রসঙ্গে মুহাম্মদ আবির হাসান রিউমর স্ক্যানারকে বলেন, “এ ধরনের কোনো বিষয় সম্পর্কে আমার জানা নেই৷ আমি নিজেও গত বছর অক্সফোর্ডে এসেছি৷ তাই অতীতে কি হয়েছে এ সম্পর্কে বলতে পারছি না।”
দাবিটির আরও অধিকতর সত্যতা যাচাইয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খানের সঙ্গে রিউমর স্ক্যানার থেকে যোগাযোগ করা হয়।
তিনি রিউমর স্ক্যানারকে বলেন, ‘তথ্যটি সঠিক নয়। এ ধরণের কোনো তথ্য দলের (বিএনপির) দায়িত্বশীল কোনো ব্যক্তির পক্ষ হতে দেওয়া হয়নি।’
এছাড়া বিএনপি বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান বিরোধী দল ও তারেক রহমান এ দলের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে তার যেকোনো অর্জনে জাতীয় পর্যায়ের গণমাধ্যমে স্বাভাবিকভাবে সংবাদ প্রকাশিত হওয়া উচিত। কিন্তু এমন কোনো তথ্য দেশীয় কোনো গণমাধ্যমে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মূলত, কোনো ধরণের তথ্যসূত্র ছাড়াই বিএনপি নেতা তারেক রহমানের ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জনের একটি দাবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও কিছু ভূইফোঁড় অনলাইন পোর্টালে ২০১৮ সাল থেকে প্রচার হয়ে আসছে। কিন্তু অক্সফোর্ডের বাংলাদেশী এলামনাই ও বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে এই দাবির পক্ষে কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।
২০১৮ সালে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে।
২০১৯ সালে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে।
২০২০ সালে প্রচারিত এমন একটি পোস্ট দেখুন এখানে।
২০২১ সালে প্রচারিত এমন একটি পোস্ট দেখুন এখানে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের মূলধারার গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান রাজধানীর শাহীন স্কুল অ্যান্ড কলেজে পড়াশোনা শুরু করেন। পরবর্তীতে ঢাকা রেসিডেনসিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি এবং আদমজী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর তিনি আর পড়াশোনা করেছেন কি না এ সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায় না।
সুতরাং, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএনপি নেতা তারেক রহমানের ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জনের দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Conversation with BNP Chairperson Press Wing
- Conversation with Cambridge & Oxford Society of Bangladesh