কুমিল্লা একসাথে পরিবারে তিন সদস্যকে খুনের ঘটনার সাথে রাজনৈতিক সংযোগ নেই

সম্প্রতি, ‘কুমিল্লায় হোমনা উপজেলার বড় ঘাগুটিয়া গ্রামের স্তানীয় এক যুবলীগ নেতার পুরো পরিবার কে রাতের আঁধারে ঘরে ডুকে একের পর এক পরিবারের সকল সদস্য কে হত্যা করে জঙি জামায়াত হিজু রা! যার থেকে রেহাই পাইনি শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যান্ত! পচাত্তরের আদলে হত্যা কান্ড হচ্চে ধংস করে দেয়া হচ্চে পরিবার শুদ্ধ যেন আর কেউ না থাকে!’ শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।  

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, কুমিল্লার হোমনায় একই পরিবারের তিন সদস্য খুনের ঘটনাটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়, বরং এটি ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের ঘটনা। উক্ত ঘটনায় আক্তার হোসেন ওরফে সুমন নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে তিনি হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তার কোনো রাজনৈতিক পরিচয় জানা যায়নি। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ‘Md Shapla’ ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ২০২৪ সালের ০৫ সেপ্টেম্বর ‘কুমিল্লায় একই বাড়িতে তিনজন খুন, গ্রামবাসী খুনিদের ফাঁসি চাইয় ০৫/৯/২৪’ শীর্ষক ক্যাপশনে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির দৃশ্যের মিল খুঁজে পাওয়া গেছে। 

ভিডিওটি থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী কি ওয়ার্ড সার্চ করে জাতীয় প্রথম আলোর ২০২৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ‘কুমিল্লায় একই কক্ষ থেকে মা-ছেলেসহ তিনজনের লাশ উদ্ধার’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। 

উক্ত প্রতিবেদন আলোচিত ঘটনা নিয়ে পুলিশের বক্তব্য পাওয়া যায়।  হোমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়নাল আবেদীন জানান, বড় ঘাগুটিয়া গ্রামের বাসিন্দা মো. শাহ পরান রাজধানী ঢাকায় চাকরি করেন। গতকাল (৪ সেপ্টেম্বর) রাতে তাঁর স্ত্রী-ছেলে ও মামাতো ভাইয়ের মেয়ে তিশা ঘুমিয়ে ছিলেন। রাতের কোনো একসময় তাঁদের ঘরে প্রবেশ করে দুর্বৃত্তরা। একে একে তিনজনকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যা করা হয়। পরে মরদেহগুলো খাটের ওপর ফেলে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। 

Video Comparison: Rumor Scanner

পরবর্তীতে একই ঘটনাশ মূলধারার গণমাধ্যম দৈনিক ইত্তেফাকে ২০২৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত “কুমিল্লায় তিন খুনের আসামির জবানবন্দি ‘মাহমুদাকে শ্বাসরোধে হত্যার পর সাক্ষী না রাখতে ঘুমন্ত তিশামণি ও সাহেদকে খুন করি’” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কুমিল্লার হোমনায় চাঞ্চল্যকর তিন খুনের আসামি গ্রেপ্তার আক্তার হোসেন প্রথমে হোমনায় পুলিশের কাছে ও পরে কুমিল্লায় আদালতে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে হত্যার দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী তিনি জবানবন্দিতে বলেছেন, “মাহমুদাকে শ্বাসরোধে হত্যার পর খুনের সাক্ষী না রাখতে ঘুমন্ত তিশামণি এবং সাহেদকেও শ্বাসরোধে এবং সর্বশেষ কাঠের ফালি দিয়ে মাথায় আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করি।”

তবে উক্ত ঘটনা নিয়ে গণমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো পর্যালোচনা করে আলোচিত খুনের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তির জামায়াতে ইসলামীর সাথে কোনো রাজনৈতিক সম্পৃক্তটা খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া নিহতের পরিবারের সাথেও যুবলীগের রাজনীতির কোনো সংশ্লিষ্টতা গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়নি।

সুতরাং, কুমিল্লায় যুবলীগ নেতার পরিবারের তিন সদস্যকে জামায়াতে ইসলামী হত্যা করেছে দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি বিভ্রান্তিকর। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img