সকল গ্রেডের সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা সংস্কার করে স্থায়ী সমাধানের দাবিতে দেশজুড়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে গতকাল ২৮ জুলাই রাতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) হেফাজতে থাকা অবস্থায় কর্মসূচি প্রত্যাহারের একটি ভিডিও বার্তা দিয়েছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। এ সময় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর করে সব কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন নাহিদ ইসলাম সহ আরও পাঁচ সমন্বয়ক। পরবর্তীতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একাংশ এই বার্তা জোরপূর্বক নেওয়া হয়েছে দাবি করেন এবং তাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে উল্লেখ করে ২৯ জুলাই সোমবার সারাদেশে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ কর্মসূচি ও প্রতিবাদ সমাবেশের ঘোষণা দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
এর প্রেক্ষিতে আজ “রাজধানীর মহাখালী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর ভবনের নিচে গাড়িতে আগুন। এই এলাকায় এখন থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।” শীর্ষক একটি দাবি ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ঢাকার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর ভবনের গাড়িতে আগুন দেওয়ার এই ছবিটি আজকের নয় বরং, ছবিটি গত ১৮ জুলাইয়ের। সেদিন ভবনটিতে কোটা সংস্কার নিয়ে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের মধ্যে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
দাবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিটি Bangladesh Black Hat Hackers নামের একটি ফেসবুক পেজে গত ১৮ জুলাই রাজধানীর মহাখালী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর ভবনের নিচে গাড়িতে আগুন। এই এলাকায় এখন যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে। (আর্কাইভ) শীর্ষক শিরোনামে খুঁজে পাওয়া যায়।
ছবিটির সাথে আজকে অর্থাৎ, ২৯ জুলাই পুনরায় দুর্যোগ ব্যবস্থা অধিদপ্তর ভবনে দেওয়ার ছবি দাবিতে প্রচারিত ছবিটির হুবহু মিল রয়েছে।
Image Comparison by Rumor Scanner
সেদিন প্রথম আলোর এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কোটা সংস্কার নিয়ে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের মধ্যে রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর ভবনে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। আন্দোলনকারীরা প্রথমে দশ তলা ভবনটিতে ইটপাটকেল মারতে শুরু করে। প্রথমে একটি গাড়ি ভাঙচুর করে। একপর্যায়ে ভবনের সামনে থাকা সবগুলো গাড়িতে আগুন ধরে যায়। এরপর সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ভবনে আগুন ধরে যায়।
পরবর্তী অনুসন্ধানে গণমাধ্যম কিংবা কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে আজ পুনরায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর ভবনের নিচে রাখা গাড়িতে আগুন দেওয়ার কোনো ঘটনার বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
জানতে চাইলে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে বলেন, ‘বিষয়টি সম্পূর্ণ গুজব। আজ মহাখালীর ওই নিদির্ষ্ট এলাকায় কোনো ধরনের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেনি। সেখানে আগুনে দেওয়ার তথ্যটি একদম ভিত্তিহীন।’
মূলত, কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং পরবর্তী সহিংসতার মধ্যে আজ “রাজধানীর মহাখালী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর ভবনের নিচে গাড়িতে আগুন। এই এলাকায় এখন থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।” শীর্ষক একটি দাবি ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ছবিটি আজকের নয়। প্রকৃতপক্ষে, ১৮ জুলাইয়ের একটি ছবিকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং, মহাখালীর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর ভবনের সামনে রাখা গাড়িতে পুনরায় আগুন দেওয়ার ছবি দাবিতে ১৮ জুলাইয়ের পুরোনো ছবি প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- Bangladesh Black Hat Hackers Facebook Page: রাজধানীর মহাখালী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর ভবনের নিচে গাড়িতে আগুন। এই এলাকায় এখন যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে।
- Statement of Gulshan Thana OC Majharul Islam
- Rumor Scanner’s Own Analysis