বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় ধমকা হাওয়া ও বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এছাড়া দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে সকল ধরনের নৌযোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। এরই প্রেক্ষিতে ২৯ মে অন্তত দুপুর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কয়েকটি ছবি প্রচার করে দাবি করা হয়েছে ছবিগুলো হাতিয়ার বর্তমান পরিস্থিতির।

এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ছবিগুলো হাতিয়ার নয় বরং, এগুলো ভারত ও বাংলাদেশের নানা স্থানের পুরোনো ছবি।
প্রথম ছবি যাচাই:
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত প্রথম ছবিটি নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো’র ইংরেজি সংস্করণের ওয়েবসাইটে ‘Flood death toll reaches 13, 4.5m affected’ শীর্ষক শিরোনামে ২০২৪ সালের ২৩ আগস্টে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে একটি ছবিরও সংযুক্তি পাওয়া যায় যার সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিটির হুবহু মিল পাওয়া যায়৷ ছবিটির বর্ণনায় প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “গোমতী নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে যাওয়ার ফলে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার আরও ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। | এম সাদেক” (অনূদিত)

এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে প্রচারিত প্রথম ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং ২০২৪ সালের বন্যা পরিস্থিতিতেই আলোচিত ছবিটি প্রচার করা হয়েছে।
দ্বিতীয় ছবি যাচাই:
আলোচিত দাবিতে প্রচারিত দ্বিতীয় ছবিটি নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে মূলধারার সংবাদমাধ্যম ‘বাংলা নিউজ২৪’ এর ওয়েবসাইটে শেরপুরের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে ২০২৪ সালের ৬ অক্টোবরে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে একটি ছবিরও সংযুক্তি পাওয়া যায় যার সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিটির হুবহু মিল রয়েছে।

এছাড়াও, অনুসন্ধানে মূলধারার সংবাদমাধ্যম ‘ইত্তেফাক’ এর ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের ৬ অক্টোবরে শেরপুরে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটির সংযুক্তি পাওয়া যায়।
অর্থাৎ, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত দ্বিতীয় ছবিটিও সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং অন্তত ২০২৪ সাল থেকেই প্রচার হয়ে আসছে।
তৃতীয় ছবি যাচাই:
আলোচিত দাবিতে প্রচারিত তৃতীয় ছবিটি নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ভয়েস অফ আমেরিকার ওয়েবসাইটে ২০১৩ সালের ১৫ অক্টোবরে কয়েকটি ছবি প্রকাশ হতে দেখা যায় যেগুলো ২০১৩ সালের ১৫ অক্টোবরে ধারণ করা হয়েছে। উক্ত ছবিগুলোর মধ্যে একটি ছবির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত তৃতীয় ছবিটির মিল পাওয়া যায়। ছবিটির বর্ণনায় বলা হয়, “ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সামাত গ্রামে ফুলেফেঁপে ওঠা কংসাবতী নদীর ভাঙা বাঁধের ওপর দাঁড়িয়ে আছেন স্থানীয় গ্রামবাসীরা। দুর্বল হয়ে পড়া ঘূর্ণিঝড় ফাইলিনের প্রভাবে টানা ভারী বর্ষণে রাজ্যের বিভিন্ন নদ-নদী উপচে পড়েছে।” (অনূদিত)

এছাড়াও, যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘দ্য গার্ডিয়ান’ এর ওয়েবসাইটে ২০১৩ সালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনেও আলোচিত ছবিটি ভারতের দাবিতে প্রচার করতে দেখা যায়।
অর্থাৎ, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত তৃতীয় ছবিটি ২০১৩ সালের ১৫ অক্টোবরের এবং ভারতের।
সুতরাং, হাতিয়ার বর্তমান পরিস্থিতির দৃশ্য দাবিতে নানা স্থানের পুরোনো ছবি প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- Prothom Alo – Flood death toll reaches 13, 4.5m affected
- Bangla News24 – শেরপুরে বন্যায় মৃত্যু বেড়ে ৭, নতুন ১০ ইউনিয়ন প্লাবিত
- Ittefaq – শেরপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, মৃত্যু বেড়ে ৭
- VOA – October 15, 2013
- The Guardian – Local people ‘need access to technology to survive disasters’