বাসে বমি করে মারা যাওয়ার অভিযোগের পুরোনো ঘটনার ছবিকে সাম্প্রতিক সময়ের ছবি দাবিতে প্রচার

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একজন ব্যক্তির ছবি প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে যে, ছবিতে দেখানো ব্যক্তি ঘন্টাখানেক (পোস্ট করার) আগে লাকসাম বাইপাস হাউজিং মসজিদের সামনে উপকূল বাসে বমি করে সাথে সাথে মারা যায়। যদি কোন লোক তাকে চিনতে পারেন তাহলে যেন তার পরিবারের কাছে খবরটি পৌঁছে দেয়।

বাসে বমি করে মারা

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, উপকূল বাসে বমি করে মারা যাওয়ার অভিযোগের আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের কোনো ঘটনার নয়, বরং একই দাবিতে গত বছরও পোস্ট করা হয়েছিল।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে Nayeem Sir With English নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে গত বছরের ১১ নভেম্বর তারিখে “ইন্না লিল্লাহ! ঘন্টাখানেক আগে লাকসাম বাইপাস হাউজিং মসজিদের সামনে উপকূল বাসে এই লোকটি বমি করে সাথে সাথে মারা যায় যদি কোন লোক উনাকে চিনতে পারেন তাহলে উনার পরিবারের কাছে খবরটি পৌঁছে দিন। পোস্টটি  বেশি বেশি #শেয়ার করুন যাতে তার পরিবারের কাছে খবরটি পৌঁছে যায়।” শীর্ষক ক্যাপশনে আলোচিত ছবি দুইটি সংযুক্ত করে প্রচারিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত পেজটি ছাড়াও গত বছরের নভেম্বরে আলোচিত দাবিতে আরো বেশকিছু পোস্ট দেখতে পাওয়া যায়। অর্থাৎ, ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়, বরং অন্তত ২০২৩ সালের।

Comparison : Rumor Scanner

অতঃপর, ঘটনাটির সত্যতা জানতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে অনুসন্ধানে গণমাধ্যম সূত্রে কোনো সংবাদ পাওয়া না গেলেও FH Arif নামের একটি ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে গত বছরের ১১ নভেম্বর তারিখে প্রচারিত ছবি দুইটির সংযুক্তিসহ একটি ফেসবুক পোস্ট পাওয়া যায়। পোস্টটিতে বলা হয়, ছবিতে থাকা ছেলেটির বাড়ি নোয়াখালী। তারা তাদের এলাকায় জীবিকার তাগিদে রাজমিস্ত্রির কাজ করে, আজ (সেদিন) সকালে তাদের গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার সময় বাসে বমি করে অজ্ঞান হয়ে যায় পরে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয় সেখানে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। 

একই দাবিতে একইদিনে প্রচারিত আরেকটি ফেসবুক পোস্ট পাওয়া যায়। ২০২৩ সালের ১১ নভেম্বর তারিখে ইউসুফ সরকার নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে আলোচিত ব্যক্তির ছবি দুইটি সংযুক্ত করে একটি পোস্ট করা হয়। ক্যাপশনে বলা হয়, “কিছুক্ষণ আগে লাকসাম বাইপাস হাউজিং মসজিদের সামনে উপকূল বাসে এই লোকটি বমি করে সাথে সাথে মারা যায় যদি কোন লোক উনাকে চিনতে পারেন তাহলে উনার পরিবারের কাছে খবরটি পৌঁছে দিন। পোস্টটি সবাই বেশি বেশি শেয়ার করুন যাতে তার পরিবারের কাছে খবরটি পৌঁছে যায়।” 

পোস্টটি তার দুইদিন পর গত বছরের ১৩ নভেম্বর তারিখে এডিট করা হয় এবং পোস্টটির ক্যাপশনে যুক্ত করা হয়, “অবশেষ ছেলেটির খোঁজ পাওয়া গেছে তার বাড়ি:নোয়াখালী, তারা দুই ভাই কুমিল্লা রাজমিস্ত্রির কাজ করতো যে ব্যক্তি মারা গেছে সে দুইদিন আগে কাজ করা অবস্থা হাতে ব্যথা পায় এবং সেও অসুস্থ হয়ে পড়ে, আজ সকাল তার ভাই তাকে উপকূল বাসে তুলে দেয় এবং সে বাসে বসে থাকা অবস্থা স্টক করে মারা যায়, ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নালিল্লাহি রাজিউন।”

অর্থাৎ, আলোচিত ছবির ঘটনা সম্পর্কে নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া না গেলেও এটি নিশ্চিত যে প্রচারিত ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়, বরং অন্তত গত বছরের নভেম্বর মাসের। 

সুতরাং, উপকূল বাসে বমি করে মারা যাওয়ার অভিযোগের দাবিতে প্রচারিত ছবিগুলো ও ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ের মর্মে প্রচারিত দাবিগুলো বিভ্রান্তিকর। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img