সাভার-আশুলিয়ায় ৩৩ জন নিহতের পুরোনো সংবাদ সম্প্রতি ব্রেকিং নিউজ দাবিতে প্রচার

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দাবি প্রচার করা হয়েছে, “ব্রেকিং নিউজ : ব্যাপক গোলাগু..লি, ৩৩ জন নি..হত শুধু সাভার-আশুলিয়াতেই — বিস্তারিত কমেন্টে”।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সাভার-আশুলিয়ায় গুলাগুলিতে ৩৩ জন নিহত হওয়ার খবরটি ব্রেকিং নিউজ বা সম্প্রতি ঘটেনি বরং প্রায় ৭ মাস আগে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সাভার-আশুলিয়ায় ৩৩ জন নিহতের পুরোনো সংবাদ সম্প্রতি ব্রেকিং নিউজ দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলোর মন্তব্য সেকশন পর্যবেক্ষণ করলে তাতে দাবিটির সপক্ষে তথ্যসূত্র হিসেবে ‘কারেন্টনিউজ২৪’ নামের একটি ওয়েবসাইটে ‘সাভার ও আশুলিয়ায় গুলি ও সহিংসতায় নিহত ৩৩’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদনের লিঙ্ক সংযুক্ত করতে দেখা যায়। 

উক্ত প্রতিবেদনটি পড়লে জানা যায়, “সাভার-আশুলিয়ায় বিরাজ করছে থমথমে পরিস্থিতি। ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতায় সাভারে পুলিশসহ অন্তত ৩৩ জন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে ২৭ জন নিহত হয়েছেন। বাকি ৬ জনকে পিটিয়ে মারা হয়েছে। এদের মধ্যে পুলিশ সদস্যও রয়েছে বলে জানা গেছে। মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) সকালে সাভার-আশুলিয়ার বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।”

অর্থাৎ, প্রচারিত দাবিটিতে দাবিটির সপক্ষে সংযুক্ত প্রতিবেদনটিতেই বলা হয়েছে সংবাদটি ছাত্র-জনতার আন্দোলনের প্রায় ৭ মাস পুরোনো সংবাদ। কিন্তু ফেসবুকে সংবাদটি ‘ব্রেকিং নিউজ’ উল্লেখ করে সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

এরই সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে মূলধারার সংবাদমাধ্যম মানবজমিনের ওয়েবসাইটে গত ৬ আগস্টে ‘সাভার-আশুলিয়ায় গুলি ও সহিংসতায় নিহত ৩৩’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনটিতে একই তথ্যের উল্লেখ পাওয়া যায়। 

এছাড়াও উক্ত প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, “খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মঙ্গলবার [৬ আগস্ট] সকালে আশুলিয়ার বাইপাইলের কাছে ফুটওভারব্রিজে দুইজনের লাশ ব্রিজের রেলিংয়ের সাথে উল্টো করে ঝুলানো রয়েছে। ঝুলন্ত লাশ দুটি আশুলিয়া থানা-পুলিশের বলে জানান স্থানীয়রা। এছাড়া বাইপাইলে একটি পোড়া লেগুনা গাড়িতে তিনটি লাশও রয়েছে যা পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে। এর আগে সোমবার সাভারের এনাম মেডিকেলে গুলিবিদ্ধ হয়ে ১৩ জন, নারী ও শিশু হাসপাতালে ৩ জন, গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজে ৯ জন ও হাবিব ক্লিনিকে ২ জনসহ মোট ২৭ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া আশুলিয়া থানার সামনে ৪ জন ও আশুলিয়া থানার লাশ ঘরের সামনে ২ জনের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা গেছে। মোট ৩৩ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। তবে এই সংখ্যা বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।… ” উক্ত তথ্যের সাথেও কারেন্টনিউজ২৪ নামে ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনটির তথ্যের সাদৃশ্য পাওয়া যায়।

এছাড়া এ বিষয়ে বাংলানিউজ২৪ নামক অনলাইন সংবাদমাধ্যমে গত ০৬ আগস্টে ‘সাভারে সহিংসতায় পুলিশসহ নিহত ৩৩’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদন থেকেও একইরকম তথ্য জানা যায়। এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে প্রচারিত সংবাদটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং প্রায় ৭ মাস পুরোনো।

এছাড়া, আলোচিত দাবির বিষয়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে সাম্প্রতিক সময়ে সাভার-আশুলিয়ায় গুলি ও সহিংসতায় ৩৩ জন নিহত হওয়ার বিষয়ে কোনো সংবাদ গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে পাওয়া যায়নি।

সুতরাং, প্রায় ৭ মাস আগে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সাভার-আশুলিয়ায় ৩৩ জন নিহতের পুরোনো সংবাদ সম্প্রতি ব্রেকিং নিউজ দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img