পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানে জুলাই মাসে ভারী বর্ষণের কারণে আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধ্বসের ঘটনায় বাংলাদেশের একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ৫টি ভিন্ন ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।
ছবিগুলো ব্যবহার করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, বাংলা ট্রিবিউন, দৈনিক ইত্তেফাক, বাংলা ভিশন, আলোকিত বাংলাদেশ, একুশে সংবাদ, অর্থসূচক, দৈনিক ইনকিলাব, একাত্তর টিভি, প্রতিদিনের সংবাদ, ঢাকা পোস্ট, নিউজজি২৪, পিবিএ এজেন্সি।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রচারিত ছবিগুলো সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং পূর্বের ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার ছবিকে সাম্প্রতিক ঘটনার দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
পাকিস্তানে রেকর্ড বৃষ্টির ঘটনার ছবি যাচাই
ছবি যাচাই ০১
এই ছবিটি ব্যবহার করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বাংলা ট্রিবিউন।
কিন্তু ছবিটি উক্ত ঘটনার নয়।
ছবিটির মূল সূত্রের বিষয়ে অনুসন্ধানে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক গণমাধ্যম ‘VOA’ এ ২০১৩ সালের ৫ই আগস্ট প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদনে ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৩ সালে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে ভারী মৌসুমি বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যার কারণে সেই অঞ্চলের কিছু অংশ প্লাবিত হওয়ার পর উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতা চলার ছবি।
অর্থাৎ, গণমাধ্যমে প্রচারিত এই ছবিটি পাকিস্তানে জুলাইয়ের বন্যার ঘটনার নয়।
ছবি যাচাই ০২
এই ছবিটি ব্যবহার করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দৈনিক ইত্তেফাক, চ্যানেল আই, চ্যানেল আই, বাংলা ভিশন, আলোকিত বাংলাদেশ, একুশে সংবাদ।
উক্ত দাবিতে প্রচারিত ছবিটির মূল সূত্রের বিষয়ে অনুসন্ধানে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক গণমাধ্যম সংস্থা ‘Reuters’ এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সেই সময় পাকিস্তানের সোহবাতপুরে বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি ও বন্যার পর পুরুষরা তাদের জিনিসপত্র নিয়ে প্লাবিত রাস্তা ধরে হাঁটছিলো।
অর্থাৎ, গণমাধ্যমে প্রচারিত এই ছবিটি পাকিস্তানে জুলাইয়ের বন্যার ঘটনার নয়।
ছবি যাচাই ০৩
এই ছবিটি ব্যবহার করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে অর্থসূচক।
কিন্তু ছবিটি উক্ত ঘটনার নয়।
ছবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে ছবি শেয়ারিং এবং স্টোরেজ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান Getty Images এর ওয়েবসাইটে ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
সেখানে উল্লেখিত বিস্তারিত বিবরণী থেকে জানা যায়, এই ছবিটির ফটোগ্রাফার আনাদোলু এজেন্সির হারুন সাবাউন। এটি ২০২১ সালের ১১ আগস্টে আফগানিস্তানের কাবুলের একটি পার্কে হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত পরিবার দুর্ভোগের শিকার হওয়ার ছবি।
অর্থাৎ, গণমাধ্যমে প্রচারিত এই ছবিটিও পাকিস্তানে জুলাইয়ের বন্যার ঘটনার নয়।
আফগানিস্তানে রেকর্ড বৃষ্টির ঘটনার ছবি যাচাই
ছবি যাচাই ০১
এই ছবিটি ব্যবহার করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দৈনিক ইনকিলাব, একাত্তর টিভি, প্রতিদিনের সংবাদ, ঢাকা পোস্ট, নিউজজি২৪।
কিন্তু ছবিটি উক্ত ঘটনার নয়।
রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ইমেজ শেয়ারিং সাইট ‘istockphoto’ তে ২০১৬ সালের ২২ জানুয়ারি প্রকাশিত আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
ছবিটির বিস্তারিত বিবরণী থেকে জানা যায়, ছবিটি ২০১৬ সালের বন্যার ছবি।
অর্থাৎ, গণমাধ্যমে প্রচারিত এই ছবিটি আফগানিস্তানে জুলাইয়ের বন্যার ঘটনার নয়।
ছবি যাচাই ০২
এই ছবিটি ব্যবহার করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে পিবিএ এজেন্সি।
কিন্তু ছবিটি উক্ত ঘটনার নয়।
ছবিটির মূল সূত্রের বিষয়ে অনুসন্ধানে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক গণমাধ্যম সংস্থা ‘Reuters’ এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এটি ২০২২ সালের ২৮ আগস্ট পাকিস্তানের সোহবাতপুরে বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি ও বন্যার পর মানুষজন তাদের জিনিসপত্র নিয়ে প্লাবিত রাস্তা ধরে হাঁটার ছবি।
অর্থাৎ, গণমাধ্যমে প্রচারিত এই ছবিটিও আফগানিস্তানের সাম্প্রতিক বন্যার ঘটনার নয়।
মূলত, গত জুলাই মাসের শেষের দিকে ভারী বর্ষণের কারণে আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধ্বসে আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানে হতাহতের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় দেশীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানে বন্যা ও ভূমি ধ্বসের পুরোনো ৫টি ভিন্ন ঘটনার ছবি ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে পাকিস্তান সম্পর্কিত ৩টি ছবি এবং আফগানিস্তান সম্পর্কিত ২টি ছবি সংবাদ প্রতিবেদনে প্রচার করা হয়। প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোতে আলোচিত ছবিগুলোর ক্যাপশনে ফাইল ফটো বা পুরোনো ঘটনার ছবি শীর্ষক কোনো তথ্যও দেওয়া হয়নি। এতে করে স্বাভাবিকভাবে ছবিগুলো পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের সাম্প্রতিক আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধসের ঘটনার বলে প্রতীয়মান হয়, যা বিভ্রান্তির জন্ম দিয়েছে।
উল্লেখ্য, পূর্বে পাকিস্তানে ভারী বৃষ্টি ও বন্যার খবরে গণমাধ্যমে পুরোনো ছবি ব্যবহার করা হলে সেসময় বিষয়টি নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানে জুলাই মাসে ভারী বর্ষণের কারণে আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধ্বসে হতাহতের ঘটনায় বাংলাদেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে একাধিক পুরোনো ঘটনার ছবিকে ফাইল ফটো বা পুরোনো ছবি উল্লেখ ছাড়াই প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।