আওয়ামী লীগের ডাকা হরতালের সাম্প্রতিক দৃশ্য দাবিতে পুরোনো দৃশ্য প্রচার

সম্প্রতি ‘আওয়ামী লীগের ডাকা ৪৮ ঘন্টা হরতালে সারাদেশ জুড়ে চলছে ব্যাপক তাণ্ড’ব’ শীর্ষক দাবিতে একটি সংবাদ প্রতিবেদন সদৃশ ভিডিও ইউটিউবে ও শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটকে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

উক্ত দাবিতে টিকটকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়া অবধি উক্ত দাবিতে টিকটকে প্রচারিত পোস্টটি প্রায় দেড় লক্ষ বার দেখা হয়েছে এবং ৮ হাজারেরও অধিক পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওটিতে লাইক দেওয়া হয়েছে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগের ডাকা হরতালের দৃশ্যের নয় বরং, প্রায় দেড় বছর পুরোনো বিএনপির ডাকা হরতাল ও সংঘর্ষের ঘটনার দৃশ্য আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে আওয়ামী লীগ ঘোষিত হরতালের তারিখ হচ্ছে ১৮ ফেব্রুয়ারি যা এখনও আসেনি।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রচারিত ভিডিওটির শুরুতে থাকা প্রতিবেদকের বলা কথার সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে মূলধারার গণমাধ্যম যমুনা টিভির ইউটিউব চ্যানেলে “দিনভর রাজধানীতে ব্যাপক সংঘাত; পুলিশ সদস্য নিহত” শীর্ষক শিরোনামে ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবরে প্রকাশিত একটি ভিডিও সংবাদ প্রতিবেদন পাওয়া যায়৷ 

Comparison : Rumor Scanner

উক্ত সংবাদ প্রতিবেদনটিতে সংবাদ প্রতিবেদকের বলা কথার সাথে প্রচারিত ভিডিওটির শুরুতে সংযুক্ত সংবাদ প্রতিবেদকের কথার সাদৃশ্য পাওয়া যায় যা থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, উক্ত দৃশ্যটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবরের।

Comparison : Rumor Scanner

এছাড়াও, উক্ত সংবাদ প্রতিবেদনটিতে প্রদর্শিত একাধিক সংঘর্ষের দৃশ্যের সাথেও প্রচারিত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত সংঘর্ষের দৃশ্যের সাদৃশ্য পাওয়া যায়। উক্ত সংবাদ প্রতিবেদন ভিডিওটির বর্ণনা অংশে বলা হয়, “রাজধানীতে ব্যাপক সংঘাত-সহিংসতা হয়েছে আজ। দফায় দফায় সংঘর্ষে পুলিশ-সাংবাদিকসহ রাজনৈতিক দলের অনেক কর্মী আহত হন। পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে পুলিশ বক্স, গাড়ি। ভাঙচুর চালানো হয়েছে, প্রধান বিচারপতির বাসভবনের গেট, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালের এম্বুলেন্সে। রক্ষা পায়নি গণমাধ্যমের যানবাহনও। আটক হয়েছে বিএনপি’র বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী।”

প্রচারিত সংঘর্ষের দৃশ্যের বিষয়ে সংবাদ প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর দুপুর ১২ টার দিকে শুরু হয় সংঘর্ষ। এর আগে কাকরাইল মসজিদের সামনের সড়কে সকাল থেকেই জড়ো হতে থাকে বিএনপি কর্মীরা। ঐ পথে যাচ্ছিল আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশের বাস। এ বাসে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। কেড়ে নেওয়া হয় প্ল্যাকার্ড৷ এছাড়া পুলিশের সাথেও সংঘর্ষ হয় বিএনপি কর্মীর।

প্রচারিত উক্ত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত আরো কিছু সংঘর্ষের দৃশ্য নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে যমুনা টিভির ফেসবুক পেজে ২০২৩ সালের ২৯ অক্টোবরে প্রচারিত একটি ফেসবুক লাইভ সংবাদ সম্প্রচার পোস্ট পাওয়া যায়।

Comparison : Rumor Scanner

উক্ত ভিডিওটির ২৮ মিনিট পরবর্তী সময়ের দৃশ্যের সাথেও প্রচারিত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত একাধিক দৃশ্যের সাদৃশ্য পাওয়া যায়। প্রচারিত দৃশ্যটি বিএনপির ডাকা হরতালের বলে সংবাদটিতে বলা হয়।

উল্লেখ্য যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পদত্যাগ ও “অপশাসন-নির্যাতনের” প্রতিবাদে আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি অবরোধ এবং ১৮ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা সর্বাত্মক কঠোর হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। গত ২৮ জানুয়ারি দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। অর্থাৎ, আওয়ামী লীগ ঘোষিত হরতালের তারিখ এখনও আসেনি। তবে, এর আগে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগসহ বেশকিছু দাবিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত অনলাইন প্লাটফর্ম এটিম কর্তৃক গত ১৮ জানুয়ারি সকাল-সন্ধ্যা হরতাল আহ্বান করা হয়েছিল এবং একইসময়ে ফাঁসকৃত শেখ হাসিনার কথিত কলরেকর্ডেও শেখ হাসিনাকে ১৮ তারিখে হরতালের নির্দেশ দিতে দেখা যায়।

সুতরাং, আওয়ামী লীগের ডাকা হরতালের দৃশ্য দাবিতে প্রায় দেড় বছর পুরোনো বিএনপির ডাকা হরতাল ও সংঘর্ষের দৃশ্য প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img