ওবায়দুল কাদেরের ক্ষমতা হারানোর দাবিটি সত্য নয়

সম্প্রতি “ক্ষে’পেছে সেনাবাহিনী। ক্ষ’মতা হারাচ্ছে কাদের। ব্যালটেই ভোট ঘোষনা।” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত কিছু ভিডিও দেখুন এখানে, এখানে এখানে
ভিডিওগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানেএখানে

গুজবের সূত্রপাত

অনুসন্ধানে Padma TV নামক ফেসবুক পেজে গত ২২ ডিসেম্বর উক্ত ক্যাপশন এবং থাম্বনেইল ব্যবহৃত প্রথম পোস্টটি খুঁজে পাওয়া যায়।

ভিডিওতে যা আছে

ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ভিডিওটি কয়েকটি প্রতিবেদন নিয়ে তৈরি একটি নিউজ বুলেটিনের ভিডিও। তবে সেনাবাহিনীর ক্ষেপে ওঠা, ওবায়দুল কাদেরর ক্ষমতা হারানোর কোনো সংবাদ উক্ত ভিডিওতে প্রচার হতে দেখা যায় নি। এছাড়াও ব্যালটে ভোট ঘোষণা সংক্রান্ত কোনো তথ্য উক্ত নিউজ বুলেটিনে পাওয়া যায় নি।

পরবর্তীতে উক্ত দাবির ভিত্তিতে মূলধারার গণমাধ্যমে খোঁজ করা হলেও উক্ত দাবির কোনো নির্ভরযোগ্য ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায় নি।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ওবায়দুল কাদেরের ক্ষমতা হারানো, ব্যালটে ভোট ঘোষণা এবং সেনাবাহিনীর ক্ষেপে ওঠার দাবিগুলোর কোনোটিই সত্য নয় বরং ভিডিওতে এংগেজমেন্ট বাড়ানোর জন্য এমন ক্লিকবেইট থাম্বনেইল ও শিরোনাম ব্যবহার করা হয়েছে।

অনুসন্ধান

কি-ওয়ার্ড সার্চে গত ২৮ অক্টোবর দেশীয় মূলধারার গণমাধ্যম দৈনিক “প্রথম আলো”তে “আওয়ামী লীগের সম্মেলন ২৪ ডিসেম্বর” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি সংবাদ পাওয়া যায়।

সংবাদে বলা হয়েছে, “আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির ব্যাপারে জানতে চাইলে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে দলের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়াকে নির্দেশনা দেওয়া আছে।”

পরবর্তীতে, ২৪ ডিসেম্বর অর্থাৎ আজ “প্রথম আলো”তে “আ.লীগের জাতীয় সম্মেলন শুরু, উদ্বোধন করলেন শেখ হাসিনা” শীর্ষক শিরোনামে আরেকটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “বেলা তিনটায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণে বসবে কাউন্সিল অধিবেশন। শুরুতে বর্তমান নির্বাহী কমিটির মুলতবি বৈঠক। এরপর নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইউসুফ হোসেন হুমায়ূনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের নির্বাচন কমিশন মঞ্চে আসবে। কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা মঞ্চ থেকে নেমে সামনের আসনে বসবেন। এরপর শুরু হবে নেতা নির্বাচন। সাধারণত আওয়ামী লীগের নেতা নির্বাচিত হয় আলোচনা ও সমঝোতার ভিত্তিতে। এবারও সেভাবেই হবে বলে দলের নেতারা মনে করছেন।”

এছাড়া, সেনাবাহিনীর ক্ষেপে যাওয়া বা ব্যালটে ভোট ঘোষণার কোনো সংবাদ গণমাধ্যমে পাওয়া যায়নি।

তাছাড়া, আলোচিত ভিডিটির বিস্তারিত অংশেও এধরণের কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি।

পরবর্তীতে, দেশীয় মূলধারার গণমাধ্যম দৈনিক “যুগান্তর”-এর অনলাইন সংস্করণে “আওয়ামী লীগের নতুন কমিটিতে ঠাঁই পেলেন যারা” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, “শনিবার বিকালে আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে কাউন্সিলরদের সমর্থনে সর্বসম্মতিক্রমে শেখ হাসিনা সভাপতি ও ওবায়দুল কাদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।”
এছাড়া, গত ২৪ ডিসেম্বর দেশীয় মূলধারার গণমাধ্যমগুলোর মধ্যে প্রথম সারির দৈনিক “প্রথম আলো”র অনলাইন সংস্করণে “আ.লীগের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটিতে যাঁদের স্থান হয়নি” শীর্ষক শিরোনামে এ সংক্রান্ত আরেকটি সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়।

সংবাদে বলা হয়েছে, “এ নিয়ে টানা দশমবারের মতো আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হলেন শেখ হাসিনা। আর টানা তৃতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে এলেন ওবায়দুল কাদের।”


মূলত, ২৪ ডিসেম্বর, শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২২তম ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সম্মেলনেই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সংগঠনের কমিটি নির্ধারণ করা হয়। গত দুই মেয়াদে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন ওবায়দুল কাদের। সন্ধ্যার আগে আগে সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক পদে ওবায়দুল কাদেরের নাম ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে পদ্মা টিভি নামক একটি ভুইফোঁড় ফেসবুক পেইজ  নিজেদের ভিডিও পোস্টে এংগেজমেন্ট বাড়ানোর উদ্দেশ্যে কোনো ধরণের নির্ভরযোগ্য উৎস ছাড়া এমন ক্লিকবেইট থাম্বনেইল ও শিরোনাম ব্যবহার করছে।

উল্লেখ্য, পদ্মা টিভি নামের এই ফেসবুক পেজটি প্রতিনিয়ত নানা ধরণের গুজব ছড়িয়ে আসছে।

প্রসঙ্গত, পূর্বেও আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে ছড়ানো গুজবকে শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, ওবায়দুল কাদেরের ক্ষমতা হারানোর দাবিতে যে তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে; তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img