গত ০৭ ডিসেম্বর ‘পুলিশের সাথে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা একত্র হয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের দিকে প্রকাশ্যে গুলি ছুঁড়ছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা!’ শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও বিএনপির মিডিয়া সেলের ফেসবুক পেজ এবং বিএনপির অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ হতে প্রচারিত হয়েছে।
প্রচারিত পোস্টগুলো দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
প্রচারিত ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে পুলিশের সঙ্গে আর্জেন্টিনার জার্সি পরে শটগান হতে গুলি ছুঁড়ছেন এক ব্যক্তি।
উল্লেখিত পেজগুলোতে প্রচার পরবর্তী সময়ে কপি পেস্ট হয়ে একই দাবিতে ভিডিওটি ফেসবুকে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, পুলিশের সাথে আওয়ামী লীগ একত্র হয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের দিকে প্রকাশ্যে গুলি ছুঁড়ছে দাবিতে প্রচারিত ভিডিওতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ব্যতীত অন্য কারো উপস্থিতি নেই বরং ভিডিওতে আর্জেন্টিনা জার্সি পরিহিত যেই ব্যক্তিকে আওয়ামী লীগ কর্মী দাবি করা হচ্ছে তিনি আওয়ামী লীগ কর্মী নন, তিনি পল্টন থানায় কর্মরত একজন আনসার সদস্য। তার নাম মাহিদুর রহমান।
ভিডিওটির কিছু স্থিরচিত্র রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে, মূলধারার ইলেকট্রনিক সংবাদমাধ্যম ‘দেশ টিভি’ এর ফেসবুক পেজে গত ০৭ ডিসেম্বর “আর্জেন্টিনার জার্সি পরে বিএনপির কার্যালয়ের সামনে পুলিশ” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওর কিছু অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওর হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
পরবর্তীতে কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে মূলধারার সংবাদমাধ্যম ‘বাংলাভিশন’ এর অনলাইন সংস্করণে গত ০৭ ডিসেম্বর “আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের জার্সি পরে নয়াপল্টনে পুলিশের অ্যাকশন” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনের সাথে সংযুক্ত আর্জেন্টিনা জার্সি পরিহিত ব্যক্তির ছবির সঙ্গে আলোচিত ভিডিওতে থাকা ব্যক্তির হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ০৭ ডিসেম্বর
আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের জার্সি পরে নয়াপল্টনে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে গিয়েছিল পুলিশ।
এছাড়া প্রায় একই দাবিতে মূলধারার সংবাদমাধ্যম ইনকিলাব, দ্য রিপোর্ট লাইভ এবং বার্তা বাজার এ সংবাদ প্রচারিত হয়।
অর্থাৎ, উল্লিখিত প্রতিবেদনগুলোর দাবি অনুযায়ী নয়াপল্টনে আর্জেন্টিনা জার্সি পরে শটগান হতে গুলি ছোঁড়া ব্যক্তিটি একজন পুলিশ সদস্য। অন্যদিকে বিএনপির অফিসিয়াল ফেসবুক পেজগুলোর মাধ্যমে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া পোস্টের দাবি অনুযায়ী আর্জেন্টিনা জার্সি পরে গুলি চালানো ব্যক্তিটি একজন আওয়ামী লীগ কর্মী।
একই বিষয়ে ভিন্ন দুই দাবির প্রেক্ষিতে আসল তথ্য উদঘাটনে অনুসন্ধান চালায় রিউমর স্ক্যানার টিম।
আর্জেন্টিনার জার্সি পরে গুলি চালানো ব্যক্তির পরিচয় কী?
অনুসন্ধানে জানা যায়, আর্জেন্টিনার জার্সি পরে গুলি চালানো ব্যক্তিটির নাম মাহিদুর রহমান। তিনি পল্টন থানায় দায়িত্বরত একজন আনসার সদস্য। তথ্যটি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান হারুন অর রশীদ।
পরবর্তীতে মূলধারার ইলেকট্রনিক সংবাদমাধ্যম চ্যানেল টুয়েন্টি ফোর এর ফেসবুক পেজে গত ০৮ ডিসেম্বর ‘খোঁজ মিলল আর্জেন্টিনার জার্সি পরা সেই ব্যক্তির‘ শিরোনামে প্রচারিত একটি অনুসন্ধানী ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদনে আর্জেন্টিনার জার্সি পরিহিত পল্টন থানায় কর্মরত মাহিদুর রহমানের একটি ভিডিও সাক্ষাৎকার দেখানো হয়।
এছাড়াও একই বিষয়ে একই গণমাধ্যমের ফেসবুকে পেজে ‘কেন আর্জেন্টিনার জার্সি পরে নেমেছিলেন ‘একশনে’?’ শিরোনাম প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
যেখানে ভিডিও সাক্ষাৎকারে মাহিদুর বলতে শোনা যায়, ‘আমি পল্টন থানায় আনসার সদস্য হিসেবে কর্মরত আছি। ঘটনার আগে দুপুরের খাবারের পর আমি বিশ্রাম নিচ্ছিলাম। এ সময় আমাদের বিশেষ অ্যালার্ম বেজে ওঠে। ‘আমাদের প্রতি ওসি স্যারের নির্দেশনা রয়েছে যখন অ্যালার্ম বেজে উঠবে তখন যে যে অবস্থায় থাকবে, সে অবস্থায় থানার নিচে নেমে আসতে হবে। আমিও যে অবস্থায় ছিলাম সে অবস্থায় শুধু জুতা পরে নিচে নেমে আসি ও কাজ শুরু করি।’
চ্যানেল টুয়েন্টি ফোরে প্রচারিত ভিডিও প্রতিবেদন এবং নয়াপল্টনে আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে গুলি চালানোর দৃশ্য বিশ্লেষণ করে চ্যানেল টুয়েন্টি ফোরে সাক্ষাৎকার দেওয়া মাহিদুর রহমানের দৈহিক গঠন এবং চেহারার সাথে আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে শটগান হতে গুলি ছোঁড়া ব্যক্তির হুবহু মিল খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম।
অর্থাৎ, নয়াপল্টনে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষে আর্জেন্টিনার জার্সি পরে গুলি চালানো যেই ব্যক্তিকে আওয়ামী লীগ কর্মী নয়।
মূলত, গত ০৭ ডিসেম্বর বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে বিএনপি নেতা কর্মীদের অবস্থানকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। উক্ত সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশের সাথে আর্জেন্টিনার জার্সি পরে শটগান হতে এক ব্যক্তির গুলি ছোঁড়ার একটি ভিডিও ফেসবুকে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়। পরবর্তীতে উক্ত জার্সি পরা ব্যক্তিকে বিএনপির মিডিয়া সেলের ফেসবুক পেজ এবং বিএনপির অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে আওয়ামী লীগের কর্মী দাবি করে প্রচার করা হয়। তবে পুলিশ ও গণমাধ্যমের দেওয়া তথ্য এবং রিউমর স্ক্যানার টিমের নিজস্ব অনুসন্ধানে নিশ্চিত হওয়া যায় আওয়ামী লীগ কর্মী নয় বরং নয়াপল্টনে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশের সাথে জার্সি পরে গুলি চালানো ব্যক্তি ছিলেন পল্টন থানায় দায়িত্বরত আনসার সদস্য মাহিদুর রহমান।
প্রসঙ্গত, গত ০৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষ চলাকালীন বিএনপির কার্যালয়ের সামনের সড়কে লাঠি হাতে নিয়ে মহড়া দেয় ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
এই মহড়া চলাকালীন বিএনপির কর্মীদের ছোঁড়া ইট-পাটকেলের আঘাতে বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ কর্মী আহত হয়েছেন বলে গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়।
উল্লেখ্য, আর্জেন্টিনা জার্সি পরে গুলি চালানো ব্যক্তিকে বাংলাদেশের ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়ক সম্পাদক দাবি করেও ফেসবুকেপ্রচারিত হয়েছে। ইতিমধ্যে এই তথ্যটিকে মিথ্যা হিসেবে শনাক্ত করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।
সুতরাং, নয়াপল্টনে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষে আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে শটগান হতে গুলি ছোঁড়া আনসার সদস্যকে আওয়ামী লীগের কর্মী দাবি করে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
দেশ টিভি: আর্জেন্টিনার জার্সি পরে বিএনপির কার্যালয়ের সামনে পুলিশ
বাংলা ভিশন: আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের জার্সি পরে নয়াপল্টনে পুলিশের অ্যাকশন
ইনকিলাব: আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের জার্সি পরে বিএনপি কার্যালয়ে অ্যাকশনে পুলিশ
দ্য রিপোর্ট লাইভ: ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার জার্সি পরে নয়াপল্টনে পুলিশের অ্যাকশন
বার্তা বাজার: আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের জার্সি পরে নয়াপল্টনে পুলিশের অ্যাকশন
চ্যানেল২৪: খোঁজ মিলল আর্জেন্টিনার জার্সি পরা সেই ব্যক্তির
চ্যানেল২৪: কেন আর্জেন্টিনার জার্সি পরে নেমেছিলেন ‘একশনে’
আমার সংবাদ: ছাত্রলীগের মিছিল শোডাউন
বাংলা ভিশন: নয়াপল্টনে যুবলীগ-আওয়ামী লীগ মহড়া দিতে এসে নিজেরাই আহত