সম্প্রতি, “প্রেমে পড়লে মানুষের বুদ্ধি কমে যায়, বলছে গবেষণা’ শীর্ষক শিরোনামে বেশ কিছু গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন জাগোনিউজ২৪, বিডি ২৪ রিপোর্ট, যায়যায়দিন, দৈনিক আমাদের সময়।
এ বিষয়ে রেডিও গণমাধ্যম জাগো এফএম ৯৪.৪ এর ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রেমে পড়লে মানুষের বুদ্ধি কমে যায়, বলছে গবেষণা শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয় বরং এমন কোনো তথ্য আলোচিত গবেষণায় আসেনি।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে দেশীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো পড়ে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।
গত ২৯ জানুয়ারী অনলাইন সংবাদমাধ্যম ‘Jagonews24’ এর ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনের শুরুতে বলা হয়, “প্রেমে পড়লে নাকি মানুষের বুদ্ধি কমে যায়? কথাটি কতটুকু সত্য, চলুন জেনে নেওয়া যাক গবেষকরা কী বলছেন।”
প্রতিবেদনে গবেষণার বরাতে বলা হয়, “প্রেম পড়লে মানুষ অনেক বেশি সুখী বোধ করেন। প্রেমে পড়া মানুষকে সুখী করলেও মানসিক ক্ষমতার ওপর এর তীব্র প্রভাব পড়ে।”
জাগোনিউজ লিখেছে, “মজার বিষয় হলো, এই প্রভাব শুধু পুরুষদের মধ্যেই নয় নারীদের মধ্যেও দেখা গেছে। এ কারণেই গবেষকরা দাবি করেছেন, প্রেমে পড়লে আপনি সুখ অনুভব করবেন ঠিকই তবে বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মকাণ্ডে আগ্রহ ও কার্যকারিতা কমে যাবে। প্রেম প্রত্যেককে প্রভাবিত করে ও আমাদের ক্ষমতাকে একাধিক উপায়ে কমিয়ে দেয়।”
জাগো নিউজ জানিয়েছে, আলোচিত গবেষণাটি করেছেন নেদারল্যান্ডসের লেইডেন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপকরা।
জাগোনিউজসহ বাংলাদেশের অন্যান্য গণমাধ্যমে সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত খবরের সূত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ‘ব্রাইট সাইড’ নামে একটি ওয়েবসাইটের নাম।
পরবর্তীতে সামাজিক বিভিন্ন বিষয়ে কন্টেন্ট প্রকাশকারী ওয়েবসাইট ‘Bright Side’ এ আলোচিত প্রতিবেদনটি খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনটি পড়ে দেখা যায়, দেশীয় গণমাধ্যমে উক্ত প্রতিবেদনটি অনুবাদ করলেও ব্রাইটসাইডের প্রতিবেদনে ‘বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মকাণ্ডে আগ্রহ কমে যাওয়া’ শীর্ষক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
যদিও প্রতিবেদনের শিরোনামে বুদ্ধি কমে যায় শীর্ষক তথ্যই উল্লেখ করা হয়েছে।
পরবর্তীতে অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত গবেষণাপত্রটি ২০১৩ সালে প্রকাশ করেন নেদারল্যান্ডসের লেইডেন বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক হ্যান্ক ভ্যান স্টিনবার্গ, গুইডো পি.এইচ. ব্যান্ড ও জার্মানীর ড্রেসডেন ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজির শিক্ষক বার্নহার্ড হোমেল এবং যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. সান্দ্রা লাঙ্গেস্লাগ।
গবেষণাপত্রটি পড়ে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। উক্ত গবেষনার কোথাও বলা হয়নি যে প্রেমে পড়লে মানুষের বুদ্ধি কমতে পারে। বরং প্রেমে পড়ার ফলে মানুষের কাজ করার ক্ষমতা বা প্রোডাক্টিভিটি কমে যেতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে গবেষণা দলটির দুই সদস্যের সাথে কথা বলেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।
গবেষণা দলের অন্যতম সদস্য জার্মানীর ড্রেসডেন ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজির শিক্ষক বার্নহার্ড হোমেল রিউমর স্ক্যানারকে বলেছেন, “বুদ্ধি কমে যেতে পারে। এটি সম্ভবও কারণ জ্ঞানীয় নিয়ন্ত্রণ এবং বুদ্ধিমত্তার একে অন্যের সাথে সম্পর্ক আছে। তবে এটি নিশ্চিত নয় এবং আমাদের গবেষণায় এটি স্পষ্টভাবে প্রদর্শিত হয়নি। তাছাড়া গবেষণায় কোনো আইকিউ পরিমাপ করা হয়নি।”
গবেষণা দলের আরেক সদস্য যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. সান্দ্রা লাঙ্গেস্লাগও রিউমর স্ক্যানারকে বলেছেন, “আমাদের গবেষণা ছিল প্রেমে কে বেশি আসক্ত কে কম আসক্ত। আমরা যেহেতু প্রেমে পড়ার আগে এবং পরে কোনো পরীক্ষা করিনি তাই আমাদের গবেষণার মাধ্যমে প্রেমের মাধ্যমে বুদ্ধিমত্তা কমে এমন সিদ্ধান্তে আসা যাবে না।”
অর্থাৎ, প্রেমে পড়লে বুদ্ধি কমে শীর্ষক কোনো তথ্য আলোচিত গবেষণায় আসেনি।
মূলত, ২০১৩ সালে তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের চার গবেষক একটি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করেন যার মূল বিষয়বস্তু ছিল প্রেমের অনুভূতির কারণে মনোযোগসহ পারিপার্শ্বিক বিষয়ে কী ধরনের প্রভাব পড়ে সে বিষয়ে আলোকপাত করা। এ বিষয়ে সম্প্রতি দেশীয় গণমাধ্যমে ‘প্রেমে পড়লে মানুষের বুদ্ধি কমে যায়, বলছে গবেষণা’ শীর্ষক শিরোনামে সংবাদ প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু মানুষের বুদ্ধি কমে যাওয়া শীর্ষক কোনো তথ্য উক্ত গবেষণায় ছিল না বলে নিশ্চিত করেছেন গবেষণা দলের দুই সদস্য।
সুতরাং, গণমাধ্যমে গবেষণার বরাতে প্রেমে পড়লে মানুষের বুদ্ধি কমে যায় শীর্ষক দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে ; যা বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- Research Gate: Reduced cognitive control in passionate lovers
- Statement from Bernhard Hommel, Dresden University of Technology, Germany.
- Statement from Sandra J. E. Langeslag, University of Missouri – St. Louis.