বাংলাদেশ ও সেভেন সিস্টার্স ইস্যুতে নয়াদিল্লি জরুরি বৈঠক ডেকেছে জানিয়ে এনডিটিভি কোনো সংবাদ প্রকাশ করেনি

গত ৬ আগস্ট ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে দেওয়া এক অনলাইন সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশকে কেউ অস্থিতিশীল করতে চাইলে এর প্রভাব চারদিকে ছড়িয়ে পড়বে। প্রতিবেশী মিয়ানমার, ভারতের সেভেন সিস্টার্স এবং পশ্চিমবঙ্গে ছড়িয়ে পড়বে অস্থিরতা।’ এই মন্তব্যের পর থেকেই বাংলাদেশের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভারতের সেভেন সিস্টার্স রাজ্যগুলো নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়।

একই সময়ে, ছাত্র জনতার গণ অভ্যুত্থানের পর সারা দেশে দেয়ালে দেয়ালে গ্রাফিতি আঁকা হচ্ছে। তবে, কয়েকটি গ্রাফিতিতে বাংলাদেশের মানচিত্র ভুলভাবে আঁকার কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি করেছে।

এই পরিস্থিতিতে, ভারতের মূলধারার গণমাধ্যম এনডিটিভি তাদের টুইটার অ্যাকাউন্টে “New Delhi calls for emergency meeting as BD plans on invading Seven Sister (বাংলাদেশের সেভেন সিস্টার আক্রমণের পরিকল্পনার কারণে নয়াদিল্লি জরুরি বৈঠক ডেকেছে)” শিরোনামের একটি সংবাদ তাদের এক্স অ্যাকাউন্টে প্রচার করেছে দাবিতে দুটি স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। স্ক্রিনশটগুলোর একটি তে ভুলভাবে আঁকা মানচিত্রের ছবি এবং অন্যটিতে ‘Shadman Shafin’ নামের এক ব্যক্তির পোস্টের স্ক্রিনশট দেখা যায়, যেখানে ক্যাপশন ছিল, “ডাকাত-ফাকাত ধরতে পারব না। সেভেন সিস্টারস দখল করতে হইলে জানাইয়েন।”

সিস্টার্স ইস্যুতে

‘প্রিয়তমা’ নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে প্রচারিত পোস্টে প্রথম স্ক্রিনশটটি যুক্ত করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, “এমন ম্যাপ আঁকবেন যেনো পাশের দেশে কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়ে যায়।”

‘MD Rasel’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে দ্বিতীয় স্ক্রিনশটটি যুক্ত করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, “একজন ফেইসবুকে মজা করে পোস্ট দিয়েছে আর ইন্ডিয়ার NDTV’র মত এতবড় মাপের নিউজ চ্যানেল সেটা কত হাইলাইট করে প্রচার করছে।”

উক্ত দাবিগুলোতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি এক্স-এ (পূর্বের টুইটার) এমন কোনো পোস্ট করেনি। গণমাধ্যমটির অন্য একটি পোস্টের স্ক্রিনশট এডিট করে এই ভুয়া দাবি ছড়ানো হয়েছে।

দাবিকৃত স্ক্রিনশটগুলোতে দেখা যায়, পোস্টটি ০৯ আগস্ট রাত ১১টা ২৪ মিনিটে প্রকাশিত হয়েছে। এই সূত্র ধরে এনডিটিভির এক্স অ্যাকাউন্ট অনুসন্ধান করে একই সময়ে প্রকাশিত একটি পোস্ট পাওয়া যায়। সেই পোস্টের শিরোনাম ছিল, “Bangladeshi Students Oversee Traffic Management As Cops Go On Strike” যার বাংলা ভাবানুবাদ, “বাংলাদেশে পুলিশ ধর্মঘটে থাকায় শিক্ষার্থীরা ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করছে।”

Comparison: Rumor Scanner.

আমরা এনডিটিভির এক্স অ্যাকাউন্টওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ করেও “New Delhi calls for emergency meeting as BD plans on invading Seven Sister (বাংলাদেশের সেভেন সিস্টার আক্রমণের পরিকল্পনার কারণে নয়াদিল্লি জরুরি বৈঠক ডেকেছে)” শিরোনামের কোনো সংবাদ পাইনি।

এমনকি ভারত বা বাংলাদেশের অন্য কোনো গণমাধ্যমেও এ ধরনের সংবাদের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। বিভিন্ন গণমাধ্যমের (,) সূত্রে জানা যায়, গত ০৬ আগস্ট ভারতের সংসদে অনুষ্ঠিত সর্বদলীয় বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন। তবে সেভেন সিস্টার্স প্রসঙ্গে কোনো আলোচনার কথা বিশ্বাসযোগ্য কোনো সূত্রে পাওয়া যায়নি।

আমরা এই বিষয়ে এনডিটিভির সাথে যোগাযোগ করি। এনডিটিভির দিল্লি অফিসের সাংবাদিক কদম্বিনী শর্মা আমাদের জানান, বাংলাদেশ আক্রমণ করছে এমন কোনো সংবাদ এনডিটিভি প্রচার করেনি। এটি একটি ভুয়া স্ক্রিনশট। 

তিনি আরও বলেন, এখানে কোনো “সেভেন সিস্টার্স” সমস্যা নেই। বাংলাদেশের পরিস্থিতি এবং সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলিতে ভারতীয়দের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে ভারতের সরকারের মধ্যে বিভিন্ন বৈঠক হয়েছে। প্রতিবেশী দেশে এমন কিছু ঘটলে, যে কোনো সরকারের জন্য এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া স্বাভাবিক। এবং মোহাম্মদ ইউনুস যা বলেছেন, তা সঠিক।

সুতরাং, “বাংলাদেশের সেভেন সিস্টার আক্রমণের পরিকল্পনার কারণে নয়াদিল্লি জরুরি বৈঠক ডেকেছে” শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা এবং এই দাবিতে এনডিটিভির এক্স পোস্টের স্ক্রিনশটটি সম্পাদনার মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img