সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীদের পদত্যাগের গুজব 

সম্প্রতি, ক্ষেপেছে সেনাবাহিনী পদত্যাগ করতে শুরু করেছে এমপি মন্ত্রীরা পাখির মত গুলি করে হত্যা শুরু শীর্ষক থাম্বনেইলে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে।

মন্ত্রীদের পদত্যাগের

উক্ত দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি ভিডিওটি দেখা হয়েছে ১১ হাজার বার। ভিডিওটিতে সাড়ে চারশতবারের বেশি পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশের নবগঠিত সরকারের মন্ত্রী এবং দ্বাদশ জাতীয় সংসদের কোনো সদস্য পদত্যাগ করেননি বরং ভিন্ন প্রেক্ষাপটের পূর্বে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। উক্ত ভিডিওটিতে কোথাও মন্ত্রী বা সংসদ সদস্যদের পদত্যাগের দাবি সম্পর্কিত প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি। এমনকি ভিডিওটিতে আলোচিত দাবির সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কোনো ভিডিও কিংবা বক্তব্যেরও উল্লেখ পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ ভিডিওটি’র শিরোনাম ও থাম্বনেইলে প্রচারিত দাবিটির সাথে বিস্তারিত অংশের অসামঞ্জস্যতা রয়েছে।

আলোচিত ভিডিওটিতে প্রচারিত দাবির বিষয়ে আরও অনুসন্ধানে ভিডিওটিতে দেখানো ভিডিও ক্লিপগুলোর বিষয়ে আলাদাভাবে অনুসন্ধান চালায় রিউমর স্ক্যানার টিম।

ভিডিও যাচাই ০১

আলোচিত ভিডিওটিতে প্রথম দিকের ক্লিপটিতে প্রদর্শিত বেসরকারি ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যম দেশ টিভি এর লোগো’র সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে বেসরকারি ইলেকট্রনিক মিডিয়া Desh TV এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৮ জানুয়ারি “আওয়ামী লীগ একদলীয় শাসন কায়েম করেছে: মঈন খান” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিও প্রতিবেদনের একটি অংশই আলোচিত ভিডিওতে যুক্ত করা হয়েছে। 

Video Comparison: Rumor Scanner

ভিডিও থেকে জানা যায়, আওয়ামী লীগ দেশে এক দলীয় বাকশাল শাসন কায়েম করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান। তিনি বলেছেন, ‘সারা বিশ্ব বলছে গত ৭ জানুয়ারি যে নির্বাচন হয়েছে তা সুষ্ঠু হয়নি।’ গত ২৮ জানুয়ারি রাজধানীতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গণফোরাম এবং বাংলাদেশ পিপলস পার্টির আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।

তবে উক্ত প্রতিবেদনে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের দায়িত্ব ছাড়ার ব্যাপারে কোনো তথ্য উপস্থাপিত হয়নি।

ভিডিও যাচাই ০২

প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ অনুসন্ধান করে, Sheershanews নামক ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ৭ নভেম্বর “বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ব্যাপকহারে গ্রেপ্তার করায় উদ্বিগ্ন জাতিসংঘ” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিওর একটি অংশই আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওতে ব্যবহার করা হয়েছে।

Video Comparison: Rumor Scanner

ভিডিও থেকে জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় বিরোধী দলের অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। 

আলচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর আরও একটি ভিডিও ফুটেজে বিজিবি’র সিপাহি রহিস উদ্দিনের মৃত্যু নিয়ে কথা বলা হয়। উক্ত বিষয়ের সাথে আলোচিত দাবির সাথে কোনো সম্পর্ক নেই।

পরবর্তীতে আলোচিত দাবির বিষয়ে গুগলে অনুসন্ধানে জাতীয় দৈনিক কালবেলা’র ওয়েবসাইটে গত ১ ফেব্রুয়ারি “ঝিনাইদহ-১ আসনে আব্দুল হাইয়ের এমপি পদ স্থগিত” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, হাইকোর্ট ঝিনাইদহ-১ (শৈলকুপা) আসনের নির্বাচনী ফলাফলের গেজেট দুই মাসের জন্য স্থগিত করেছে। গত ০১ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামানের একক বেঞ্চ এ আদেশ দিয়েছেন।

এই উক্ত ঘটনার সাথেও আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর কোনো সম্পর্ক নেই।

এছাড়া, দেশিয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সংসদ সদস্য এবং মন্ত্রীদের পদত্যগের দাবির বিষয়ে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।

মূলত, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান গত ২৮ জানুয়ারি রাজধানীতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গণফোরাম এবং বাংলাদেশ পিপলস পার্টির আলোচনায় বলেন, আওয়ামী লীগ দেশে এক দলীয় বাকশাল শাসন কায়েম করেছে। সারা বিশ্ব বলছে গত ৭ জানুয়ারি যে নির্বাচন হয়েছে তা সুষ্ঠু হয়নি। এই তথ্যের ভিত্তিতে সেসময় বেসরকারি ইলেকট্রনিক মিডিয়া দেশ টিভিতে সংবাদ প্রচারিত হয়। এছাড়া একই বছরের নভেম্বরে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় বিরোধী দলের অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করায় জাতিসংঘ উদ্বেগ প্রকাশ করে। এই তথ্যের ভিত্তিতে সেসময় শীর্ষ সংবাদ নামক ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিও প্রচারিত হয়। সম্প্রতি, উক্ত পৃথক দুইটি সংবাদের ভিডিও ফুটেজ একত্রে যুক্ত করে জাতীয় সংসদের সদস্য ও মন্ত্রীরা পদত্যাগ করছে দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, সাম্প্রতিক সময়ে সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীদের পদত্যাগের কোনো ঘটনা ঘটেনি।

সুতরাং, ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপটের পুরোনো সংবাদ প্রতিবেদনের ফুটেজ যুক্ত করে জাতীয় সংসদের সদস্য ও মন্ত্রীরা পদত্যাগ করছে দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img