বিগত কয়েক বছর ধরেই “ইন্দোনেশিয়ার বেশীরভাগ স্কুলে প্রতি বছর একটি অন্য রকম দিবস পালন করা হয়।” শীর্ষক শিরোনামের একটি পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার হয়ে আসছে।
যা দাবি করা হচ্ছে
গত ৯ নভেম্বর ফেসবুকে ‘প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা ✔ ২০২০’ নামক গ্রুপে ‘Abdul Kaium‘ নামক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রকাশিত একটি পোস্টে (আর্কাইভ) দাবি করা হয়, “ইন্দোনেশিয়ার বেশীরভাগ স্কুলে প্রতি বছর একটি অন্য রকম দিবস পালন করা হয়। ঐদিন সব মা কে স্কুলে আমন্ত্রণ জানানো হয়। পরে সব ছাত্র-ছাত্রীকে স্কুল মাঠে নিজ নিজ মায়ের দুই পা পানি দিয়ে পরিস্কার করে মুছে দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়, যেন ভবিষ্যতে তারা বাবা-মায়ের যত্ন নিতে ভুল না করে। ফল স্বরুপ ইন্দোনেশিয়ায় আজ পর্যন্ত কোন বৃদ্ধাশ্রম গড়ে উঠেনি।”
পোস্টে মায়েদের পা ধোয়ার একটি ছবিও সংযুক্ত রয়েছে।
সম্প্রতি ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে এবং এখানে।
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে এবং এখানে।
বিগত বছরগুলোয় ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন –
২০২১ সাল – এখানে এবং এখানে। (আর্কাইভ – এখানে এবং এখানে)
২০২০ সাল – এখানে এবং এখানে। (আর্কাইভ – এখানে এবং এখানে)
২০১৯ সাল – এখানে এবং এখানে। (আর্কাইভ – এখানে এবং এখানে)
২০১৮ সাল – এখানে এবং এখানে। (আর্কাইভ – এখানে এবং এখানে)
২০১৭ সাল – এখানে এবং এখানে। (আর্কাইভ – এখানে এবং এখানে)
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ইন্দোনেশিয়ায় মায়েদের পা ধোয়া দিবস থাকা এবং বৃদ্ধাশ্রম না থাকার দাবিটি সঠিক নয় বরং দেশটিতে শিশুসহ নানা পেশার মানুষেরা তাদের মায়েদের পা ধোয়ার অনিয়মিত কর্মসূচীতে অংশ নেয়। তাছাড়া দেশটিতে বৃদ্ধাশ্রমও রয়েছে।
রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতির মাধ্যমে ২০১৭ সালের ৯ জানুয়ারী ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘Navbharat Times’ এর ওয়েবসাইটে “यहाँ माँ के पैर साफ़ करते हैं बच्चे, एक भी वृद्धाश्रम नहीं?” (এখানে শিশুরা মায়ের পা পরিষ্কার করে, সেখানে কি একটি বৃদ্ধাশ্রমও নেই?) শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, “ইন্দোনেশিয়ার স্কুলে বাচ্চাদের সাথে বাবা-মায়ের পা স্পর্শ করা কোন নিয়ম বা ঐতিহ্য নয়, যেমনটা এখানকার কিছু মানুষ মেনে নিয়েছে। এটি গত বছর মা দিবসে জাতীয় স্কাউট দ্বারা আয়োজিত একটি অনুষ্ঠান ছিল। দ্বিতীয়ত, এটি একটি স্কুল ইভেন্ট ছিল না এবং ইন্দোনেশিয়ার সমস্ত স্কুলে এমন কোনও বিশেষ দিন নেই যখন বাচ্চাদের বলা হয় যে আমরা আপনার পিতামাতাকে ডাকছি, তাদের পা পরিষ্কার করুন, এটি তাদের সম্মান দেবে। এমন বিশেষ অনুষ্ঠানের জন্য কেউ তার প্রশংসা করতে চাইলে সেটা ভিন্ন কথা, কিন্তু এটাকে ঐতিহ্য বা নিয়ম বলা ঠিক নয়।
পরবর্তীতে ইন্দোনেশিয়ার অন্যতম বৃহৎ অনলাইন মিডিয়া ‘Tribunnews’ এর ওয়েবসাইটে ২০১৬ সালের ২১ ডিসেম্বর Olivia Zalianty Menangis Basuh Kaki Ibu Bersama Anggota Pramuka di Cibubur” শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।প্রতিবেদনে সংযুক্ত একটি ছবির সাথে আলোচিত ছবিটির হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ছবির ক্যাপশনে লেখা রয়েছে, “২০১৬ সালের মা দিবসের স্মরণে ন্যাশনাল কোয়ার্টার স্কাউট আন্দোলন এবং কোয়ার্নাস মাদাররা বুধবার (২১/১২/২০১৬) পূর্ব জাকার্তার সিবুবুর এলাকার উইলাদাটিকা রিক্রিয়েশনাল পার্কের ঝর্ণা এলাকায় একটি গণ “মায়ের পা ধোয়া” কর্মসূচীর আয়োজন করে। এই কর্মসূচীতে ৫০০ শিশু এবং ৫০০ জন মা অংশগ্রহণ করেন।”
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, “উক্ত কর্মসূচীতে সেখানকার প্রশাসক, কর্মকর্তা, আয়োজক এবং সাধারণ মানুষেরাও অংশ নেন। শুধু জাকার্তাই নয়, আরও কয়েকটি স্থানেও এই ধরনের কর্মসূচী পালিত হয় সেদিন।
ইন্দোনেশিয়ায় বৃদ্ধাশ্রম নেই?
অনুসন্ধানে ইন্দোনেশিয়ার ইংরেজি ভাষার দৈনিক ‘The Jakarta Post’ পত্রিকার ওয়েবসাইট ২০১৭ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারী “1,111 elderly people live in Jakarta social services nursing homes” শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
জাকার্তা সোশ্যাল অ্যাফেয়ার্স এজেন্সির বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়, “বর্তমানে শহরের মালিকানাধীন তিনটি নার্সিং হোমে ১,১১১ জন বয়স্ক ব্যক্তিকে দেখাশোনা করা হচ্ছে।”
এছাড়া, ২০১৮ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারী জাকার্তা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক জাকার্তার বৃদ্ধাশ্রম বিষয়ে একটি গবেষণা প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছেন। গবেষণা প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে।
মূলত, ইন্দোনেশিয়ায় জাতীয় মা দিবস উদযাপনে কিছু শহরে শিশুসহ নানান পেশার মানুষেরা মায়েদের পা ধোয়ার অনিয়মিত একটি কর্মসূচী পালন করেন। এই কর্মসূচীর জন্য আলাদা কোনো দিবস বা ঐতিহ্য নেই দেশটিতে। তাছাড়া দেশটিতে বৃদ্ধাশ্রমও রয়েছে। কিন্তু উক্ত কর্মসূচীর ছবি ব্যবহার করে বিগত কয়েক বছর ধরেই “ইন্দোনেশিয়ার স্কুলগুলোতে প্রতি বছর মায়েদের পা ধোয়া কর্মসূচী পালিত হয়। এজন্য দেশটিতে কোনো বৃদ্ধাশ্রম নেই।” শীর্ষক দাবিতে প্রচার হয়ে আসছে।
উল্লেখ্য, ইন্দোনেশিয়ায় শিশুদের নিজ নিজ মায়েদের পা ধোয়া কর্মসূচী অনিয়মিতভাবে পালিত হয়ে থাকে। গেল বছরও শতাধিক শিশুদের নিয়ে মা দিবসে এমন একটি আয়োজনের কথা জানিয়েছিল সংবাদ সংস্থা রয়টার্স।
প্রসঙ্গত, বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই (চীন, ভারত) সন্তান কর্তৃক মায়েদের পা ধোয়া কর্মসূচী পালন করা হয়ে থাকে।
সুতরাং, ইন্দোনেশিয়ায় মায়েদের পা ধোয়া দিবস থাকা এবং বৃদ্ধাশ্রম না থাকার দাবি মিথ্যা।