সম্প্রতি “তুরস্কের পর দ্বিতীয় মুসলিম দেশ হিসেবে ফিফা বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠেছে মরক্কো!” শীর্ষক একটি দাবি গণমাধ্যম ও ফেসবুকে প্রচারিত হচ্ছে।
ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
উক্ত দাবিতে গণমাধ্যমে প্রকাশিত কিছু প্রতিবেদন দেখুন সময় টিভি, চ্যানেল২৪, নয়া শতাব্দী, সময়ের আলো, মানবজমিন(কলাম) এবং নয়াদিগন্ত।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, দ্বিতীয় নয় বরং প্রথম মুসলিম দেশ হিসেবে কাতার বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল খেলেছে মরক্কো। তাছাড়া, তুরস্ক ধর্ম নিরপেক্ষ দেশ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ১০ ডিসেম্বর চলমান কাতার বিশ্বকাপের তৃতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে পর্তুগালকে ১-০ গোলে পরাজিত করে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে মরক্কো।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরবর্তীতে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে “তুরস্কের পর দ্বিতীয় মুসলিম দেশ হিসেবে ফিফা বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে মরক্কো।” শীর্ষক একটি তথ্য ছড়িয়ে পড়ে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০০২ সালে ফিফা বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলে তুরস্ক। ২৬ জুনের ঐ ম্যাচে ব্রাজিলের কাছে ১-০ গোল ব্যবধানে হেরে বিশ্বকাপ মিশন শেষ করে তুরস্ক।
কি-ওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতির মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি সংস্থা ‘U.S. Department of State’ এর ওয়েবসাইটে ২০২২ সালের ২ জুন “2021 Report on International Religious Freedom: Turkey” শিরোনামে তুরস্কের ধর্ম বিষয়ে একটি রিপোর্ট খুঁজে পাওয়া যায়।
রিপোর্টে বলা হয়,”তুরস্কের সংবিধানে দেশকে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।”
পরবর্তীতে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘BBC’ এর ওয়েবসাইটে ২০১২ সালের ২৪ অক্টোবর “Is Turkey’s secular system in danger?” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনেও তুরস্ককে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে অবহিত করা হয়েছে।
অর্থাৎ, প্রথম মুসলিম দেশ হিসেবে তুরস্ক ২০০২ সালে ফিফা বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলেছে শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, তুরস্ক মুসলিম নয় বরং ধর্মনিরপেক্ষ দেশ।
পরবর্তীতে মরক্কোর বিষয়ে কিওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতিতে অনুসন্ধান করে ‘U.S. Department of State’ এর ওয়েবসাইটে ২০২২ সালের ২ জুন “2021 Report on International Religious Freedom: Morocco” শিরোনামে তুরস্কের ধর্ম বিষয়ে একটি রিপোর্ট খুঁজে পাওয়া যায়।
রিপোর্টে বলা হয়,”মরক্কোর সংবিধান অনুযায়ী, দেশটিতে রাষ্ট্রীয় ধর্ম ইসলাম।”
পরবর্তীতে মরক্কোর সংবিধান অনুসন্ধানেও একই তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়৷
অর্থাৎ, মরক্কো মুসলিম রাষ্ট্র।
মূলত, গত ১০ ডিসেম্বর চলমান কাতার বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে পর্তুগালকে পরাজিত করে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে মরক্কো। পরবর্তীতে গণমাধ্যম ও ফেসবুকে “তুরস্কের পর দ্বিতীয় মুসলিম দেশ হিসেবে ফিফা বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে মরক্কো।” শীর্ষক একটি তথ্য ছড়িয়ে পড়ে। তবে প্রকৃতপক্ষে, তুরস্ক ইসলামিক কান্ট্রি নয় বরং সংবিধান অনুযায়ী তুরস্ক একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনসংখ্যা রয়েছে। অপরদিকে মরক্কোর সংবিধানে দেশটিকে মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবেই উল্লেখ করা হয়েছে।
সুতরাং, তুরস্কের পর দ্বিতীয় মুসলিম দেশ হিসেবে ফিফা বিশ্বকাপে মরক্কোর সেমিফাইনালে যাওয়ার দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- FIFA: Morocco V Portugal Quarter Final
- U.S. Department of State: 2021 Report on International Religious Freedom: Turkey
- U.S. Department of State: 2021 Report on International Religious Freedom: Morocco
- BBC: Is Turkey’s secular system in danger?
- Morocco: Morocco’s Constitution of 2011