মহিউদ্দিন রনি কি রেলওয়েতে চাকরি পেয়েছেন ?

সম্প্রতি রেলওয়ের সঙ্গে কাজের সুযোগ পাচ্ছেন মহিউদ্দিন রনি” শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য ও সংবাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ছড়িয়ে পড়া এ তথ্যটিকে অনেকে রেলওয়েতে মহিউদ্দিন রনি চাকরি পেলেন হিসেবে প্রচার করছেন।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, মহিউদ্দীন রনি রেলওয়েতে চাকরি পেয়েছেন শীর্ষক দাবিটি প্রচারের বিষয়টি সঠিক নয়। তিনি রেলওয়েতে চাকরি পাননি বরং রেলওয়ের ত্রৈমাসিক অংশীজন সভায় অংশগ্রহণ করে পরামর্শ দেয়ার সুযোগ পেয়েছেন কেবল। 

মূলত তাকে বাংলাদেশ রেলওয়ের যাত্রীসেবা সংক্রান্ত প্রতি তিন মাস অন্তর অনুষ্ঠিত হওয়া অংশীজন সভায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যার মাধ্যমে তিনি সেই সভায় নিয়মিত আসতে পারবেন এবং তার দাবিগুলো আলোচনা করার পাশাপাশি পরামর্শ প্রদান করতে পারবেন। 

কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে বাংলাদেশের মূলধারার অনলাইন গণমাধ্যম, NewsBangla24.com এ গতকাল অর্থাৎ ২৫ জুলাই “রেলের সঙ্গে বৈঠকের পর রনির কর্মসূচি স্থগিত” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

রনি
Screenshot newsbangla 24

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, রেল মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সোমবার টানা ৪ ঘণ্টার বৈঠকের পর নিজের কর্মসূচি স্থগিত করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনি। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রেলওয়ের উচ্চপদস্থ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা। বৈঠক শেষে রেল সচিব হুমায়ুন কবির জানান, রনিকে রেলের অংশীজন সভার প্রতিনিধি করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

রেল সচিবকে উদ্ধৃত করে গণমাধ্যমটি জানায়, “বাংলাদেশ রেলওয়ের একটি কমিটি আছে। তিন মাস পর পর যেটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে মূলত যাত্রীদের কীভাবে সুবিধা বাড়ানো যায়, কীভাবে কাজ করা যায় এগুলো নিয়ে সভায় আলোচনা করা হয়। রনিকে এই অংশীজন সভায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে৷ ফলে তিনি নিয়মিত সেই মিটিংয়ে আসতে পারবেন। তার এই যে দাবিগুলো রয়েছে, সেগুলোর নিয়ে তিনি সেখানে আলোচনা করতে পারবেন এবং মনিটরিং করতে পারবেন।”

এছাড়া মূলধারার আরেকটি অনলাইন গণমাধ্যম Jagonews24.com এ একই দিনে “রনিকে রেলওয়ের অংশীজন কমিটিতে রাখা হবে: রেলসচিব” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot Jagonews 24 website

এই প্রতিবেদনটিতেও রেলসচিব হুমায়ুন কবীরকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, রনিকে রেলের অংশীজন কমিটিতে রাখা হবে। যাতে তিনি তার পরামর্শ ফোরামে বলতে পারেন।

পরবর্তীতে অনলাইন গণমাধ্যম Bangladesh Times এর ফেসবুক পেজে (আর্কাইভ) আন্দোলনরত শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনিকে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের একটি ভিডিও ফুটেজ খুঁজে পাওয়া যায়। সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের এই ভিডিওর তিন মিনিট সময়কালে মহিউদ্দিন রনি বলেন, “অংশীজন কমিটিতে অংশগ্রহণটা কোনো টাকা-পয়সার বিনিময়ে না। এখানে কোনো ব্যক্তিগত সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে না। এটা একদম ক্লিয়ার।” অর্থাৎ এটি অর্থের বিনিময়ে কোন কাজ বা চাকরি নয়।

বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার মো: শরিফুল আলমের সাথে রিউমর স্ক্যানারের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তিনি রনিকে চাকরি দেয়া হয়নি বলে নিশ্চিত করে বলেন,

এটা কোনো চাকরি বা জব না। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী তিন মাস পর পর বাংলাদেশ রেলওয়ের একটি সভা হয়। এই মিটিংয়ে রেলওয়ের যারা স্টেকহোল্ডার যেমন, সাধারণ যাত্রী, যাত্রী কল্যান সমিতির প্রতিনিধিরা আসে এই মিটিংয়ে। এই মিটিংয়ে তাদের যে বক্তব্য সেটা তারা তুলে ধরার সুযোগ পায়। এখন থেকে রনিও এই সুযোগটি পাবেন। এখন যে দাবিগুলো তিনি রাস্তায় করছেন, সেগুলো সরাসরি রেলকে বলার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে কিছু না।

এছাড়া মূলধারার গণমাধ্যম ভোরের কাগজে ২০২২ সালের ২৫ মে “যাত্রীসেবার মান বাড়াতে চট্টগ্রামে রেলওয়ের অংশীজন সভা” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি প্রতিবেদনে বাংলাদেশ রেলওয়ের অংশীজন সভা আয়োজন সম্পর্কে জানা যায়। 

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, রেলওয়ের বাণিজ্যিক বিভাগ চট্টগ্রামের উদ্যোগে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের ভিআইপি লাউঞ্জে অংশীজন সভা অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে যাত্রীসেবা ও ট্রেন যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরো উন্নত করতে যাত্রীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ব্যক্তিদের নিয়ে এই সভার আয়োজন করা হয়। এতে বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক প্রীতম দাশ, বিজিএমইএ’র ডেপুটি সেক্রেটারি আব্দুল আউয়াল, কৃষি ব্যাংক কর্মকর্তা এ. কে. এম মনিরুজ্জামান, বুকিং সহকারী গিয়াস উদ্দিনসহ আরও অনেকে।

অর্থাৎ রেলওয়ের অংশীজন সভায় বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ অংশগ্রহণ করে থাকেন।

বিভ্রান্তির নমুনা

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ ও পেজে রেলওয়ের সঙ্গে কাজের সুযোগ পাচ্ছেন মহিউদ্দিন রনি” শীর্ষক তথ্যটিতে দেওয়া কাজের সুযোগের ব্যাপারটি চাকরি দেয়া হয়েছে হিসেবে নেওয়ার ফলে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়ে। এটিকে রেলওয়েতে চাকরির সুযোগ ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ব্যবহারকারীরা বিভিন্ন মন্তব্য করছেন। এমন কিছু মন্তব্য দেখুন-  

মূলত, টাকা কাটার পরও ট্রেনের টিকিট না পেয়ে গত ৭ জুলাই থেকে ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনে ৬ দফা দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনি। অবশেষে গতকাল সোমবার রেল মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে টানা ৪ ঘণ্টার বৈঠকের পর নিজের এই কর্মসূচি স্থগিত করেন তিনি। এ সময় তাকে রেলের অংশীজন সভার প্রতিনিধি করার প্রস্তাব করা হয়। যার মাধ্যমে তিনি সেই সভায় তার দাবিগুলো আলোচনা করতে এবং মনিটরিং করতে পারবেন। যেটি মূলত কোনো চাকরি নয়। এখানে অন্যান্য সাধারণ মানুষ ও সংগঠনও অংশগ্রহণ করে থাকেন এবং এই সভা প্রতি তিন মাস অন্তর একবার অনুষ্ঠিত হয়ে। রেলওয়ের পক্ষ থেকে অংশীজন সভায় অংশগ্রহণ করে মহিউদ্দিন রনিকে যাত্রীসেবা উন্নয়নে কাজ করার এই সুযোগকে অনেক ব্যবহারকারী তাকে রেলওয়েতে চাকরি দেওয়া হয়েছে হিসেবে নিয়ে প্রচার করছেন। 

সুতরাং, রেলওয়ের তিন মাস অন্তর অনুষ্ঠিত হওয়া অংশীজন সভায় অংশগ্রহণ করে যাত্রীসেবা উন্নয়নে কাজ করার সুযোগকে মহিউদ্দিন রনি রেলওয়েতে চাকরি পেয়েছেন কিংবা তাকে চাকরি দেয়া হয়েছে হিসেবে নেয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

NewsBangla24.com: রেলের সঙ্গে বৈঠকের পর রনির কর্মসূচি স্থগিত

Jagonews24.com: রনিকে রেলওয়ের অংশীজন কমিটিতে রাখা হবে: রেলসচিব

Bangladesh Times: Mohiuddin Rony Live

আরও পড়ুন

spot_img