সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ছবি প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, “ব্রেকিং নিউজ এবার বৈধ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম ঘোষণা করেছেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীজি। আজ দিল্লির হায়দরাবাদ হাউজে এক বৈঠকে যোগ দিয়ে তিনি এই কথা জানিয়েছেন।। এই নিয়ে ৪ টি দেশ বৈধ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার নাম ঘোষণা করলেন।”

এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
এরূপ দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শেখ হাসিনাকে বৈধ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ঘোষণা দেননি। প্রকৃতপক্ষে কোনোরকম নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই ভিন্ন ঘটনার ছবি ব্যবহার করে আলোচিত দাবি প্রচার করা হয়েছে। এবং এখন পর্যন্ত কোনো দেশই শেখ হাসিনাকে বৈধ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ঘোষণা করেনি।
অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলো পর্যবেক্ষণ করলে তাতে আলোচিত দাবিটির সপক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। এছাড়া, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলেও মূলধারার গণমাধ্যম বা কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে আলোচিত দাবিটির সপক্ষে কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে সংযুক্ত আরব আমিরাত ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘আল বায়ান’ এর ওয়েবসাইটে গত ৯ এপ্রিলে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে নানা ছবিরও সংযুক্তি পাওয়া যায় যার একটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিটির মিল পাওয়া যায়। ছবিটির বর্ণনায় বলা হয়, “নরেন্দ্র মোদী রীম আল হাশিমি ও মোহাম্মদ আল হুসেইনির সঙ্গে করমর্দন করেন।” (অনূদিত)

ছবির প্রেক্ষাপটের বিষয়ে প্রতিবেদনটিতে থেকে জানা যায়, “দুবাইয়ের যুবরাজ, সংযুক্ত আরব আমিরাতের উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রী, মহামান্য শেখ হামদান বিন মোহাম্মদ বিন রাশিদ আল মাকতুম গতকাল (৮ এপ্রিল) ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।… সাক্ষাতকালে উভয় পক্ষের মধ্যে দু’দেশের কৌশলগত অংশীদারত্ব এবং সকল ক্ষেত্রে এর দৃষ্টান্তমূলক অগ্রগতির বিষয়ে আলোচনা হয়। উভয় দেশের রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও দৃষ্টিভঙ্গির মিলের প্রেক্ষিতে এই অংশীদারত্ব আরও জোরদার করার লক্ষ্যে একযোগে এগিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করা হয়। এই অংশীদারত্বের ভিত্তি হলো সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান ঐতিহাসিক সম্পর্ক এবং উভয় দেশের জনগণের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, যা টেকসই উন্নয়নের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হবে।” (অনূদিত)
এছাড়াও, ভারতের মুম্বাইয়ে থাকা সংযুক্ত আরব আমিরাতের কনস্যুলেট জেনারেলের নামে পরিচালিত ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টেও গত ৮ এপ্রিলে প্রচারিত নানা ছবির সাথে আলোচিত ছবিটিরও সংযুক্তি পাওয়া যায়।
উল্লিখিত বৈঠকে হওয়া আলোচনার বিষয়ে অনুসন্ধান করলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘টাইমস অফ ইন্ডিয়া’ ও ‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ সূত্রে জানা যায়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভারত-সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিস্তৃত কৌশলগত অংশীদারত্ব আরও সুদৃঢ় করার উপায় নিয়ে আলোচনা করেছেন — বিশেষ করে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, প্রতিরক্ষা, জ্বালানি, প্রযুক্তি, শিক্ষা, ক্রীড়া এবং জনগণের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্র নিয়ে আলোচনা করেছেন।
এছাড়াও, বৈঠকের বিষয়ে দুবাই সরকারের মিডিয়া অফিসের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, বৈঠকে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ভারতের গভীরতর কৌশলগত অংশীদারত্ব নিয়ে আলোচনা করা হয়। দুদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করার গুরুত্বের ওপর জোর দেয়। এছাড়াও বৈঠকে বিনিয়োগ, বাণিজ্য, পর্যটন, শিল্প, অবকাঠামো, লজিস্টিক্স, জ্বালানি, খাদ্য নিরাপত্তা, অগ্রসর প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ডিজিটাল রূপান্তর এবং মহাকাশ খাতসহ বিভিন্ন কৌশলগত ক্ষেত্রের বিষয়ে আলোচনা হওয়ার উল্লেখ পাওয়া যায়।
তবে কোথাও শেখ হাসিনাকে বৈধ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার বিষয়ে উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
বরং, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণ করার পর গত বছরের ৮ আগস্টে ড. ইউনূসকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শুভকামনা জানান। এছাড়াও, ঈদ উল আজহাসহ নানাসময়ে নরেন্দ্র মোদী ও ড. ইউনূসের মধ্যে শুভেচ্ছা বিনিময় হতে দেখা যায়৷ সর্বশেষ উত্তরায় বিমান বিধ্বস্তের মর্মান্তিক ঘটনায়ও নরেন্দ্র মোদী গত ২১ জুলাইয়ে একটি এক্স পোস্টে সমবেদনা জানান এবং বাংলাদেশের পাশে ভারতের থাকার বিষয়ে আশ্বস্ত করেন।
উল্লেখ্য যে, ইতোপূর্বে পেরুর রাষ্ট্রপতি কর্তৃক শেখ হাসিনাকে বৈধ প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করা হয়েছে শীর্ষক একটি ভুয়া দাবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হলে এ বিষয়ে ইতোমধ্যে একটি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।
সুতরাং, নরেন্দ্র মোদী শেখ হাসিনাকে বৈধ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ঘোষণা করেছেন শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Al Bayan – حمدان بن محمد: المرحلة المقبلة ستشهد مزيداً من ازدهار الشراكة بين الإمارات والهند
- Consulate General of United Arab Emirates in Mumbai – Instagram Post
- Times of India – PM Modi, Dubai Crown Prince focus on boosting strategic ties
- The Indian Express – Dubai’s Crown Prince in India: Both sides agree to boost ties, trade
- Government of Dubai Media Office – Hamdan bin Mohammed meets with Indian Prime Minister to discuss future of bilateral partnership
- Narendra Modi – X Post
- Narendra Modi – X Post
- Times of India – ‘Reminds us of compassion, brotherhood’: PM Modi sends Eid-al-Adha greetings to Bangladesh; Muhammad Yunus responds