পাকিস্তান থেকে আমদানিকৃত পেঁয়াজের বস্তায় পাথর পাওয়ার দাবিতে পুরোনো সংবাদের ছবি প্রচার

সম্প্রতি ভারতের পাশাপাশি পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে পাকিস্তানসহ আরও চারটি দেশ থেকে। গত জুলাই ও আগস্ট মাসে এ চারটি দেশ থেকে সমুদ্র পথে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে পাঁচ হাজার ১৭৯ টন। চীন, পাকিস্তান, মিশর ও থাইল্যান্ড থেকে এসব পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বাংলাদেশের মূলধারার গণমাধ্যম সময় টিভির একটি ভিডিও সংবাদ প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট প্রচার করে সাম্প্রতিক সময়ের সংবাদ মর্মে দাবি করা হচ্ছে, “চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে পাকিস্তান থেকে আমদানি করা পেয়াজের প্রতি বস্থায় এক দেড় কেজি পাথর!”

পেঁয়াজের বস্তায় পাথর

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়া অবধি উক্ত দাবিতে সবচেয়ে ভাইরাল পোস্টটিতে ২৮ হাজারেরও অধিক পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে, ২ হাজারেরও অধিক মন্তব্য করা হয়েছে এবং প্রায় সহস্রাধিক বার শেয়ার করা হয়েছে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের বস্তায় পাথর পাওয়ার সময় টিভির মূল সংবাদ প্রতিবেদনটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়, বরং প্রায় ৪ বছর পুরোনো। তাছাড়া, মূল সংবাদ প্রতিবেদনেও পাকিস্তানের কোনো উল্লেখ করা হয়নি, বরং তুরস্কের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে মূলধারার গণমাধ্যম সময় টিভির ইউটিউব চ্যানেলে প্রায় চার বছর পূর্বে ২০২০ সালের ১১ নভেম্বর তারিখে “ডলারে কেনা পেঁয়াজের বদলে আসছে পাথর” শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও সংবাদ প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সংবাদ প্রতিবেদনটির প্রায় ৫ সেকেন্ডের সময় আলোচিত দাবিতে প্রচারিত স্ক্রিনশটটির আদলে হুবহু ফ্রেম পাওয়া যায়। উক্ত ফ্রেমে প্রদর্শিত প্রতিবেদকের নাম, স্থান, সময় টিভির লোগোসহ সবকিছুর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত স্ক্রিনশটটির হুবহু মিল পাওয়া যায় যা প্রমাণ করে সময় টিভির উক্ত প্রতিবেদনটিই মূল প্রতিবেদন।

Comparison : Rumor Scanner

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, “চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজার থেকে নগরীর কাজির দেউরি বাজারের খুচরা ব্যবসায়ীরা আনেন পেঁয়াজ। বস্তা খুলার পর দেখেন প্রতি বস্তায় এক থেকে দুই কেজি পাথর। […] ব্যবসায়ীরা বলছেন রপ্তানি দেশ তুরস্ক থেকেই বস্তা বন্দি হয়ে আসছে পাথর।”

পুরো প্রতিবেদনটিতে পাকিস্তানের কথা উল্লেখ পাওয়া যায়নি৷ বরং, ব্যবসায়ীদের বরাতে তুরস্ক থেকে আসা পেঁয়াজে পাথর পাওয়া গিয়েছে বলে প্রতিবেদনটিতে জানানো হয়েছে। 

এ বিষয়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে অধিকতর অনুসন্ধান করলে বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম নিউজ২৪ এর ইউটিউব চ্যানেলে “তুরস্ক থেকে আমদানি পেঁয়াজের বস্তায় অর্ধেকই পাথর” শিরোনামে ২০২১ সালের ১ মার্চ তারিখে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, “তুরস্ক থেকে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর দিয়ে আসা বিপুল পরিমান আমদানি করা পেয়াঁজের বস্তায় মিলেছে বড় বড় পাথর। দেশের সবচেয়ে বড় ভোগ্যপণ্যের বাজার খাতুনগঞ্জে দেখা যায় ২৫ কেজির এক বস্তা পেয়াঁজে পাওয়া যাচ্ছে ১২ কেজিরও বেশি পাথর। প্রায় ৪০ টন পেয়াজের কপালে জুটেছে একই পরিণতি। এ নিয়ে সমুদ্র বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, এই কারসাজির বিষয়ে খতিয়ে দেখবেন তারা। আমদানি রপ্তানির বিপরীতে দেশে বিপুল পরিমাণ অর্থপাচারের খবর প্রায়ই উঠে আসে শুল্ক গোয়েন্দার প্রতিবেদনে। ভোক্তাদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন ক্যাব বলছে, আমদানির আড়ালে মানি লন্ডারিং হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।”

উক্ত প্রতিবেদনেও পাকিস্তানের কোনো উল্লেখ পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে মূলধারার সংবাদমাধ্যম যুগান্তরে “পেঁয়াজের বস্তায় পাথরখন্ড” শিরোনামে ২০১৮ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি তারিখে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন থেকেও পেঁয়াজের বস্তায় পাথর পাওয়ার উল্লেখ পাওয়া যায়। তবে, প্রতিবেদনটিতে কোনো দেশের নাম উল্লেখ করা হয়নি।

তাছাড়া, বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম বাংলা নিউজ২৪ এ ২০১৮ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি তারিখে “পেঁয়াজের বস্তায় পাথর, খুচরা বিক্রেতার মাথায় হাত”, শিরোনামে এ বিষয়ে প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়৷ প্রতিবেদনটি পড়ে জানা যায়, “খাতুনগঞ্জের আড়ত থেকে পেঁয়াজ কিনে মাথায় হাত দিচ্ছেন খুচরা বিক্রেতারা। ‘তুর্কি পেঁয়াজ’ হিসেবে পরিচিত সোনালি রঙের পেঁয়াজের বস্তায় তারা পাচ্ছেন পাথর। ১০০ কেজি পেঁয়াজের মধ্যে এক মণের মতো পাথর পেয়েছেন চকবাজারের রুহুল আমিন (২৭)।”

সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তান থেকে আমদানিকৃত পেঁয়াজের বস্তায় পাথর পাওয়া গিয়েছে কি না তা জানতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।

অর্থাৎ, দেখা যাচ্ছে পেঁয়াজের বস্তায় পাথর পাওয়ার সংবাদগুলো কয়েক বছর পুরোনো এবং মূলত সব সংবাদ প্রতিবেদনেই তুরস্কের থেকে আমদানিকৃত পেঁয়াজের বস্তায় পাথর পাওয়ার উল্লেখ পাওয়া যায়। পাকিস্তানের নাম উল্লেখ পাওয়া যায়নি।

সুতরাং, প্রায় ৪ বছর পূর্বে তুরস্ক থেকে আমদানিকৃত পেঁয়াজের বস্তায় পাথর পাওয়ার সংবাদকে সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে পাকিস্তান থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের প্রতি বস্তায় এক থেকে দেড় কেজি পাথর পাওয়া গেছে মর্মে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img