সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাবি প্রচার করা হয়েছে, “ইউনুস গং সন্ত্রাসী মামুলুল হক বাহিনীর অবদান সৌদি আরবে ১৭ হাজার বাংলালদেশি প্রবাসী গ্রেপ্তার।…” এছাড়াও, আটক ১৭ হাজার প্রবাসীর সবাইকে সরাসরি বাংলাদেশি না বলেও উক্ত ঘটনার সাথে “বাহ ইউনূস চমৎকার” “প্রবাসীরা ২৪ স্বাধীনতা ভোগ করছে শীর্ষক” ইত্যাদি শব্দগুচ্ছ যুক্ত করে প্রচার করা হয়েছে যা আটককৃতদের বাংলাদেশি বলে দৃশ্যায়িত করে।

এরূপ দাবিতে প্রচারিত ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সম্প্রতি সৌদি আরবে আটক হওয়া প্রায় ১৭ হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিক ছিলেন শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে আটক হওয়া প্রবাসীদের নাগরিকত্ব সৌদি আরব বা আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টে উল্লিখিত তথ্যসূত্রতেও উল্লেখ করা হয়নি। অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে সৌদিতে প্রবেশের চেষ্টা করার সময় গ্রেপ্তার হওয়া ১ হাজার ১০৯ জনের নাগরিকত্ব উল্লেখ করা হয়েছে যার মধ্যে প্রায় ৯৭ শতাংশই ইথিওপিয়ান ও ইয়েমেনি বলে জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত নানা পোস্টে দাবিটির সপক্ষে তথ্যপ্রমাণ হিসেবে মূলধারার গণমাধ্যম চ্যানেল২৪ এর ওয়েবসাইটে “সৌদি আরবে ১৭ হাজার প্রবাসী গ্রেপ্তার” শীর্ষক শিরোনামে গত ০৪ মে তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনকে উল্লেখ করতে দেখা যায়। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “সৌদি আরবে গত এক সপ্তাহে ১৭ হাজার ১৫৩ জন অবৈধ প্রবাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একাধিক ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। যার মধ্যে রয়েছে- আবাসিক আইন লঙ্ঘন, সীমান্ত নিরাপত্তা ও শ্রম আইন লঙ্ঘন। শনিবার (৩ মে) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে সৌদি প্রেস এজেন্সি। খবর আরব নিউজ…” তবে উক্ত প্রতিবেদনে গ্রেফতারকৃতরা বাংলাদেশি এরূপ কোনো দাবি করা হয়নি। উক্ত প্রতিবেদনটিতে তথ্যসূত্র হিসেবে সৌদি আরব ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আরব নিউজ’কে উল্লেখ করা হয়েছে।
পরবর্তীতে এরই সূত্র ধরে অনুসন্ধান করলে আরব নিউজের ওয়েবসাইটে “Kingdom arrests 17,153 illegals in one week” শীর্ষক শিরোনামে এ বিষয়ে গত ৩ মে তারিখে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হতে দেখা যায়। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “সৌদি প্রেস এজেন্সির (SPA) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সৌদি কর্তৃপক্ষ গত এক সপ্তাহে ১৭,১৫৩ জনকে গ্রেফতার করেছে, যারা বাসস্থান, কর্মসংস্থান ও সীমান্ত নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিধিনিষেধ ভেঙেছিল। এর মধ্যে ১০,৩০৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে আবাসিক আইনের লঙ্ঘনের জন্য, ৩,৬৪৪ জনকে অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রমের চেষ্টার অভিযোগে এবং আরও ৩,২০৪ জনকে শ্রমসংক্রান্ত বিধি লঙ্ঘনের কারণে আটক করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যারা অবৈধভাবে সৌদি আরবে প্রবেশের চেষ্টা করছিল, তাদের মধ্যে ১,১০৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৬২ শতাংশ ইথিওপিয়ান, ৩৫ শতাংশ ইয়েমেনি এবং বাকি ৩ শতাংশ অন্যান্য দেশের নাগরিক। এছাড়া প্রতিবেশী দেশে প্রবেশের চেষ্টার সময় আরও ৭৬ জনকে আটক করা হয়েছে এবং ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে অনুপ্রবেশকারীদের পরিবহন ও আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে।
সৌদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কেউ যদি অবৈধ অনুপ্রবেশে সহায়তা করে, যেমন পরিবহন বা আশ্রয় দেয়, তবে তার সর্বোচ্চ ১৫ বছর কারাদণ্ড, ১০ লাখ সৌদি রিয়াল (প্রায় ২.৬ লাখ মার্কিন ডলার) জরিমানা এবং জড়িত যানবাহন ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের শাস্তি হতে পারে।” (অনূদিত) তবে উক্ত প্রতিবেদনেও গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে বাংলাদেশের কোনো উল্লেখ পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে সৌদি আরবের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভেরিফাইড এক্স অ্যাকাউন্ট পর্যবেক্ষণ করলে গত ৩ মে তারিখে এ বিষয়ে প্রকাশিত একটি পোস্ট পাওয়া যায়। পোস্টে উল্লিখিত তথ্যগুলো জানা যায়। তবে, উপরোল্লিখিত কোনো প্রতিবেদন বা সৌদি সরকারের পোস্টেও গ্রেফতারকৃত সবার দেশের নাম আলাদাভাবে উল্লেখ করা হয়নি। কেবলমাত্র অবৈধভাবে সৌদি আরবে প্রবেশের চেষ্টায় গ্রেফতারকৃত ১,১০৯ জনের জাতীয়তা উল্লেখ করা হয়েছে যাদের মধ্যে প্রায় ৯৭ শতাংশই ইথিওপিয়ান ও ইয়েমেনি। এমনকি আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলোতে তথ্যসূত্র হিসেবে উল্লিখিত প্রতিবেদনেও গ্রেফতারকৃত প্রায় ১৭ হাজার প্রবাসীরা বাংলাদেশের নাগরিক মর্মে কোনো উল্লেখ করা হয়নি। অর্থাৎ, গ্রেফতারকৃত ১৭ হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি এরূপ দাবির সপক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, সম্প্রতি অবৈধভাবে সৌদি আরবে প্রবেশের চেষ্টায় গ্রেফতার হওয়া ৯৭ শতাংশ ইথিওপিয়ান ও ইয়েমেনি নাগরিকসহ মোট প্রায় ১৭ হাজার প্রবাসীদের সৌদি আরবে গ্রেফতার করার ঘটনাকে গ্রেফতারকৃত সবাই বাংলাদেশি নাগরিক দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- Channel24 – সৌদি আরবে ১৭ হাজার প্রবাসী গ্রেপ্তার
- Arab News – Kingdom arrests 17,153 illegals in one week
- Ministry of Interior Saudi Arabia – X Post