সম্প্রতি “কাতার বিশ্বকাপে গোল্ডেন বুট গরিবদের সাহায্য করে দিলেন এমবাপ্পে” শীর্ষক একটি দাবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত হচ্ছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এরকম কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, কাতার বিশ্বকাপে গোল্ডেন বুট এমবাপ্পে কর্তৃক দান করে দেওয়ার দাবিটি সঠিক নয় বরং কোনো তথ্যসূত্র ছাড়াই ভিত্তিহীনভাবে দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে।
কি-ওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক কোনো গণমাধ্যমে কাতার বিশ্বকাপে গোল্ডেন বুট এমবাপ্পে কর্তৃক দান করে দেওয়ার বিষয়ে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তাছাড়া, কিলিয়ান এমবাপ্পের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট, টুইটার, ইন্সটাগ্রাম, ইউটিউব এবং ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এ বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায় নি।
অর্থাৎ, কোনোরকম তথ্যসূত্র ছাড়াই কাতার বিশ্বকাপে গোল্ডেন বুট এমবাপ্পে কর্তৃক দান করে দেওয়ার দাবিটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
গত ১৮ ডিসেম্বর কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে এমবাপ্পের তিন গোলের বদৌলতে শেষ পর্যন্ত লড়াইয়ে ছিল ফ্রান্স। পরবর্তীতে টাইব্রেকারে হেরে রানার্সআপ হতে হয় তার দলকে। নিজের দল শিরোপা বঞ্চিত হলেও গোল্ডেন বুট পুরস্কার জিতে নেন এমবাপ্পে।

গুজবের সূত্রপাত কীভাবে?
এমবাপ্পের গোল্ডেন বুট দান সম্পর্কিত ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলোতে একটি ছবি সংযুক্ত রয়েছে। সেখানে দেখা যায়, এক শিশুকে গোল্ডেন বুট দিচ্ছেন এক ব্যক্তি। তবে ঐ ব্যক্তির মুখ দেখা যাচ্ছে না ছবিতে। ছবিতে লেখা রয়েছে, “এমবাপ্পে গোল্ডেন বুট গ্রহণ করছেন।” ছবিটিতে ‘Kailash Raj’ নামক ফেসবুকের একটি অ্যাকাউন্টের নাম উল্লেখ পাওয়া যায়।
উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে গত ১৯ ডিসেম্বর ফেসবুকে নামক ‘Kailash Raj’ একটি অ্যাকাউন্ট থেকে প্রকাশিত মূল ছবিটি (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।
ফাইনালে নিজ দল হারার পর গোল্ডেন বুট পুরস্কার গ্রহণের সময় অনেকটা বিষন্নভাব ফুটে ছিল এমবাপ্পের চেহারায়। উক্ত সময়ের অবস্থার এই ছবির মাধ্যমে জনাব কৈলাশ বুঝাতে চেয়েছেন বলে প্রতীয়মান হয়।
কিন্তু ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলোতে এই ছবি ব্যবহার করে এমবাপ্পে কর্তৃক গরীবদের তার গোল্ডেন বুট দান করে দেওয়ার সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি দাবি করা হচ্ছে।

এই ছবির মূল সূত্রের অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতির মাধ্যমে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির ২০২১ সালের ৩০ অক্টোবর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এমবেডকৃত একটি টুইটে মূল ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। “কেনিয়ার পুলিশ কারফিউ তুলে নেওয়ার খবর পাচ্ছে” শীর্ষক শিরোনামের টুইটটির ছবিতে দেখা যাচ্ছে, শিশুটির হাতে কোনো গোল্ডেন বুট নেই বরং তাকে মোড়ক সদৃশ বস্তু দেওয়া হচ্ছে। ছবিটি পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, শিশুটির পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তির হাতেও একই বস্তু রয়েছে। অর্থাৎ, কোনো ত্রাণ কার্যক্রমের ছবি এটি।

তবে এই টুইটই মূল সূত্র নয়। শিশুটির রাগান্বিত চেহারার এই ছবি ব্যবহার করে বিভিন্ন সময়েই মিম টেমপ্লেট হিসেবে ব্যবহার হয়েছে ছবিটি।
একই বছরের (২০২১) ১০ মে একই ছবি ব্যবহার করে প্রকাশিত আরেকটি টুইট দেখুন এখানে।
মূলত, গত ১৮ ডিসেম্বর কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালে নিজ দল হেরে গেলেও গোল্ডেন বুট পুরস্কার জিতে নেন ফ্রান্সের কিলিয়ান এমবাপ্পে। উক্ত পুরস্কার গ্রহণের সময় বিষন্নতা ফুটে উঠেছিল তার চোখেমুখে। উক্ত সময়ের অবস্থাকে কৈলাশ রাজ নামে এক ব্যক্তি শিশুদের ত্রাণ দেওয়ার একটি এডিটেড ছবির মাধ্যমে তুলে ধরেছিলেন। এই ছবি ব্যবহার করে এমবাপ্পে কর্তৃক গরীবদের তার গোল্ডেন বুট দান করে দেওয়ার সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। তবে অনুসন্ধানে উক্ত দাবির পক্ষে কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের বিশ্বকাপ থেকে অর্জিত অর্থ ফ্রান্সের চ্যারিটি সংগঠন ‘Premiers de cordée’তে দান করে দিয়েছিলেন এমবাপ্পে।
প্রসঙ্গত, সদ্য সমাপ্ত কাতার ফুটবল বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে একাধিক গুজব ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, এমবাপ্পের নিজের গোল্ডেন বুট গরিবদের সাহায্য করে দেওয়ার দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Kailash Raj: Hatrick barbaad benchoo
- Mbappe: Website
- BBC: How lifting Kenya’s curfew may push revellers to get jabbed