সম্প্রতি, Marzuk Russell নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে নতুন শিক্ষা কারিকুলামের আওতায় মাধ্যমিকের সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের প্রদানকৃত আলোচিত ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ বই প্রসঙ্গে দেওয়া একটি পোস্ট অভিনেতা মারজুক রাসেলের আসল পোস্ট দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
আলোচিত পোস্টটিতে যা আছে
Marzuk Russell নামের পেজটির পোস্টে বলা হয়েছে, “সবকিছু বয়কট করলাম ঠিকাছে কিন্তু সপ্তম শ্রেণীর যে পাঠ্যবইটির জন্য এতো কিছু সেই বইটি কারা শিক্ষার্থীদের কাছে দিল সেইটা নিয়ে কিছু বলেন না কেন? নাকি ভাসুরের নাম মুখে নেওয়া পাপ??”
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সপ্তম শ্রেণীর ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ পাঠ্যবই নিয়ে আলোচিত এই পোস্টটি অভিনেতা মারজুক রাসেলের নয় বরং তার নামে পরিচালিত একটি ফ্যান পেজের মাধ্যমে এই পোস্টটি প্রচার করা হয়েছে।
কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে Marzuk Russell নামের ফেসবুক পেজটিতে আলোচিত পোস্টটি (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত পেজটির বায়ো এবং ডিটেইলস সেকশনে গিয়ে দেখা যায়, এটি একটি ফ্যান পেজ।
পরবর্তীতে এ বিষয়ে অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ১৮ হাজার লাইক এবং ১ লাখ ১২ হাজার ফলোয়ার সমৃদ্ধ Marzuk Russell নামের ভিন্ন একটি পেজের সন্ধান পায় রিউমর স্ক্যানার টিম। উক্ত পেজটিতে গত ১৬ জানুয়ারি ❝কবিতাই আমার রাজনীতির জায়গা।❞… শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি লাইভ ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, উক্ত ফেসবুক পেজটিকে মারজুক রাসেল তার আসল ফেসবুক পেজ উল্লেখ করে ভক্তদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে লক্ষ করছি আমার নাম ও ছবি ব্যবহার করে কতগুলো সো কল্ড ফ্যানপেজ বিভিন্ন ব্যক্তি, সংগঠন এবং সংস্থাকে উদ্দেশ্য করে তাদের নিজস্ব মতামত প্রচার করছে। যাতে মানুষজন বিভ্রান্ত হচ্ছেন। দীর্ঘদিন আমার কোনো পেজ ছিল না। তবে ’ত্যালফ্যাল ছাড়া যে রান্ধে―’, ‘পাশা ভাই’ এমন বিষয়ভিত্তিক ৩-৪টা ইরেগুলার পেজ ছাড়া ফেসবুকে আমার কোনো অ্যাক্টিভিটি ছিল না। কিন্তু সম্প্রতি আমি একটি পেজ খুলেছি যার মাধ্যমে এই লাইভটি করছি। এইটাই আমার অফিসিয়াল পেজ।’ তিনি আরো বলেন, ‘সাইবার অপরাধ নিয়ে যারা কাজ করেন তাদেরকে বিষয়টি আমি মৌখিকভাবে জানিয়ে রেখেছি। আমাকে হেয় করার চেষ্টা করা হচ্ছে, ডিস্টার্ব করার চেষ্টা করা হচ্ছে এটা আমার জন্যে খুব বিরক্তিকর।’
অর্থাৎ, সপ্তম শ্রেণীর পাঠ্যবই প্রসঙ্গে মারজুক রাসেলের পোস্ট দাবিতে ছড়িয়ে পড়া আলোচিত পোস্টটি মারজুক রাসেলের নয়।
মূলত, গত ২২ জানুয়ারি সপ্তম শ্রেণীর ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ পাঠ্যবই প্রসঙ্গে কবি ও অভিনেতা মারজুক রাসেলের নামে পরিচালিত একটি ফেসবুক পেজ থেকে একটি পোস্ট প্রচার করা হয়। পরবর্তীতে সেই পোস্টটিকে মারজুক রাসেলের আসল পোস্ট ভেবে নেটিজেনরা সেটি শেয়ার করেন। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত এই পোস্টটি যে পেজ থেকে প্রচার করা হয়েছে সেটি মারজুক রাসেলের আসল পেজ নয় বরং সেটি তার নামে পরিচালিত একটি ফ্যান পেজ। প্রকৃতপক্ষে, দীর্ঘদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মারজুক রাসেল নিজের নামে পরিচালিত তার কোনো পেজ ছিল না। তিনি ভিন্ন ভিন্ন নামের বিষয়ভিত্তিক কয়েকটি পেজের মাধ্যমে অনিয়মিতভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যুক্ত ছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি তিনি তার নামে একটি ফেসবুক পেজ খুলেছেন। যেখানে আলোচিত পোস্টটির কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও তার নামে পরিচালিত বিভিন্ন পেজের আপত্তিকর পোস্টের মাধ্যমে ভক্তদের বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্যে উক্ত পেজটিতে একটি লাইভ ভিডিওর মাধ্যমে সতর্ক করেছেন মারজুক রাসেল।
প্রসঙ্গত, গত ১৯ জানুয়ারি “বর্তমান কারিকুলামে নতুন পাঠ্যপুস্তক: বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ” শীর্ষক একটি সেমিনারে আসিফ মাহতাব নামের বেসরকারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন খণ্ডকালীন শিক্ষক ট্রান্সজেন্ডার এবং সমকামিতা বিরোধী বক্তব্য দেন। এসময় তিনি নতুন পাঠ্যসূচির আওতায় সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রদান করা ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ বইয়ের ট্রান্সজেন্ডার বিষয়ক আলোচনা রয়েছে দাবি করে প্রকাশ্যে বইটির দুইটি পৃষ্ঠা ছিঁড়ে ফেলেন। যার পর থেকে উক্ত বিষয়টি নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনার শুরু হয়। এ ঘটনার পরপরই ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ উক্ত খণ্ডকালীন শিক্ষককে ক্লাস নেওয়া থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দেয়। যাতে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একাংশের মধ্যে অসন্তুষ দেখা দেয় এবং তাকে চাকরিতে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রতিবাদ জানিয়ে গত ২৩ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকে আন্দোলনে নামে। পরবর্তীতে সারাদেশের ব্র্যাকের সকল পণ্য ও সেবা বয়কটের ডাক উঠে।
সুতরাং, অভিনেতা মারজুক রাসেলের নামে পরিচালিত ফ্যান পেজ থেকে সপ্তম শ্রেণীর আলোচিত পাঠ্যবই ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ প্রসঙ্গে করা একটি পোস্ট মারজুক রাসেলের আসল ফেসবুক পোস্ট দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Marzuk Russell Facebook Page: ❝কবিতাই আমার রাজনীতির জায়গা।❞…
- Rumor Scanner’s Own Analysis
- Bdnews24 – আসিফ মাহতাবকে পুনর্বহালের দাবিতে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ
- Deshrupantor – আড়ং ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় বয়কটের আহ্বান
- BBC Bangla – বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের সমকামিতা ও ট্রান্সজেন্ডার বিষয়ক বক্তব্য নিয়ে বিতর্ক, যা জানা যাচ্ছে