মিশরে হবু স্ত্রীর স্কুলে তরুণের আগুন লাগানোর ঘটনায় গণমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার

সম্প্রতি মিশরে হবু স্ত্রীর স্কুলে এক তরুণের আগুন লাগানোর ঘটনায় বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে আগুন লাগানোর কারণ হিসেবে ‘তরুণটির হবু স্ত্রীর পরীক্ষায় ফেল করার শঙ্কা ছিল’ এমন একটি তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। 

Screenshot Kalerkantho

এই তথ্য সম্বলিত দেশীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো দেখুন – প্রথম আলো (আর্কাইভ), কালের কন্ঠ (আর্কাইভ), ইত্তেফাক (আর্কাইভ), সমকাল (আর্কাইভ), আমাদের সময় (আর্কাইভ), দেশ রুপান্তর (আর্কাইভ), মানবজমিন (আর্কাইভ), বাংলাদেশ প্রতিদিন (আর্কাইভ), মানবকন্ঠ (আর্কাইভ), অধিকার.নিউজ (আর্কাইভ), একুশে টিভি (আর্কাইভ), সময় নিউজ (আর্কাইভ), যমুনা টিভি (আর্কাইভ), চ্যানেল 24 (আর্কাইভ), ঢাকা পোস্ট, (আর্কাইভ), জাগো নিউজ 24 (আর্কাইভ), দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস (আর্কাইভ) ও আমার সংবাদ (আর্কাইভ)। 

একই তথ্য সম্বলিত ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো দেখুন – এই সময় (আর্কাইভ), tv9bangla (আর্কাইভ), সংবাদ প্রতিদিন (আর্কাইভ),WION (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, মিশরের ঐ তরুণ হবু স্ত্রী ফেল করার শঙ্কায় স্কুলে আগুন লাগাননি বরং হবু স্ত্রী ফেল করায় প্রতিশোধ নিতে স্কুলে আগুন লাগিয়েছেন তিনি। 

অনুসন্ধানে মিশরের আরবী ভাষার সাপ্তাহিক সরকারি পত্রিকা Akhbar El Yom এর ওয়েবসাইটে গত ২২ আগস্ট প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, “অভিযুক্ত ঐ তরুণ স্কুল প্রশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য স্কুলে আগুন ধরিয়ে দেয়।” 

Screenshot source : Akhbar El Yom

একই তথ্য দেওয়া হয়েছে মিশরের আরবী ভাষার জাতীয় দৈনিক Al Masry Al Youm এর গত ২৩ আগস্ট প্রকাশিত এক প্রতিবেদনেও। 

Screenshot source : Al Masry Al Youm

দেশীয় গণমাধ্যম কী জানিয়েছে?

মিশরে স্কুলে তরুণের আগুন লাগানোর ঘটনাটি দেশীয় গণমাধ্যমগুলোতে গত ২৭ আগস্ট প্রথম প্রকাশিত হতে দেখা যায়। 

জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো লিখেছে, “গ্রেপ্তারের পর যুবক পুলিশের কাছে বলেন, তাঁর বাগ্‌দত্তা চলতি বছর পরীক্ষায় ফেল করবেন বলে তিনি আশঙ্কা করছিলেন। তাঁর বাগ্‌দত্তা যদি এ বছর পরীক্ষায় ফেল করেন, তাহলে তাঁকে আরও এক শিক্ষাবর্ষে পড়তে হবে। তেমনটা হলে তাঁর বিয়ে স্থগিত হয়ে যেতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা করছিলেন। তাই তিনি তাঁর বাগ্‌দত্তার স্কুলের কন্ট্রোল রুমে আগুন ধরিয়ে দেন।

Screenshot source : Prothom Alo

একই তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে, কালের কন্ঠ, ইত্তেফাক, সমকাল, আমাদের সময়, দেশ রুপান্তর, মানবজমিন, বাংলাদেশ প্রতিদিন, অধিকার.নিউজ, একুশে টিভি, সময় টিভি, যমুনা টিভি, চ্যানেল24, জাগো নিউজ24, ঢাকা পোস্ট এবং দ্য ডেইলী ক্যাম্পাসে। 

মানবকন্ঠ পত্রিকা লিখেছে, “আরো এক বছর যাতে পড়াশোনা না করতে হয় এজন্য সে ভাবে  যদি স্কুলটাই না থাকে তাহলে তো পরীক্ষাও হবে না। এই ভেবেই সে স্কুল জ্বালিয়ে দিয়েছিল।”

Screenshot source : Manonkantha

সূত্র ধরে যেভাবে অনুসন্ধান 

গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সেখানে আবুধাবি ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম The National News এবং ভারতের দুই সংবাদমাধ্যম NDTv এবং WION কে এই খবরের সূত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। 

অনুসন্ধানের এনডিটিভি‘র (NDTv) ওয়েবসাইটে গত ২৭ আগস্ট প্রকাশিত আলোচিত প্রতিবেদনটি খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot source : NDTV

এনডিটিভিও দ্য ন্যাশনাল নিউজের প্রতিবেদনকে সূত্র হিসেবে উল্লেখ করেছে। 

দেশীয় গণমাধ্যমে সূত্র হিসেবে ব্যবহার করা ভারতীয় আরেক সংবাদমাধ্যম WION এর ওয়েবসাইটেও গত ২৮ আগস্ট প্রকাশিত আলোচিত প্রতিবেদনটি খুঁজে পাওয়া যায়। এই প্রতিবেদনেও দ্য ন্যাশনাল নিউজের প্রতিবেদনকে সূত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। 

Screenshot source : WION

এই দুই প্রতিবেদনের তথ্যের সাথে দেশীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যগুলোর মিল পাওয়া যায়। 

এই দুই প্রতিবেদনের সূত্র ধরে আবুধাবি ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম The National News এর ওয়েবসাইটে গত ২৩ আগস্ট প্রকাশিত আলোচিত প্রতিবেদনটি (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়। এই প্রতিবেদনেও উল্লেখ করা হয়, হবু স্ত্রী পরীক্ষায় ফেল করবে এটা জানতে পেরে অভিযুক্ত তরুণ স্কুলের কন্ট্রোল রুম পুড়িয়ে দিয়েছেন। এজন্য সম্ভবত আরো এক বছর তাকে স্কুলে পড়াশোনা করতে হতে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন তিনি। এই প্রতিবেদনে কোনো তথ্যসূত্র উল্লেখ না থাকলেও মিশরের প্রসিকিউটর জেনারেলের বরাত দেওয়া হয়েছে। 

Screenshot source : The National News

এই প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে রিউমর স্ক্যানারের পক্ষ থেকে The National News কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত তারা কোনো উত্তর দেননি। 

অধিকতর অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে এই ঘটনা সংক্রান্ত কোনো সংবাদ প্রকাশের খবর  খুঁজে পাওয়া যায় নি। পরবর্তীতে মিশরের বেশ কয়েকটি মূল ধারার গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত কোনো খবর খুঁজে পায় নি রিউমর স্ক্যানার টিম। 

এই সংবাদের সত্যতা জানতে পরবর্তীতে রিউমর স্ক্যানার টিম ইংরেজি ভাষার মিশরের সবচেয়ে পুরোনো পত্রিকা The Egyptian Gazette এবং ইংরেজি ভাষার আরেক জাতীয় দৈনিক Daily News Egypt কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে। দুই পত্রিকার কর্তৃপক্ষই এই ঘটনা সত্যি বলে জানায়। 

তথ্যের বিভ্রান্তি যেভাবে ধরা পড়লো

The Egyptian Gazette কর্তৃপক্ষ সে দেশের আরবি ভাষার জাতীয় দৈনিক Al Masry Al Youm এ প্রকাশিত এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনের লিংক রিউমর স্ক্যানারকে পাঠিয়েছে। Daily News Egypt কর্তৃপক্ষও একই প্রতিবেদনের লিংক এবং দেশটির সরকারি পত্রিকা Akhbar El Yom এ প্রকাশিত একই ঘটনা নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনের লিংক পাঠিয়েছে। দুই পত্রিকার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মোহাম্মদ দাউদ নামের অভিযুক্ত ঐ তরুণ কাফর আল সালেম আল নাহাল কমার্শিয়াল স্কুল প্রশাসনের বিরুদ্ধে তার হবু স্ত্রীর পরীক্ষায় ফেল করার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য স্কুলে আগুন ধরিয়ে দেয়।

দুইটি প্রতিবেদনেই ‘অভিযুক্তের হবু স্ত্রী স্কুলে ফেল করতে পারে‘ কিংবা ‘স্কুল পুড়িয়ে দিলে আর ঐ তরুণীকে পড়তে হবে না’ এ ধরনের কোনো তথ্য দেওয়া হয় নি। 

মূলত, মিশরে গত সপ্তাহে এক তরুণ নিজের হবু স্ত্রী পরীক্ষায় ফেল করার প্রতিশোধ নিতে মেয়েটির স্কুলে আগুন লাগিয়ে দেয়। রিউমর স্ক্যানারকে সে দেশের গণমাধ্যমগুলো এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। কিন্তু আবুধাবির একটি সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে দেশীয় গণমাধ্যমে বলা হয়, হবু স্ত্রী পরীক্ষায় ফেল করার শঙ্কায় অভিযুক্ত তরুণ স্কুলে আগুন লাগায়, যা বিভ্রান্তিকর। 

প্রসঙ্গত, এই ঘটনায় অভিযুক্ত তরুণকে আটক করেছে সে দেশের পুলিশ এবং এই বিষয়ে এখন তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে সে দেশের গণমাধ্যমগুলো। 

সুতরাং, মিশরে হবু স্ত্রীর স্কুলে এক তরুণের আগুন লাগানোর ঘটনার কারণ হিসেবে দেশীয় গণমাধ্যমে তরুণটির হবু স্ত্রীর পরীক্ষায় ফেল করার শঙ্কাকে উল্লেখ করার তথ্যটি বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

  1. Akhbar El Yom : A young man was arrested for setting fire to his fiancée’s school, in retaliation for her failure
  2. Al Masry Al Youm : The accused was imprisoned for burning a “school” after his  iancée failed

আরও পড়ুন

spot_img