সম্প্রতি ‘মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা শ্রেণিকক্ষ, আমাদের দেশে এমন হলে, একটা শিক্ষার্থীও আর ক্লাস ফাঁকি দিতো না’ শীর্ষক শিরোনামে ছবিযুক্ত একটি পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ছবিটি মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নয় বরং এটি সৌদি আরবের একটি স্কুলের পরীক্ষার হলের ছবি।
রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতির মাধ্যমে, বাহরাইন ভিত্তিক ইংরেজি সংবাদমাধ্যম Gulf Daily News এর ওয়েবসাইটে ২০১৫ সালের ২৮ ডিসেম্বর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে উক্ত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
আরবি দৈনিক Sabq এর বরাত দিয়ে এই প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশটির আল কাসিম অঞ্চলের Al-Helaliya Secondary School এ পরীক্ষার দিন শিক্ষকগণ পরীক্ষার্থীদের আপ্যায়ন করছেন। একই কক্ষের তিনটি কোলাজ করা ভিন্ন ছবির মাঝের ছবিতে একটি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র দেখা যায়, যেখানে উত্তর লেখার জন্য ফাঁকা জায়গা রাখা হয়েছে। পাশেই পানির বোতল এবং নাস্তার প্লেট রাখা।
সৌদি আরবের সংবাদমাধ্যম Al Arabiya এর ওয়েবসাইটে ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনেও একই ধরনের আরেকটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। এই ছবিতেও দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিচ্ছেন। তাদের টেবিলে নাস্তা রাখা রয়েছে এবং একজন শিক্ষক কিছু একটা ঢেলে দিচ্ছেন একজন শিক্ষার্থীকে। প্রতিবেদনে বলা হয়, মিড স্কুল ইয়ার পরীক্ষায় প্রায় ৩০ লক্ষ শিক্ষার্থীর জন্য পরীক্ষার হলে নাস্তার ব্যবস্থা রেখেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।
গুজবের সূত্রপাত
অনুসন্ধানে হারামাইন শরিফাইনের খবর নামক একটি ফেসবুক পেজে গত ৩০ আগস্ট দুপুর ২:২৭ মিনিটে উক্ত ছবিযুক্ত একটি পোস্ট (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়। পোস্টে উল্লেখ করা হয়, “মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা শ্রেণিকক্ষ। আমাদের দেশে এমন হলে, একটা শিক্ষার্থীও আর ক্লাস ফাঁকি দিতো না!! (ক্যাপশন লিখেছেন : মদিনা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া আবদুল কারীম মাদানী)“
এই পোস্টে দেওয়া তথ্যের সূত্র ধরে জনৈক আবদুল কারীম মাদানী’র ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ৩০ আগস্ট দুপুর ১:০৬ মিনিটে আলোচিত পোস্টটি (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়। একই ছবিযুক্ত পোস্টের ক্যাপশনে তিনি লিখেন, “মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা ক্লাসরুম।”
অনুসন্ধান যেভাবে
পোস্টটির সত্যতা সম্পর্কে জানতে আবদুল কারীম আল মাদানির সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার। ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অফ মদিনার সাবেক এই শিক্ষার্থী রিউমর স্ক্যানারের কাছে স্বীকার করেন, ছবিটি মদিনা বিশ্ববিদ্যালয় অর্থাৎ ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অফ মদিনার নয়। তবে এইরকম নাস্তার মাধ্যমে আপ্যায়নের রীতি উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে বলে তিনি জানান। ক্লাসে নিয়মিত এমন আয়োজন থাকে না জানিয়ে তিনি বলেন, “বিভিন্ন দিবস উপলক্ষ্যে এমন আপ্যায়ন করা হয় এখানে। ” তবে দেশটির বিভিন্ন স্কুল ও কলেজে এই ধরনের আপ্যায়ন নিয়মিত হতে দেখেছেন বলে জানান তিনি।
মূলত, সৌদি আরবের স্কুলগুলোয় পরীক্ষার হলে নাস্তার মাধ্যমে আপ্যায়নের ছবিকে মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসরুমের ছবি দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সাল থেকে সৌদি আরবের স্কুলগুলোতে পরীক্ষার সময় শিক্ষার্থীদের ভয় ও টেনশন কাটাতে নাস্তার মাধ্যমে আপ্যায়নের ব্যবস্থা রাখার রীতি প্রচলিত থাকার কথা জানা যায়। পরীক্ষা ছাড়াও সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই বিভিন্ন উৎসবে এমন আপ্যায়নের ব্যবস্থা থাকে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পরীক্ষার সময় এমন রীতি দেখা না গেলেও মিড ডে মিল সহ বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে নিয়মিত এবং উৎসবভিত্তিক আপ্যায়নের ব্যবস্থা দেখা যায়।
সুতরাং, মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ দাবিতে প্রচারিত ছবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Gulf Daily News : Photos of teachers’ treat to students in exam hall goes viral
- Al Arabiya : Pictures.. Scenes you wouldn’t expect in the kingdom’s exam halls
- Statement from Abdul Karim Al Madani