আয়ারল্যান্ডের মোহের ক্লিফস পৃথিবীর শেষ প্রান্ত নয়

সম্প্রতি ‘বলতে শুনা যাচ্ছে এটাই নাকি পৃথিবীর শেষের প্রান্ত।‘ শীর্ষক শিরোনামে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, উক্ত ছবির স্থানটি পৃথিবীর শেষ প্রান্ত নয় বরং এটি আয়ারল্যান্ডের ওয়েস্ট কাউন্টি ক্লেয়ার উপকূলে অবস্থিত মোহের ক্লিফস নামের একটি পর্যটন স্থান।

রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারের Earth নামের একটি ভ্যারিফাইড একাউন্টে ‘The Cliffs of Moher, Ireland‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি টুইট খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot from Earth Twitter 

এই টুইটটির শিরোনামের সূত্র ধরে Cliffs of Moher নামের একটি ওয়েবসাইটে স্থানটি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot from CLIFFS OF MOHER

ওয়েবসাইটটি থেকে জানা যায়, মোহের ক্লিফস আয়ারল্যান্ডের একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র । সমুদ্র থেকে এর উচ্চতা প্রায় ৭০০ ফুট। এই ক্লিফসটির একপাশে আয়ারল্যান্ডেরই আরেকটি পর্যটন কেন্দ্র বারেন ও অন্যপাশে আটলান্টিক মহাসাগর অবস্থিত। এই স্থানটি প্রায় ৩২০ মিলিয়ন বছর আগে তৈরি হয় এবং বর্তমানে এটি ইউনেস্কোর গ্লোবাল জিওপার্কের অংশ। 

তবে ওয়েবসাইটটির এই প্রতিবেদনের কোথাও এটিকে পৃথিবীর শেষ প্রান্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়নি। 

উল্লেখ্য, গ্লোবাল জিওপার্ক হচ্ছে  ভূতত্ত্ব, ইতিহাস, সংস্কৃতি, সৌন্দর্য মিলিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত স্থান। জাতিসংঘের অঙ্গসংস্থা ইউনেস্কো এগুলোর স্বীকৃতি দিয়ে থাকে। বর্তমানে ৩৫ টি দেশে ১২৭ টি এমন পার্ক রয়েছে।

Screenshot from CLIFFS OF MOHER

পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইউটিউবে Denniscallan নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৯ সালের পহেলা নভেম্বর “Ireland’s Cliffs of Moher, Complete visit” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত মোহের ক্লিফসের একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot from Denniscallan

ভিডিওটিতে দেখা যায়, মোহের ক্লিফসের ঠিক বিপরীতেই সমতলভূমি রয়েছে।

Screenshot from Denniscallan

এছাড়াও, গুগল ম্যাপে অনুসন্ধানে দেখা যায়, পৃথিবীর শেষপ্রান্ত বলে দাবি করা হলেও মোহের ক্লিফসের সামনে গ্রীনল্যান্ড, আইসল্যান্ডের মতো সমতলভূমি রয়েছে। 

Screenshot from Google Map

পাশাপাশি মূলধারার কোনো গণমাধ্যম, কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকেও পৃথিবীর শেষ প্রান্ত বলে কোনো কিছুর অস্তিত্ব জানা যায়নি।

পৃথিবীর শেষ প্রান্ত বলতে কি কিছু আছে?

Scientific American এর ওয়েবসাইটে বিজ্ঞান, প্রকৃতি ও জীববিজ্ঞান বিষয়ক লেখক Q Choi এর ২০০৭ সালের ১২ এপ্রিল “Strange but True: Earth Is Not Round” শীর্ষক শিরোনামের একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। 

Screenshot from Scientific American 

উক্ত প্রতিবেদনটি থেকে পৃথিবীর আকৃতি সম্পর্কে জানা যায়, “Planet Earth is not, in fact, perfectly round.” অর্থাৎ পৃথিবী একদম গোলাকার নয়। উত্তর-দক্ষিণে কিছু চাপা। গোলাকার কোনো বস্তুর কোনো কোন বা শেষ প্রান্ত বলে কিছু নেই।

পাশাপাশি NASA’র ওয়েবসাইটে “Earth from Space” শীর্ষক প্রতিবেদনে স্যাটেলাইটে মহাকাশ থেকে পৃথিবীর ছবি পাওয়া যায়।

Screenshot from Nasa

ছবিটি থেকে স্পষ্টতই বুঝা যায় যে, পৃথিবীর কোনো প্রান্ত নেই।

মূলত, মোহের ক্লিফস আয়ারল্যান্ডের একটি জনপ্রিয় পর্যটন স্থান৷ সমুদ্র থেকে এর উচ্চতা প্রায় ৭০০ ফুট। এই ক্লিফসটির একপাশে আয়ারল্যান্ডেরই আরেকটি পর্যটন স্থান বারেন ও অন্যপাশে আটলান্টিক মহাসাগর অবস্থিত। এই স্থানটি প্রায় ৩২০ মিলিয়ন বছর আগে তৈরি হয়। সম্প্রতি বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এই স্থানটিকে পৃথিবীর শেষ প্রান্ত হিসেবে দাবি করে প্রচার করা হচ্ছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক কোনো মূলধারার গণমাধ্যম এবং কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র হতে এটিকে পৃথিবীর শেষ প্রান্ত হিসেবে উল্লেখ করে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া NASA’র স্যাটেলাইট হতে প্রাপ্ত পৃথিবীর ছবি বিশ্লেষণ করেও বুঝা যায়, পৃথিবীর শেষ প্রান্ত বলতে কিছু নেই।

উল্লেখ্য, ইতোপূর্বে প্রাইকেস্টোলেন পাহাড় নামক নরওয়ের একটি জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থানকেও একইভাবে পৃথিবীর শেষ প্রান্ত দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হলে রিউমর স্ক্যানার টিম সেটিকে মিথ্যা হিসেবে উল্লেখ করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। 

সুতরাং, আয়ারল্যান্ডের মোহের ক্লিফস নামের একটি পর্যটন কেন্দ্রকে পৃথিবীর শেষ প্রান্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img