গত ৭ জানুয়ারি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেস ভয়াবহ দাবানলে পুড়ে যাচ্ছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে, সামাজিক মাধ্যমে একটি বাড়ির ছবি প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে যে, আশপাশের সবকিছু পুড়ে গেলেও ওই বাড়িটি অক্ষত রয়েছে। দাবি অনুযায়ী, বাড়িটি একজন মুসলিমের মালিকানাধীন ছিল এবং সেখানে পবিত্র কোরআন রাখা ছিল, যার ফলেই দাবানলের আগুন বাড়িটির কোনও ক্ষতি করতে পারেনি।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
উক্ত দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)
উক্ত দাবিতে টিকটকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ছবিটি সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেসে চলমান দাবানলে অক্ষত থাকা কোনো বাড়ির নয়। এটি ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই অঙ্গরাজ্যের মাউই দ্বীপের লাহাইনা শহরে ঘটে যাওয়া দাবানলে অক্ষত থাকা একটি ঐতিহাসিক বাড়ির ছবি। এছাড়া, বাড়ির মালিক মুসলিম ধর্মাবলম্বী এবং বাড়িতে পবিত্র কোরআন থাকার দাবিগুলোও ভিত্তিহীন।
বিষয়টির সত্যতা যাচাইয়ে আলোচিত ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে, মার্কিন গণমাধ্যম সিবিএস নিউজের ওয়েবসাইটে ‘See the nearly 100-year-old “miracle house” that survived the Lahaina wildfire and now sits on a block of ash’ শিরোনামে ২০২৩ সালের ২৩ আগস্ট প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ভিডিও ও ছবির সাথে আলোচিত ছবির হুবহু মিল লক্ষ্য করা যায়।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ছবিটি ২০২৩ সালের ১০ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই অঙ্গরাজ্যের মাউই দ্বীপের লাহাইনা দাবানলের পর তোলা হয়। দাবানলে আশপাশের প্রায় সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেলেও লাল ছাদ ও সবুজ বারান্দাবিশিষ্ট ঐতিহাসিক বাড়িটি অক্ষত অবস্থায় ছিল।
মাউই কাউন্টির নথি অনুযায়ী, ফ্রন্ট স্ট্রিটের ২৭১ নম্বরে অবস্থিত বাড়িটি ১৯২৫ সালে নির্মিত হয়। এটি প্রায় ১১,০০০ বর্গফুট জমির ওপর অবস্থিত এবং একসময় পাইওনিয়ার মিল কোম্পানি ও লাহাইনা আইস কোম্পানির বুককিপারদের আবাস হিসেবে ব্যবহৃত হতো। ঐতিহাসিক গুরুত্বের কারণে বাড়িটিকে সংরক্ষিত স্থাপনা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য মনোনীত করা হয়েছিল।
২০২১ সালে ট্রিপ ও ডোরা মিলিকিন দম্পতি বাড়িটি ক্রয় করে পরবর্তীতে সংস্কার করেন। দাবানলের সময় বাড়ির মালিক ট্রিপ মিলিকিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসে অবস্থান করছিলেন।
হনলুলু সিভিল বিটের প্রতিবেদনে একই তথ্য উঠে এসেছে। এছাড়া, দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট, বিবিসি ও লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস-সহ একাধিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও একই ধরনের তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।
অর্থাৎ, ছবিটি ২০২৫ সালের লস অ্যাঞ্জেলেস দাবানলের নয়, বরং ২০২৩ সালের লাহাইনা দাবানলের।
এছাড়া, গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোতে বাড়ির মালিকের ধর্মীয় পরিচয় উল্লেখ করা হয়নি, এবং বাড়ির ভেতরে পবিত্র কোরআন থাকার কোনো তথ্যও বিশ্বস্ত কোনো সূত্রে পাওয়া যায়নি। বরং, প্রতিবেদনগুলোতে বাড়ির বর্তমান মালিক হিসেবে ট্রিপ মিলিকিন ও ডোরা মিলিকিনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, যা দেখে মুসলিম পরিচয় প্রতীয়মান হয় না।
সুতরাং, লস অ্যাঞ্জেলেসে ভয়াবহ দাবানলে মুসলিম মালিকানাধীন ও বাড়িতে পবিত্র কোরআন সংরক্ষিত থাকার কারণে একটি বাড়ি অক্ষত থাকার দাবিতে প্রচারিত বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- CBS News: See the nearly 100-year-old “miracle house” that survived the Lahaina wildfire and now sits on a block of ash
- Honolulu Civil Beat: What Saved The ‘Miracle House’ In Lahaina?
- BBC: Hawaii wildfires: The red Lahaina house that survived Maui fires
- Los Angeles Times: The real story behind that photo of a weirdly unscathed house in the rubble of Lahaina
- The Independent: ‘Miracle’ on Front Street: The house spared from wildfire – and its lessons for Maui’s recovery
হালনাগাদ/ Update
২০ জানুয়ারী, ২০২৫ : এই প্রতিবেদন প্রকাশ পরবর্তী সময়ে ইউটিব ও টিকটকে একই দাবিতে ভিডিও আমাদের নজরে আসার প্রেক্ষিতে উক্ত ভিডিওকে প্রতিবেদনে দাবি হিসেবে যুক্ত করা হলো।