২৫ নভেম্বর জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে দায়েরকৃত রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। ২৬ নভেম্বর তাকে চট্টগ্রাম ষষ্ঠ মেট্রোপলিটন আদালতে হাজির করা হলে জামিন নামঞ্জুর করেন আদালত। এর প্রেক্ষিতে আদালত প্রাঙ্গণে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। শুরু হয় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। সংঘর্ষে সাইফুল ইসলাম নামের এক আইনজীবীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এরই প্রেক্ষিতে, সিলেটের ইসকন মন্দিরে দুইজন ভিক্ষুবেশে থাকা ব্যক্তিসহ অস্ত্রের ছবি দাবিতে ইন্টারনেটে একটি ছবি প্রচার করা হয়েছে।
উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
এছাড়া ছবি ব্যতিত সিলেটের ইসকন মন্দিরে অস্ত্র পাওয়া গেছে দাবিতে প্রচারিত কিছু ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
একই দাবিতে বেসরকারি ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যম চ্যানেল আই এর লোগোসহ একই দাবির ফটোকার্ড প্রচার করা হয়েছে। এই দাবিতে ফেসবুকে পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, দুইজন ভিক্ষুবেশে থাকা ব্যক্তিসহ অস্ত্রের দৃশ্য দাবিতে প্রচারিত ছবিটি সিলেটের ইসকন মন্দিরের কিংবা বাংলাদেশের নয় এবং চ্যানেল আইও উক্ত দাবিতে কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি বরং ছবিটি ২০১৪ সালে থাইল্যান্ডে একটি ধর্মীয় উপাসনালয়ে অভিযানে নানা মাদকদ্রব্য উদ্ধারের ঘটনার।
অনুসন্ধানে Democracy of Burma নামক ওয়েবসাইটে ২০১৪ সালের ২৫ আগস্ট প্রকাশিত একটি নিবন্ধে একই ছবি পাওয়া যায়।
থাইল্যান্ড ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম Sanook এর ওয়েবসাইয়ে ২০১৪ সালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৪ সালে থাইল্যান্ডের চনবুড়ি প্রদেশের শি রাচা জেলার একটি ধর্মীয় উপাসনালয়ে অভিযানে নানা মাদকদ্রব্যসহ, উক্ত অস্ত্রশস্ত্র পাওয়া যায়।
উক্ত ছবির সাথে বাংলাদেশের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। থাইল্যান্ডের পুরোনো ঘটনার ছবিকেই সিলেটের ইসকন মন্দিরের ছবি দাবিতে ছড়ানো হচ্ছে।
এছাড়া, গত ১৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে মোটরসাইকেল চুরিকে কেন্দ্র করে গণপিটুনিতে মো. মামুন নামের এক বাঙালি যুবককে হত্যা করার জের ধরে পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে সংঘর্ষ এবং হামলার ঘটনায় অস্ত্রশস্ত্রসহ ভিক্ষু বেশের দুইজনের একই ছবি প্রচার করে পাহাড়িদের ধর্মীয় উপাসনালয়ে অস্ত্র থাকার ছবি মর্মে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হলে তা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
অনুসন্ধানে ২৯ নভেম্বর সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়।
পোস্টে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ আলোচিত ছবির একটি স্ক্রিনশট প্রকাশ করে জানায়, “এটি সিলেট ইসকনের ছবি নয়। সিলেট ইসকনের কার্যক্রম সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের সার্বক্ষণিক নজরদারিতে আছে। প্রকৃত অর্থে এই ছবিটি অনেক আগেই বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড করা হয়েছে।এ ব্যাপারে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য এবং গুজব না ছড়ানোর জন্য নগরবাসীকে আহ্বান জানানো হচ্ছে।”
একই দাবিতে কথিত চ্যানেল আই এর ফটোকার্ডের বিষয়ে অনুসন্ধানে গণমাধ্যমটির ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে প্রচারিত সংবাদ ও ফটোকার্ডগুলো পর্যালোচনা করে উক্ত শিরোনাম সম্বলিত কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও চ্যানেল আই এর ওয়েবসাইট, ইউটিউব চ্যানেলে উক্ত দাবির সপক্ষে কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এছাড়া, গণমাধ্যম বা স্থানীয় সূত্রে সিলেটে উক্ত দাবি সম্বলিত কোনো ঘটনার বিষয়ে জানা যায়নি।
সুতরাং, থাইল্যান্ডের ধর্মীয় উপাসনালয়ে পাওয়া অস্ত্রের ছবি সিলেটের ইসকন মন্দিরে পাওয়া অস্ত্রের ছবি দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Democracy of Burma – Website
- Sanook – Website
- Sylhet Metropolitan Police – Facebook Post
- Channel i – Website